ভাবসম্প্রসারণ :সুসময়ে বন্ধু বটে অনেকেই হয় অসময়ে হায় হায় কেউ কারাে নয়

মূলভাব : মানুষের কৃত্রিম বন্ধুরা অত্যন্ত সুযোগসন্ধানী হয়। এ শ্রেণির বন্ধুরা সুসময়ে বন্ধুত্বের মুখোশ এঁটে স্বার্থ উদ্ধারে থাকে, সর্বদাই তৎপর। কিন্তু বন্ধুর সংকটকালে এরা বন্ধুকে ত্যাগ করে চলে যায় । 

সম্প্রসারিত ভাব : সাধারণত মানুষের সম্পদের প্রাচুর্যের সময়টাকে সুসময় এবং অভাবের সময়টাকে বলা হয় দুঃসময়। বাহ্যত পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই স্বার্থপর ও সুযোগসন্ধানী। স্বার্থসিদ্ধির আশায় অধিকাংশ মানুষই বন্ধুর মুখোশে চারপাশে ভিড় জমায় এবং সুযোগ বুঝে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে ও তার ক্ষতি করে। তাই জগতে সচ্ছল ও সম্পদশালী মানুষের বন্ধুর অভাব হয় না। স্বার্থ হাসিলের আশায় বন্ধু সেজে অনেকেই তাদের তোষামোদ করে এবং চাটুকারের ভূমিকায় অভিনয় করে। ফুল থেকে মধু আহরণ শেষে মধুমক্ষিকা যেমন উড়ে যায় তেমনি স্বার্থ হাসিলের পর এ ধরনের বন্ধুরাও সম্পর্ক ছিন্ন করে দূরে সরে যায়। এরাই কৃত্রিম বন্ধু। সুসময়ে অনেকেই বন্ধুবেশে এসে চারপাশে ভিড় জমায় কিন্তু বিপদের দিনে বা সংকটকালে ঐ বন্ধুর নাগাল পাওয়া যায় না। এ শ্রেণির বন্ধুরা প্রকৃত বন্ধু নয়। কেননা প্রকৃত বন্ধু কখনোই বিপদকালে কোনো বন্ধুকে ত্যাগ করে না বরং বিপদেই বন্ধুর সাহায্যার্থে তার পাশে দাঁড়ায় ও সাহায্য করে। সত্যিকার বন্ধুর সুসময় ও দুঃসময় বলে কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। সে সুসময় ও দুঃসময় নির্বিশেষে বন্ধুর পাশে থাকে ।

মন্তব্য : সুযোগসন্ধানী বন্ধু সম্পর্কে আমাদের সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। এ শ্রেণির বন্ধুদের যত এড়িয়ে চলা যায় ততই ভালো ।

আরও পড়ুন : সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড় - ভাবসম্প্রসারণ

এই ভাব সম্প্রসারণটি অন্য আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেওয়া হলো

মূলভাব : জগৎ স্বার্থের নিগড়ে বন্দি। সুদিনে বন্ধুর আধিক্য হলেও দুর্দিনে বন্ধুত্ব মেলা ভার।

সম্প্রসারিত ভাব : চলমান জীবনে আমাদের বন্ধুর অভাব হয় না। কিন্তু এসব বন্ধুর মাঝে প্রকৃত বন্ধুর সংখ্যা নিতান্তই কম। নিজের স্বার্থের জন্য বন্ধু সেজে অনেকেই তোষামোদ করে। স্বার্থ হাসিল হলে এবং বন্ধু বিপদে পড়লে স্বার্থপর বন্ধুকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। মৌমাছি ছুটে আসে মধু আহরণের জন্য, কিন্তু যখনই তার মধু আহরণ শেষ হয় তখন তাকে আর ফুলে বসতে দেখা যায় না। তেমনি এ ধরনের বন্ধুকেও সংকটের সময় কাছে পাওয়া যায় না। এ জাতীয় বন্ধুকে বসন্তের কোকিলের সঙ্গে তুলনা করা যায়। কেননা বসন্তের আগমনে কোকিলের সাক্ষাৎ পাওয়া যায় আবার শীতের আগমনে কোকিল অদৃশ্য হয়ে যায়। প্রবাদ-প্রবচনে এদের উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন : কাজের বেলায় কাজি কাজ ফুরালেই পাজি। সুসময়ের বন্ধুরা খল ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে মানুষের সর্বনাশ করে। এদের মধুর ব্যবহারে অনেকে মোহিত হয়। ফলে আসল রূপ সহজে কেউ ধরতে পারে না। অপরদিকে প্রকৃত বন্ধুরা কখনই বিপদ দেখে বন্ধুকে ছেড়ে যায় না। বন্ধুর দুর্দিনে তারা সাহায্যের হাত প্রসারিত করে ছুটে আসে এবং সাধ্যমতো চেষ্টা করে বন্ধুকে বিপদ হতে মুক্ত করতে। প্রকৃত বন্ধুরা বন্ধুর জন্য জীবন পর্যন্ত বিলিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করে না। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে- “A friend in need, is a friend indeed.” অর্থাৎ দুঃসময়ের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু। তাই ধীরেসুস্থে সময় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে তবেই বন্ধুত্ব করা উচিত। প্রকৃত বন্ধু বন্ধুত্বের মর্যাদা দিতে জানে। সুসময়ে তো বটেই দুঃসময়ে বেশি করে বন্ধুর পাশে অবস্থান করে বন্ধুত্বের দাবি অক্ষুণ্ণ রাখে।

মন্তব্য : বিপদের কষ্টিপাথরে যাচাই করে বন্ধু নির্বাচন করা উচিত। নতুবা আমাদেরকে প্রতারিত হতে হবে। কৃত্রিম বন্ধুর দ্বারা কোনো কল্যাণ সাধিত হয় না। এরা সবার শত্রু।

Post a Comment

0 Comments