বচন' হলো বাংলা ব্যাকরণের একটি পারিভাষিক শব্দ । বচন এর অর্থ - সংখ্যার ধারণা। ব্যাকরণে নির্দেশিত নীতিতে বিশেষ্য ও সর্বনামের সংখ্যাগত ধারণা প্রকাশের উপায়কে বচন (Number) বলে ।যেমন- ছেলেটি স্কুলে যায়। ছেলেরা মাঠে বল খেলে। এখানে 'ছেলেটি' শব্দ দ্বারা একজন ছেলেকে আর 'ছেলেরা' শব্দ দ্বারা অনেক ছেলেকে বুঝাচ্ছে। যেহেতো শব্দ দুটি দ্বারা সংখ্যার ধারণা পাওয়ায় যায়। আর সংখ্যার ধারণাই হলো বচন।
সংজ্ঞা : যে শব্দ দ্বারা বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের অর্থাৎ ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীর সংখ্যার ধারণা জন্মে, তাকে বচন (Number) বলে । যেমন :
বইটি , গাভীটি, পাখিগুলো, ছেলেরা ইত্যাদি।
বচনের শ্রেণী বিভাগ :
বাংলা ভাষায় বচন দু'প্রকার। যথা-
১. একবচন ও
২. বহুবচন ।
১. একবচন : যে শব্দ দ্বারা একটি মাত্র ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীকে বুঝায়, তাকে একবচন বলে । যেমন- ছেলেটি, একটি কলম, একজন ছাত্র ইত্যাদি।
২. বহুবচন : যে শব্দ দ্বারা একের অধিক ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীর সংখ্যা বুঝায়, তাকে বহুবচন বলে। যেমন- ছেলেরা, শিশুরা, বইগুলো ইত্যাদি।
আরও দেখুন : নিপাতনে সিদ্ধ সরসন্ধি ও ব্যঞ্জনসন্ধি:সহজে মনে রাখার উপায় ও উদাহরণ
এক বচন থেকে বহুবচন করার নিয়ম :
বাংলা ভাষায় বহুবচন প্রকাশের জন্যে কয়েকটি বিশেষ বিভক্তি এবং কতকগুলো সমষ্টিবাচক শব্দ ব্যবহার হয়। যেমন- রা, এরা, গুলি, গুলো, গণ, সমূহ, রাশি, বর্গ, দল, বৃন্দ, মণ্ডলী, নিচয়, রাজি ইত্যাদি ।
১। রা, এরা সাধারণত প্রাণিবাচক শব্দ ও প্রাণিধর্ম আরোপিত অপ্রাণিবাচক শব্দের কর্তৃকারকে প্রয়োগ হয় । যেমন-
ছাত্র → ছাত্ররা, লোক→ লোকেরা, ছেলে→ ছেলেরা, মেয়ে→ মেয়েরা, বন্ধ → বন্ধুরা ইত্যাদি ।
২। গুলি, গুলা, গুলো,- প্রাণী ও অপ্রাণিবাচক শব্দের বহুবচনে ব্যবহৃত হয় । যেমন-
আম→ আমগুলো, ছেলে→ ছেলেগুলো, কলা→ কলাগুলো, লোক→ লোকগুলো, বই→ বইগুলো ইত্যাদি।
৩। গণ, সমূহ, বর্গ, বৃন্দ-উন্নত প্রাণিবাচক তৎসম শব্দের বহুবচন নির্দেশ করতে এগুলো ব্যবহৃত হয়। যেমন-
শিক্ষক→ শিক্ষকগণ, পণ্ডিত→ পণ্ডিতবর্গ, ছাত্র→ ছাত্রবৃন্দ, মন্ত্রী→ মন্ত্রীবর্গ
দেব→ দেবগণ, শিক্ষক→ শিক্ষকমণ্ডলী ইত্যাদি।
৪। কুল, সকল, সব, রাজি-প্রাণিবাচক শব্দের বহুবচন করতে ব্যবহৃত হয়। যেমন-
কবি→ কবিকুল, নর→ নরকুল, ভাই→ ভাইসৰ, মানুষ→ মানুষ সকল, বৃক্ষ→ বৃক্ষরাজি ইত্যাদি।
৫. দিগ, দিগের, দের, দিগকে এগুলো প্রাণিবাচক শব্দের বহুবচন করতে ব্যবহৃত হয়। যেমন-
আমার→ আমাদের, মন্ত্রী→ মন্ত্রীদিগকে, তাহাকে→ তাহাদিগকে, বালক→ বালকদের তোমার→ তোমাদের ইত্যাদি।
৬। মালা, রাশি, আবলি, নিচয় গুচ্ছ, দাম - অপ্রাণিবাচক শব্দের বহুবচন করতে ব্যবহৃত হয়। যেমন-
মেঘ→ মেঘমালা, গ্রন্থ→ গ্রন্থাবলি, পর্বত→ পর্বতমালা, কসুম→ কুসুমনিচয়, ধূলা→ ধূলারাশি, কবিতা→ কবিতাগুচ্ছ , শৈবাল→ শৈবালদাম ইত্যাদি।
৭। জন, মহল-প্রাণিবাচক শব্দের বহুবচন করতে ব্যবহৃত হয়। যেমন-
জ্ঞানী→ জ্ঞানীজন, শিক্ষক→ শিক্ষকমণ্ডলী, দর্শক→ দর্শকমণ্ডলী, সুধী→ সুধীমহল ইত্যাদি।
৮। সময় সময় বিশেষ্যের পূর্বে অনেক, সকল, বিস্তর, বহু, কত প্রভৃতি বিশেষণ যোগ করে বহুবচন করা হয় । যেমন-
অনেক মাছ, সকল লোক, বিস্তর টাকা, বহুলোক, বহুপ্রাণী, কত দেশ ইত্যাদি।
৯। সংখ্যাবাচক শব্দ বিশেষের পূর্বে বা পরে বসিয়ে বহুবচন করা যায় । যেমন-
পাঁচ ওয়াক্ত নামায, দুই সের চাল, তিন গজ কাপড়, দশ হাজার টাকা ইত্যাদি।
১০। অনেক সময় বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, অব্যয় ও ক্রিয়াপদকে দু'বার পরস্পর ব্যবহার করেও বহুবচন করা যায় । যেমন-
দেশে দেশে, ঘরে ঘরে, কাঁচা কাঁচা, যেতে যেতে, দেখতে দেখতে, ছোট ছোট, বড় বড়, বিন্দু বিন্দু, সে সে, যথায় তথায়, বাড়ি বাড়ি, গাছে গাছে ইত্যাদি।