বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের ১০টি নিয়ম। hsc – pdf

প্রশ্ন ॥ বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রমিত বাংলা বানানের ১০টি নিয়ম লেখ ।
অথবা, আধুনিক বাংলা বানানের দশটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখ।
অথবা, প্রমিত বাংলা বানানের যে-কোনো দশটি নিয়ম উদাহরণসহ উল্লেখ কর।

আধুনিক বাংলা বানানরীতি : বাংলা বানানের জটিলতা দূর করার জন্য কিছু নিয়ম প্রণয়ন করা হয়েছে। আধুনিক বা প্রমিত বাংলা বানানের বিশেষ নিয়মগুলো নিচে আলোচনা করা হলো :

বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের ১০টি নিয়ম :

১। রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্বতা: রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হয় না। এ নিয়ম তৎসম, তদ্ভব, দেশি, বিদেশি সব শব্দের বেলায় প্রযোজ্য হবে। যেমন- অৰ্চনা, মূর্ছা, কার্তিক, কর্ম, কর্জ, ধর্ম, সর্দার, বার্ধক্য, সর্ব, শর্ত, কর্তা, চর্বি, ফর্মা, জার্মানি ইত্যাদি ।

২। সন্ধি হলে ‘ম’ স্থানে অনুস্বার (ং) : সন্ধির সময় পদের অন্তস্থিত ম্-এর পর যদি ক, খ, গ, ঘ থাকে, তাহলে ‘ম’ স্থানে অনুস্বার (ং) লিখতে হবে। যেমন- অহংকার, অলংকার, শুভংকর, শংকর, প্রলয়ংকর ইত্যাদি।

৩। হস্ চিহ্ন : শব্দ উচ্চারণের সময় শব্দান্তে ‘অ’ উচ্চারণ অনেক সময় সঠিক হয় না। তাই অর্থের বিভ্রান্তি দূর করার জন্য কিছু শব্দের শেষে হস্ চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বাংলা ভাষায় এ চিহ্ন ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। যেমন- চেক, জজ, টন, মাল, চট, টক, করলেন, করবেন, হুক, কলকল, পকেট, ওস্তাদ ইত্যাদি ।

৪। ই, ঈ-কার :
ক. যদি মূল সংস্কৃত শব্দে ‘ঈ’ থাকে, তবে তদ্ভব বা তৎসদৃশ শব্দে “ই” হবে। যেমন- পক্ষী > পাখি, কুম্ভীর > কুমির, বাটী > বাড়ি ইত্যাদি ।

খ. স্ত্রীবাচক তৎসম শব্দের শেষে ঈ-কার হবে। যেমন- মালিনী, নেত্রী, প্রেয়সী, মহীয়সী, গুণবতী, ধনবতী, জননী, শ্রীমতী ইত্যাদি। কিন্তু অ-তৎসম শব্দের ক্ষেত্রে কেবল ই- কার হবে। যেমন- বিবি, দিদি, বৌদি, ঝি ইত্যাদি ।

গ. ব্যক্তি বা পুরুষ বোঝাতে তৎসম শব্দের শেষে ঈ-কার হবে। যেমন- জ্ঞানী, মেধাবী, দুঃখী, শিল্পী, ধনী, বিলাসী, বিরোধী, অপরাধী, যাত্রী ইত্যাদি।

ঘ. জাতি ও ভাষার নামের শেষে নিয়ম অনুযায়ী ই-কার হবে। যেমন- জার্মানি, ইহুদি, ইরানি, ইংরেজি, আরবি, ফারসি ইত্যাদি ।

৫। উ, উ-কার :
ক. তৎসম শব্দে ঊ-কার অপরিবর্তিত থাকে। যেমন- বধূ, মূল, চূর্ণ; কিন্তু তদ্ভব ও বিদেশি শব্দে কেবল উ-কার হয়। যেমন- কবুল, চুন, মুলা, নিচু, খুশি, সুতো, বুড়ি ইত্যাদি ।

খ. ক্রিয়াবাচক শব্দে শুধু উ-কার ব্যবহৃত হয়। যেমন- বসুন, ঘুমানো, করুন ইত্যাদি।

৬। জ, য সম্পর্কিত : কিছু শব্দের ‘য’ না লিখে ‘জ’ লেখা বিধেয়। যেমন- কাজ, জাউ, জাতা, জাতি, জুই, জোড়া, জোত, জোয়াল ইত্যাদি ।

৭। ণ ও ন-এর ব্যবহার : সংস্কৃত বা তৎসম শব্দে ণত্ব-বিধান অনুযায়ী ‘ণ’ ব্যবহৃত হবে। যেমন- ঋণ, তৃণ, পাষাণ ইত্যাদি । দেশি, বিদেশি শব্দে এবং ক্রিয়াপদে কখনো ‘ণ’ ব্যবহৃত হবে না। যেমন- কান, সোনা, বামুন, ইরান, ধরেন, কুরআন, মারেন, গভর্নর ইত্যাদি ।

৮। ও-কার ও ঊর্ধ্ব কমা : প্রচলিত শব্দের উচ্চারণ, উৎপত্তি বা অর্থের পার্থক্য বোঝানোর জন্য অতিরিক্ত ও-কার বা ঊর্ধ্ব কমা যথাসম্ভব বর্জন করা বিধেয়। যদি অর্থ গ্রহণে অসুবিধা দেখা দেয়, তবে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন- কাল, কালো; মত, মতো; ভাল, ভালো; পড়, পড়ো; দুটি, একশ ইত্যাদি ।

৯। বিসর্গ : শব্দের শেষে বিসর্গ (ঃ) থাকবে না। যেমন- করত, কার্যত, প্রধানত, মূলত, বস্তুত, ক্রমশ, প্রয়াত, প্রায়শ ইত্যাদি । পদমধ্যস্থ বিসর্গ থাকবে; তবে অভিধানসিদ্ধ হলে পদমধ্যস্থ বিসর্গ বর্জনীয়। যেমন- দুস্থ, নিস্পৃহ ইত্যাদি।

১০। ‘আনো’ প্রত্যয়ান্ত শব্দ : ‘আনো’ প্রত্যয়ান্ত শব্দের শেষে ‘ো’- কার যুক্ত করতে হবে। যেমন- করানো, খাওয়ানো, বলানো, নামানো, পাঠানো, শোয়ানো ইত্যাদি ।

বাংলা বানান পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা :

বাংলা বানান পদ্ধতির উল্লেখযোগ্য পাঁচটি প্রয়োজনীয়তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো :

১। শুদ্ধ বানান সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায় ।
২। যে-কোনো কিছু লেখার ক্ষেত্রে শুদ্ধ শব্দ প্রয়োগ করা যায় ৷
৩। বাহুল্য দোষ বর্জন করে শুদ্ধভাবে বাক্য লেখা যায় ।
৪ । বাংলা শব্দের গঠন সম্পর্কে জানা যায়।
৫। বাংলা শব্দের প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ সম্পর্কে জানা যায় ।

আমার মূল লক্ষ্য একটাই (Sikkhagar-শিক্ষাগার) ওয়েবসাইটের হাত ধরে “শিক্ষা হবে উন্মুক্ত ও বাণিজ্যমুক্ত”। এই প্লাটফর্মে থাকবে একাডেমিক প্রস্তুতি, ভর্তি প্রস্তুতি, চাকরি প্রস্তুতি, স্পেশাল স্কিল এবং ধর্মীয় শিক্ষাসহ নানাবিধ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ।

2 thoughts on “বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের ১০টি নিয়ম। hsc – pdf”

Leave a Comment