ঘর্ষণ (Friction) : দুটি বস্তু পরস্পরের সংস্পর্শে থেকে যদি একের উপর দিয়ে অপরটি চলতে চেষ্টা করে অথবা চলতে থাকে, তাহলে বস্তুদের স্পর্শতলে এই গতির বিরুদ্ধে যে বাঁধার উৎপত্তি হয়, তাকেই ঘর্ষণ বলে।
ঘর্ষণের প্রকারভেদ :
ঘর্ষণ প্রধানত ৪প্রকার। যথা –
- স্থিতি ঘর্ষণ।
- পিছলানো বা বিসর্প ঘর্ষণ।
- আবর্ত ঘর্ষণ।
- প্রবাহী ঘর্ষণ।
ঘর্ষণের সুবিধা ও অসুবিধা :
ঘর্ষণের সুবিধা :
ঘর্ষণের ফলে আমরা যেসব সুবিধা পেয়ে থাকি তা নিচে উল্লেখ করা হলো-
- সহজে গাড়ি থামানো যায় ।
- দড়িতে গিট দেয়া যায় ।
- দেয়ালে মই লাগানো যায় ৷
- দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বালানো যায় ।
- ছুরিতে ধার দিতে পারি ।
- কাঠে পেরেক লাগাতে পারি ।
- ঘর্ষণের জন্য গাড়ির চাকা ঘুরে এবং সামনে বা পিছনের দিকে অগ্রসর হতে পারে ।
- ঘর্ষণের জন্য আমরা হাঁটতে পারি।
ঘর্ষণের অসুবিধা :
ঘর্ষণের ফলে অনেক অসুবিধার ও সৃষ্টি হয়। যেমন-
- গতি হ্রাস পায় ।
- সময়ের অপচয় হয় ।
- শক্তির অপচয় হয় ।
- ঘর্ষণের ফলে যান্ত্রিক দক্ষতা হ্রাস পায় ৷
- ঘর্ষণের ফলে তাপ উৎপন্ন হয় বলে যন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- যন্ত্রগুলো চলার সময় ঘর্ষণ ক্রিয়া করার ফলে গতিশীল অংশগুলোর মধ্যে ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় ।
আরও পড়ুন : ঘর্ষণ একটি প্রয়োজনীয় উপদ্রব ব্যাখ্যা কর
ঘর্ষণ কমানোর উপায় :
নিম্নলিখিত উপায়ে ঘর্ষণ কমানো যায়। যেমন-
- তল যথাসম্ভব মসৃণ করে।
- সংকর ধাতু ব্যবহার করে ঘর্ষণ কমানো যায় ।
- পিচ্ছিলকারী পদার্থ যেমন- তেল, ভ্যাসলীন, গ্রাফাইট ইত্যাদি ব্যবহার করে।
- বল বেয়ারিং বা রোলার বেয়ারিং ব্যবহার করে।
- স্পর্শতলে মোম লাগিয়ে ঘর্ষণ কামানো যায় ।
- বায়ুর পাতলা পর্দা বা স্তর ব্যবহার করে ঘর্ষণ কমানো যায় ।
গাড়ি চালনায় ঘর্ষণ কিভাবে সহায়তা করে?
রাস্তা এবং গাড়ির টায়ারের ঘর্ষণ বল আছে বলেই গাড়ি চলে। ঘর্ষণ না থাকলে গাড়ির টায়ার শুধু এক স্থানে ঘুরতো, অগ্রসর হতো না। তেমনিভাবে গাড়ির টায়ার এবং ব্রেকের মধ্যে ঘর্ষণ ক্রিয়া করে বলেই গাড়িকে নির্দিষ্ট স্থানে থামানো সম্ভব হয়। এ কারণে গাড়ি চলানোর জন্য এবং দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঘর্ষণ খুব গুরুত্বপূর্ণ।
গতির উপর ঘর্ষণের প্রভাব ব্যাখ্যা
গতির উপর ঘর্ষণের প্রভাব নিম্নরূপ :
১। টায়ারের পৃষ্ঠ : টায়ারের পৃষ্ঠে খাঁজ থাকলে ঘর্ষণ বল সর্বোচ্চ হয়। অন্যদিকে টায়ার পুরনো হলে টায়ারের পৃষ্ঠ সমতল হয়ে পড়ে । ফলে রাস্তা ও টায়ারের ঘর্ষণ অনেকটা কমে যাওয়ায় ব্রেক কম কাজ করে।
২। রাস্তার মসৃণতা : রাস্তা বেশি মসৃণ হলে ঘর্ষণ বলের মান অত্যাধিক কমে যায়, ফলে গাড়ি সামনের দিকে অগ্রসর হয় না । তাই রাস্তার মসৃণতা এমন হবে যাতে করে রাস্তা প্রয়োজনীয় ঘর্ষণ বলের জোগান দেয় ৷
৩. গতির নিয়ন্ত্রণ এবং ব্রেকিং বল : যানবাহন চলাচলের সময় প্রয়োজন অনুযায়ী যানবাহনের গতিকে বৃদ্ধি বা হ্রাস করতে হয় । অর্থাৎ গাড়ির গতিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘর্ষণ অতীব প্রয়োজনীয় ।