প্রশ্নঃ কুরবানীর চামড়ার মূল্য কোন একটি দলের কাছে জমা আছে। সেই দলটির দায়িত্বশীলগণ সেই টাকা পয়সা গরীব মিসকীনদের প্রদান করেন। এতিম অসহায় বাচ্চাদের, মাদ্রাসা বা স্কুলের কিতাবাদী খরিদ করে দেন, তেমনিভাবে অসুস্থ রোগীদের সাহায্য করেন। বর্তমানে তাদের পরিকল্পনা হল, কুরবানীর জমাকৃত টাকা-পয়সা দিয়ে তারা স্বতন্ত্র একটি আয়ের উৎস তৈরী করে তার আমদানী গরীব মিসকীনদের মধ্যে খরচ করবেন। এখন প্রশ্ন হল, আমদানীর জন্য চামড়ার মূল্যর দ্বারা ঘর বা দোকান বানানো শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয হবে কি?
উত্তরঃ কুরবানীর চামড়া কোন দল বা সংস্থাকে হাদীয়াস্বরূপ দেয়া হয় না; বরং তার উকিল বানানো হয়। সুতরাং তার মূল্য শুধুমাত্র তার হকদারদের মালিক বানিয়ে তা প্রদান করতে হবে এবং যথাসম্ভব দ্রুত আদায় করে দায়িত্ব মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করবে। বিনা কারণে বিলম্বে আদায় করা মাকরূহ। গরীব মিসকীনদেরকে কুরআন শরীফ এবং কিতাব ইত্যাদি খরিদ করে দিবে, দরিদ্র রোগীদের সাহায্য করবে। কোন অবস্থাতেই কুরবানীর চামড়া অথবা তার মূল্যকে আমদানীর মাধ্যম বানাবে না। অন্যথায় তা অপাত্রে খরচ হবে। ফলে সেই দল, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার দায়িত্বশীলগণ গুনাহগার হবেন। (ফাতওয়য়ে রহীমীয়াঃ খন্ড- ৬, পৃষ্ঠা- ১৬৬-১৬৭)
আরো পড়ুন : কোরবানি শব্দের অর্থ কি? কাকে বলে এবং কুরবানির হুকুম ও সময়
হারাম খাদ্য দ্বারা পালিত জানোয়ারের কুরবানী
প্রশ্নঃ এক লোক হারাম খাদ্য দ্বারা একটি গরু লালন পালন করেছে। অর্থাৎ, রাতের আধারে চুরি করে গরু অন্যের ফসলের ক্ষেতে ছেড়ে আসে। গরুর যখন পেট ভরে যায় তখন চলে আসে বা নিয়ে আসা হয়। সারা বৎসর সে এই ভাবেই গরুটি লালন-পালন করে। প্রশ্ন হল, এই গরুর দ্বারা কুরবানী করলে তা দুরস্ত হবে কি না? কিছু লোক সেই গরুতে কুরবানীর জন্য অংশীদার হয়েছিল। সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ার কারণে তারা তাদের অংশ ছেড়ে দিয়েছে। আর কিছু কুরবানীদাতা সেই ছেড়ে দেয়া অংশের ভিতর অংশীদার হয়েছে। এখন তাদের কুরবানী কি দুরস্ত হবে?
উত্তরঃ অন্যের ফসলের ক্ষেতে মালিকের অনুমতি ছাড়া নিজের গরু ছেড়ে দেয়া ঐ ব্যক্তির জন্য হারাম হয়েছে। কিন্তু তাতে গরু হারাম হয় নি । তার দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে। যে সমস্ত লোক তাতে অংশীদার হয়েও নিজ অংশ ছেড়ে দিয়েছে তারা যদি ধনী হয়, আর তাদের উপর কুরবানী ওয়াজীব, তাহলে অন্য কোন গরুতে অংশীদার হয়ে কুরবানী করলে ওয়াজীব আদায় হয়ে যাবে। আর যদি তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব না হয়; বরং নফল কুরবানী করার জন্য অংশ নিয়েছিল। তাহলে তাদের জন্য সেই অংশ ছেড়ে দেওয়া জায়েয নেই। তাদের দায়িত্ব ছিল সেই অংশের ভিতরই কুরবানী করা। একান্ত যখন ছেড়েই দিয়েছে আর সেই ছেড়ে দেয়া অংশে অন্য লোক অংশ গ্রহণ করেছে, তখন এই অন্য লোকের কুরবানী দুরস্ত হয়ে যাবে। আর যারা অংশ ছেড়ে দিয়েছে তাদের ওয়াজিব হল, সেই ছেড়ে দেয়া অংশের মূল্য ছদকা করে দেয়া । এই জবাব হল যদি গরুর সঠিক মালিকানা থাকে শুধুমাত্র তার খাদ্য হারাম হয়। আর যদি গরুটিই চুরির হয় অথবা তার মালিকানা না থাকে, তাহলে তা কুরবানী করা বা তার মধ্যে অংশীদার হওয়া কোন অবস্থাতেই জায়েয হবে না । (ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়াঃ খন্ড-৮, পৃষ্ঠা- ২১৬-২১৭)
আরো পড়ুন : কুরবানী করার নিয়ম, দোয়া ও কুরবানীর মাসয়ালা-মাসায়েল। pdf
মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিনকে কুরবানীর চামড়া দেয়া
প্রশ্নঃ কুরবানীর পশুর চামড়া অনেক সময় মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিনকে দিয়ে দেয়া হয়। মানুষ সাধারণতঃ এই চিন্তা করেই তাদেরকে দান করে যে, সারা বৎসর তারা মসজিদের খেদমত করে, অতএব তাদের সর্বাগ্রে বিবেচনায় রাখা কর্তব্য। অথবা সারা বছরে তাদের খেদমতের প্রতিদান হিসাবে দান করে থাকে। এর ভিতর এমন সব ইমাম মুয়াজ্জিনকেও দান করা হয়, যাদের উপর যাকাত ওয়াজিব। এমন ইমাম-মুয়াজ্জিনকে কুরবানীর চামড়া দান করা কি জায়েয?
উত্তরঃ কুরবানীর চামড়ার হুকুম কুরবানীর গোশতের মতই। যা দেয়ার জন্য দরিদ্র, নেসাব পরিমাণ মালের মালিক না হওয়া বা সাইয়েদ বংশের না হওয়া ইত্যাদি কোন শর্ত পাওয়া আবশ্যক নয়; বরং ফকীরকে যেমন দেয়া যাবে তেমনি সাহেবে নেসাব এবং সাইয়েদ বংশের লোককেও দেয়া যাবে। কিন্তু প্রতিদান এবং কোন কাজের পারিশ্রমিক হিসাবে কাউকেই দেয়া জায়েয হবে না ।
কিন্তু যদি কুরবানীর চামড়া বিক্রি করে ফেলে তখন তার মূল্য শুধুমাত্র ছদকা হিসাবে কোন ফকীরকেই দিতে হবে। নিজে রাখা, কোন সম্পদশালীকে দেয়া কিংবা পারিশ্রমিক হিসাবে দেয়া কোন অবস্থাতেই জায়েয হবে না । (ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়াঃ খন্ড-৮, পৃষ্ঠা- ২২০-২২১)
কুরবানীর জানোয়ার দ্বারা উপকৃত হওয়া
প্রশ্নঃ কুরবানীর জানোয়ার কোন সাহেবে নেসাব বা গরীব লোক কুরবানীর ঈদের এক সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহ অথবা এক বৎসর পূর্বে খরীদ করেছে কিংবা লালন-পালন করে বড় করেছে। সেই জানোয়ারকে কুরবানীর নিয়ত করল। এখন প্রশ্ন হল, যেই দিন কুরবানী করার নিয়ত করল, সেইদিন থেকেই কুরবানীর জানোয়ারের দুধ খাওয়া বা তার পশম কাটা নিষেধ, না শুধু কি কুরবানীর দিনই নিষেধ?
উত্তরঃ কুরবানীর জানোয়ার দ্বারা উপকৃত হওয়া মাকরূহ। এই হুকুমের ক্ষেত্রে সম্পদশালী এবং গরীব সমান। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরীঃ খন্ড-৫, পৃষ্ঠা-৩০১ )
আরো পড়ুন : কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্ত কয়টি?কার উপর ওয়াজিব-ওয়াজিব নয়
কয়েক বৎসরের ওয়াজিব কুরবানী আদায় না করলে তার প্রতিকার
প্রশ্নঃ কোন ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব। কিন্তু সে তা আদায় করে নি। এখন সে ঐ ওয়াজিব থেকে মুক্ত হতে চায়। এই অবস্থায় তার করণীয় কি হবে?
উত্তরঃ ঐ ব্যক্তি প্রতি বৎসরের হিসাব করে প্রত্যেক কুরবানীর বিনিময়ে কুরবানীর মূল্য ছদকা করে দিবে। (আযীযুল ফাতাওয়াঃ 2.781-980)
কুরবানীর পশুর শিং কি পরিমাণ ভাংলে কুরবানী জায়েয হবে না
প্রশ্নঃ ফাতাওয়ার কোন কোন কিতাবে পাওয়া যায় যে, যদি কুরবানীর পশুর শিং গোড়া থেকে উপড়ে যায়, তাহলে ঐ পশুর কুরবানী দুরস্ত হবে না। এখন প্রশ্ন হল, গোড়া থেকে শিং উপড়ে যাওয়ার অর্থ বা উদ্দেশ্য কি? শিং এর গোড়া বলতে কি বুঝানো হয়েছে? শিং কি পরিমাণ ভাংলে তার দ্বারা কুরবানী দুরস্ত হবে না?
উত্তরঃ যেই জানোয়ারের শিং না থাকে অথবা ভেঙ্গে যায় অথবা শিং-এর উপরের খোল খসে যায় সেই জানোয়ার দ্বারা কুরবানী দুরস্ত হবে। কিন্তু যদি শিং গোড়া থেকেই ভেঙ্গে যায় কিংবা উপড়ে যায় অথবা আঘাতের প্রভাব দেমাগ তথা মস্তিস্কে পৌছে যায়, তাহলে এমন জানোয়ারের দ্বারা কুরবানী দুরস্ত হবে না।
بدائع এর ইবারতে পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছে যে, কোরবানি দুরস্ত না হওয়ার পরিমাণ হল যেই শিং-এর ভাঙ্গা হাড়ের গোড়া পর্যন্ত পৌঁছে যায় । তার চেয়ে কম ভাঙ্গা হলে সেই পশুর কুরবানী দুরস্ত না হওয়ার কোন কারণ নেই। ( ফাতওয়য়ে রহীমীয়াঃ খন্ড- ৬, পৃষ্ঠা- ১৬১-১৬২)