মৎস্য চাষ : যে সকল জলজ প্রাণী মানুষের খাদ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য সে সকল প্রাণীর বিবেচনা প্রসূত আহরণ, পালন, প্রজনন সংখ্যা বৃদ্ধির প্রচেষ্টায় আধুনিকীকরণ ও সংরক্ষণকেই প্রকৃতপক্ষে মৎস্য চাষ বলে ।
মৎস্য সম্পদ কাকে বলে ?
মৎস্য সম্পদ : কর্ডাটা পর্বের ভার্টিব্রাটা উপপর্বের অন্তর্গত জলজ প্রাণী যাদের দেহ ডার্মাল আঁইশ দ্বারা আবৃত তাদেরকে মৎস্য সম্পদ বলে ।
উপাদানগত বৈশিষ্ট্যে মৎস্য প্রোটিন সমৃদ্ধ । এছাড়া মৎস্য থেকে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ প্রভৃতি খনিজ চর্বি জাতীয় দ্রব্য ও তৈল পাওয়া যায়। বিশ্বের প্রায় সব দেশের মানুষের দৈহিক প্রয়োজনীয় প্রোটিনের প্রায় ৮০% মৎস্য থেকে পাওয়া যায়। অর্থনৈতিক দিক থেকে মৎস্য সম্পদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মৎস্য চাষের গুরুত্ব :
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থায় মৎস্য সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই মৎস্য চাষে গুরুত্বারোপ একটি অপরিহার্য বিষয়। মৎস্য চাষের গুরুত্ব নিম্নে আলোচনা করা হলো ।
(১) খাদ্যের উৎস্য : খাদ্য হিসেবে প্রাণীজ আমিষ মানুষের সুস্বাস্থ্য ও কর্মশক্তির জন্য একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। প্রাণীজ আমিষের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ যোগান আসে মাছ থেকে ।
আরো পড়ুন : কার্প জাতীয় মাছের চাষ পদ্ধতি বর্ণনা কর
(২) জাতীয় অর্থনীতির বিকাশ : মৎস্য সম্পদ আমাদের জাতীয় অর্থনীতি সুদৃঢ় করতে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। আমাদের জাতীয় উৎপাদনের শতকরা প্রায় ৬ ভাগ আসে মৎস্য সম্পদ থেকে ।
(৩) রপ্তানি বাণিজ্যের প্রসার : বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে মৎস্য সম্পদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে আমাদের দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে চিংড়ির স্থান চতুর্থ। দেশের সমগ্র রপ্তানি আয়ের প্রায় ১১ ভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয় মৎস্য ও মৎস্যজাত দ্রব্য রপ্তানির মাধ্যমে।
(৪) জীবিকার উৎস : দেশের প্রায় ১২ লক্ষ লোক সার্বক্ষণিকভাবে মৎস্য সম্পদের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। বর্তমানে মৎস্য পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাজারজাতকরণ ইত্যাদি কাজে জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ লোক জীবিকা অর্জনের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। ১৯৯২-৯৩ সালে দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৭ শতাংশ মৎস্য সম্পদ থেকে পাওয়া গেছে।
(৫) শিল্পের কাঁচামাল : নানা রকম শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে মাছের ভূমিকা লক্ষণীয় । মাছের কাটা ও উচ্ছিষ্টাংশ ওষুধ ও অন্যান্য শিল্পখাত পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয় । কাজেই বহুমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক শিল্পের বিকাশে মাছের অবদান অনস্বীকার্য।
(৬) সার : মাছের উচ্ছিষ্টাংশ ও উপজাত পদার্থ ভালভাবে পঁচিয়ে উত্তম সার তৈরি করা যায়। ফসল উৎপাদনে জৈব সার হিসেবে এটি যথেষ্ট সহায়ক ।
(৭) পশুপাখির খাদ্য : মাছের উচ্ছিষ্টাংশ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে তৈরিকৃত ফিসমিল হাঁসমুরগির উপাদেয় খাদ্য। আজকাল হাঁসমুরগির খামারে খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে ফিসমিল যথেষ্ট ভূমিকা রাখে ।
সুতরাং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৎস্য সম্পদের অবদান অনেক বেশি। কাজেই মৎস্য চাষের পরিধি বাড়িয়ে জাতীয় অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করতে আরো ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত ।