হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

কুরবানী করার নিয়ম, দোয়া ও কুরবানীর মাসয়ালা-মাসায়েল। pdf

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য লাভ ও আত্মত্যাগের অপূর্ব নিদর্শন হলো কুরবানি। কুরবানির মাধ্যমেই বান্দা তার প্রভুর প্রতি প্রেমের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতে পারে। সমাজে বসবাসরত প্রত্যেক সামর্থ্যবান ধনী মুসলমানের ওপর কুরবানি করা ওয়াজিব। কুরবানি শরীয়ত নির্ধারিত সময় ও বিধান অনুযায়ী সম্পন্ন হওয়াই আবশ্যক ।

কুরবানী করার নিয়ম :

কোরবানী করার সময় পশুকে কিলামুখী করে মাথার দিক দক্ষিণে রেখে শুইয়ে এবং গলায় ছুরি দেয়ার আগে নিম্ন দোয়াটি পড়বে—

কোরবানীর দোয়া

اِنّى وَجَهْتُ وَجْهَى لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيْفَا وَمَا اَنَا مِنَ  الْمُشْرِكِيْنَ إِنَّ صَلَاتَى وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ . لَا شَريكَ لَهُ وَبِذَالِكَ أُمِرْتُ وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ . اللَّهُم مِنْكَ وَلَكَ . –

এ দোয়া পড়ে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে জবাই করবে। জবাই শেষে দাঁড়িয়ে নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করবে—

اللَّهُم تَقَبَّلْ مِنّي كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبيبِكَ مُحَمَّدٍ وَخَلِيْلِكَ إِبْرَاهِيمَ  عَلَيْهِمَا الصَّلوةُ وَالسَّلاَمُ

আর অন্যের কোরবানী হলে مِنْ এর স্থলে কোরবানী দাতার নাম উল্লেখ করবে।

কুরবানীর মাসয়ালা – মাসায়েল

মাসআলা- ১ : যার উপর সদকা ফিতর ওয়াজিব তার উপর কোরবানী ওয়াজিব । অর্থাৎ ১০ যিলহজ্জ ফজর হতে ১২ই যিলহজ্জ সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যে কেউ মালেকে নেসাব হবে তার উপর কোরবানী ওয়াজিব। কিন্তু যার উপর কোরবানী ওয়াজিব নয় সওয়াবের আশায় সেও কোরবানী করতে পারে।

মাসআলা- ২ : মুসাফিরের উপর সফর অবস্থায় কোরবানী ওয়াজিব নয় ।

আরো পড়ুন : কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্ত কয়টি?কার উপর ওয়াজিব-ওয়াজিব নয়

মাসআলা- ৩ : ১০ যিলহজ্জ ঈদের নামাযের পর হতে ১২ই যিলহজ্জ সন্ধ্যা পর্যন্ত; এ তিন দিন কোরবানী করার সময়। এ তিন দিনের যে কোন দিন কোরবানী করতে পারে। কিন্তু প্রথম দিন সর্বোত্তম, তার পর দ্বিতীয় দিন, তার পর তৃতীয় দিন ।

মাসআলা- ৪ : ঈদের নামাযের আগে কোরবানী করা দুরস্ত নয়। নামাযের পরেই করবে । অবশ্য যে স্থানে ঈদের নামায ও জুমুআর নামায দুরস্ত নয় সে স্থানে ১০ই যিলহজ্জ ফজরের পরও কোরবানী করতে পারে।

মাসআলা- ৫ : কোন শহরবাসী যদি নিজের কোরবানীর জন্তু এমন স্থানে পাঠিয়ে দেয় যেখানে জুমুআ ও ঈদের নামায জায়েয নয় আর সেখানকার লোক ফজরের পর কোরবানীর জন্তু জবাই করে তথা হতে গোশ্ত শহরে পাঠিয়ে দেয়, তবে নামাযের পূর্বেও তা খেতে পারে।

মাসআলা— ৬ : ১২ই যিলহজ্জ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত তিন দিনের মধ্যে যে দু’টি রাত আসে সে দু’রাতেও কোরবানী করা যায়, কিন্তু রাতে করা ভাল নয়। হয়তো কোন ১টি রগ কাটা নাও যেতে পারে। ফলে কোরবানী দুরস্ত হবে না ।

মাসআলা- ৭ : কোন লোক ১০ ও ১১ই যিলহজ্জ সফরে ছিল বা সম্পদহীন ছিল । ১২ই তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বে বাড়ি এসেছে বা সম্পদ লাভ করেছে, কিংবা কোথাও ১৫ দিন থাকার নিয়ত করে মুকীম হয়েছে, তখন তার উপর কোরবানী ওয়াজিব হবে ।

মাসআলা- ৮ : নিজের কোরবানী নিজ হাতে জবাই করা মুস্তাহাব। নিজে না পারলে অন্যের দ্বারা করাবে। কিন্তু নিজে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভাল । স্ত্রীলোক পর্দার আড়ালে দাঁড়াবে ।

মাসআলা— ৯ : কোরবানী করার সময় মুখে নিয়ত ও দোয়া উচ্চারণ করা জরুরী নয়। মনে মনে নিয়ত করে মুখে শুধু ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে জবাই করলেও দুরস্ত হবে। অবশ্য মুখস্থ থাকলে তা মুখে পড়া ভাল ।

মাসআলা- ১০ : কোরবানী শুধু নিজের তরফ হতে ওয়াজিব হয়। নাবালেগ সন্তান মালদার হলেও তার উপর কোরবানী ওয়াজিব হয় না। মা, বাপের উপরও ওয়াজিব নয়। যদি কেউ সন্তানের পক্ষ হতে কোরবানী করে তবে তা নফল হবে এবং তা নিজের মাল হতেই করতে হবে।

আরো পড়ুন : কোরবানি শব্দের অর্থ কি? কাকে বলে এবং কুরবানির হুকুম কি?

মাসআলা— ১১ : ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, গরু, মহিষ, উট প্রভৃতি পালিত পশু দ্বারা কোরবানী করা দুরস্ত । অন্য কোন জন্তু দ্বারা তা দুরস্ত নেই ।

মাসআলা- ১২ : গরু, মহিষ এবং উটে একজন হতে সাত জন পর্যন্ত শরীক হতে পারে । কিন্তু তার শর্ত এই যে, কারো অংশ যেন এক-সপ্তমাংশ হতে কম না হয় । আর প্রত্যেকের নিয়ত যেন খাঁটি হয়। যদি কারো নিয়ত শুধু গোশ্ত ভোজন হয় তবে এতে কারো কোরবানী দুরস্ত হবে না।

মাসআলা- ১৩ : যদি একটি গরুতে সাত জনের কম ৫/৬ জন শরীক হলো এবং কারো অংশ সপ্তমাংশ হতে কম হলো না (যেমন ৭০০ টাকা দিয়ে গরু কিনলো, কারো অংশ যেন ১০০ টাকার কম না হয়), তবে তা জায়েয হবে। কিন্তু যদি আট জন শরীক হয় তবে কারো কোরবানী জায়েয হবে না।

মাসআলা- ১৪ : গরু খরিদ করার কালে সকল অংশীদার মিলে খরিদ করা ভাল। আর যদি কেউ একা একটি গরু খরিদ করে মনে মনে এ ধারণা রাখে যে, পরে আরো লোক শরীক করে নেবে, তবে তাও জায়েয আছে। কিন্তু যদি খরিদ করার সময় অন্য লোক শরীক করার নিয়ত ছিল না। কিন্তু পরে অন্য লোক শরীক করার মনস্থ করলো, তবে এমতাবস্থায় সে ক্রেতা ধনী হলে শরীক নিতে পারবে, গরীব হলে পারবে না।

মাসআলা— ১৫ : কোরবানীর জন্তু হারিয়ে গেলে তৎপরিবর্তে আর একটি খরিদ করার পর প্রথমটিও পেয়ে থাকলে ক্রেতা যদি ধনী হয় তবে তার উপর যে কোন একটি কোরবানী করা ওয়াজিব। আর গরীব হলে উভয়টি কোরবানী করতে হবে। (কারণ, ধনীর কোরবানী ওয়াজিব হয় তার মালের উপর । কিন্তু গরীব লোক কোরবানীর উদ্দেশে জন্তু ক্রয় করলে তার নিয়তের কারণে সে জন্তুর উপর কোরবানী ওয়াজিব হয়। তাই ঐ জন্তুই কোরবানী করা ওয়াজিব হবে।)

মাসআলা— ১৬ : সাত জনে শরীক হয়ে যদি একটি গরু কোরবানী করে; তবে গোশ্ত অনুমান করে ভাগ করবে না। পাল্লা দ্বারা মেপে সমান সমান ভাগ করবে । অন্যথায় কিছু বেশ কম হলে তা সুদ হয়ে যাবে এবং গুনাহগার হবে। অবশ্য মাথা, পা, বা চামড়া যে যে অংশে দেবে সে সে অংশে (তার বদলে) গোশ্ত কম দিলে দুরস্ত হবে, যত কমই হোক । কিন্তু এক ভাগে গোশ্ত কম না দিয়ে সে ভাগে অতিরিক্ত মাথা, পা প্রভৃতি দিলে সুদ হবে এবং গুনাহগার হবে ।

আরো পড়ুন : কুরবানির প্রশ্ন উত্তর – দলিল সহ

মাসআলা— ১৭ : কোরবানীর পশুর বয়স ছাগল ১ বছর, গরু-মহিষ ২ বছর এবং উট ৫ বছর হতে হবে। এর কম হলে কোরবানী হবে না । দুম্বা ও ভেড়ার হুকুম ছাগলের মত ১ বছর, কিন্তু ৬ মাসের বেশি বয়সের দুম্বা যদি এরূপ মোটা তাজা হয় যে, ১ বছরের দুম্বার মধ্যে ছেড়ে দিলে চেনা যায় না, তবে সেরূপ দুম্বা বাচ্চার কোরবানী জায়েয । অন্যথায় জায়েয হবে না। কিন্তু ছাগলের বা অন্যান্য জন্তুর ক্ষেত্রে সেরূপ হুকুম কার্যকরী হবে না।

মাসআলা— ১৮ : যে জন্তুর দু’টি চোখ বা একটি চোখ পূর্ণ অন্ধ বা এক চোখের এক-তৃতীয়াংশ বা তারও বেশি দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে গেছে, তার কোরবানী দুরস্ত নয়। এরূপ যে জন্তুর এক কানের বা লেজের এক-তৃতীয়াংশ বা তদপেক্ষা বেশি কেটে গেছে, সে জন্তুর কোরবানী দুরস্ত হবে না ।

মাসআলা- ১৯ : যে জন্তু মাত্র তিন পায়ের উপর ভর করে চলে। এক পা শুধু মাটিতে লেগে থাকে, ভর করতে পারে না, সে জন্তুর কোরবানী জায়েয হবে না । অন্যথায় জায়েয হবে।

মাসআলা- ২০ : যে জন্তু এমন কৃশ ও শুষ্ক শীর্ণ যে, হাড়ের মধ্যে মগজও শুকিয়ে গেছে, সে জন্তুর কোরবানী দুরস্ত হবে না। আর অনুরূপ না হলে জায়েয আছে ।

মাসআলা- ২১ : যে জন্তুর দাঁত নেই তা দ্বারা কোরবানী দুরস্ত নয়, তবে অর্ধেকের কম পড়ে থাকলে জায়েয হবে।

মাসআলা- ২২ : যে জন্তুর জন্ম থেকে কান নেই সে জন্তুর কোরবানী জায়েয হবে না। আর যদি, আছে কিন্তু অত্যন্ত ছোট তবে সেটির কোরবানী জায়েয হবে ।

মাসআলা – ২৩ : যে জন্তুর শিং উঠেনি বা ভেঙ্গে গেছে তা দ্বারা কোরবানী জায়েয, তবে মূল থেকে উঠে গেলে জায়েয হবে না

মাসআলা- ২৪ : যে জন্তুকে খাসী বানানো হয়েছে সেটির কোরবানী জায়েয। এরূপ যে জন্তুর গায়ে বা কাঁধে দাদ বা খুজলি রয়েছে সেটির কোরবানীও জায়েয। তবে খুজলির কারণে একেবারে কৃশ হয়ে গেলে জায়েয নয়।

মাসআলা- ২৫ : নিখুঁত জন্তু ক্রয়ের পর যদি এমন কোন দোষ পাওয়া যায় যাতে কোরবানী হয় না, তবে ক্রেতা ধনী হলে অন্য একটি জন্তু ক্রয় করে তাকে কোরবানী করতে হবে। আর গরীব হলে ঐ জন্তুটিই কোরবানী করে দেবে। (কারণ পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।)

মাসআলা-২৬ : কোরবানীর গোশ্ত নিজে খাবে, পরিবারবর্গ ও আত্মীয়-স্বজনকে খাওয়াবে বা হাদিয়া দেবে। গরীব মিসকীনকে এক-তৃতীয়াংশ দান করবে। অবশ্য তদপেক্ষা কম করলেও গুনাহ হবে না। (কোন কাফির বিধর্মীকে খেতে দিতে পারা যায়, কিন্তু কোন বিনিময় হিসেবে দেয়া বা খাওয়ানো যাবে না।)

মাসআলা— ২৭ : কোরবানীর চামড়ার মূল্য মসজিদ, মাদ্রাসা মেরামতে বা অন্য কোন নেক কাজে ব্যয় করা জায়েয নেই; বরং খয়রাত করবে। তবে হাঁ, গোটা চামড়া কাউকে দিয়ে দিলে অথবা নিজে কোন কাজে শুকিয়ে ব্যবহার করলে জায্যে হবে।

মাসআলা- ২৮ : কোরবানী জবেহকারী বা গোশ্ত প্রস্তুতকারীর পারিশ্রমিক পৃথকভাবে দেবে । গোশ্ত, চামড়া ইত্যাদি দ্বারা দেবে না ।

মাসআলা— ২৯ : কোরবানী জন্তুর রশি, দড়ি ইত্যাদি নিজে ব্যবহার না করে গরীবকে দিয়ে দেয়া ভাল ।

মাসআলা ৩০ : কারো কোরবানী ওয়াজিব ছিল। কিন্তু তিন দিন গত হয়ে গেল, কোন কারণবশতঃ কোরবানী করতে পারেনি, তখন একটি ছাগল বা ভেড়া কিংবা তার মূল্য খয়রাত করে দেবে।

মাসআলা- ৩১ : কেউ কোরবানীর মান্নত করলে তা পুরা করা ওয়াজিব হয়ে যায় । সে গরীব হোক বা ধনী হোক, কোরবানী করা ওয়াজিব। কিন্তু মান্নত কোরবানীর গোশত গরীব মিসকীনকে দিয়ে দিতে হবে । নিজে খাবে না, কোন ধনীকে খাওয়াবে না । তদ্রূপ কেউ মৃত্যুর আগে কোরবানী করার জন্য অসিয়ত করে গেলে সে অসিয়ত করা কারবানীর গোশ্তও গরীবদের মধ্যে বন্টন করে দেবে। নিজেরা খাবে না ।

মাসআলা- ৩২ : বিনা অসিয়তে নিজের খুশীতে কেউ মৃতের জন্য কোরবানী করলে তার গোশ্ত নিজের কোরবানীর মত সবাই খেতে পারবে। (তদ্রূপ কোরবানীর সাথে আকীকা করলে গোশ্ত পিতা, মাতাসহ সবাই খেতে পারবে।)

মাসআলা- ৩৩ : কারো অনুমতি ছাড়া অন্য লোক তার পক্ষ থেকে কোরবানী করলে তা সহীহ হবে না এবং এতে অংশীদার কারো কোরবানীই সহীহ হবে না ।

মাসআলা- ৩৪ : কোন গরু, ছাগল কারো নিকট ভাগী বা রাখালী থাকলে তা প্রকৃত মালিকের অনুমতি ছাড়া রাখাল হতে কিনে কোরবানী করলে তা হবে না। কারণ, ভাগীদার জন্তুর মালিক নয় বরং মূল মালিকের নিকট থেকে কিনে দিলে দুরস্ত হবে।

মাসআলা- ৩৫ : কয়েকজনে মিলে কোরবানী করা গোশত সবাই একই সাথে পাক করে খেলে তা জায়েয আছে। অবশ্য যদি ভাগ করতে হয় তবে দাঁড়িপাল্লা দিয়ে মেপে সুষ্ঠভাবে সমান করে ভাগ করতে হবে।

মাসআলা- ৩৬ : গর্ভবতী জন্তু কোরবানী করা জায়েয আছে। পেটে বাচ্চা জীবিত থাকলে তাও জবাই করে দেবে।

আরো পড়ুন : ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত (আরবিতে ও বাংলায়)

কুরবানী করার নিয়ম, দোয়া ও কুরবানীর মাসয়ালা-মাসায়েল। pdf

ফাইল সাইজ: 272 KB | ফরম্যাট: PDF

আপনার ফাইল প্রস্তুত হচ্ছে… অপেক্ষা করুন
30 সেকেন্ড


যদি মূল লিংক কাজ না করে তবে বিকল্প লিংক ব্যবহার করুন
Need help with Study Abroad,
IELTS Preparation, অথবা
Online Degree Programs?
Explore trusted resources for students worldwide.
✔ 100% নিরাপদ ও ভাইরাস মুক্ত

Leave a Comment

error: Content is protected !!