অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে শব্দ বলে। শব্দ ভাষার অন্যতম মৌলিক উপাদান। বাংলা ভাষা একটি সমৃদ্ধ ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃত ভাষা। নানা পরিবর্তন কিংবা বিবর্তনের মাধ্যমে নানা ভাষী ও জাতির সংস্পর্শে এ ভাষার শব্দভান্ডার হয়েছে সমৃদ্ধ, উন্নত ও পরিপূর্ণ।
শব্দের সংজ্ঞা
সাধারণ কথায়, মানুষের মুখনিঃসৃত এক বা একাধিক ধ্বনি বা বর্ণ মিলিত হয়ে যদি একটি অর্থ প্রকাশ করে, তবে তাকে শব্দ বলে। যেমন- কলম, আমরা, মা, গোলাপ, পাখি, বাড়ি, চিনি ইত্যাদি।
বাংলা শব্দভান্ডারের সমৃদ্ধির ইতিহাস
যে ভাষা যত বেশি উন্নত সে ভাষার শব্দভান্ডার তত বেশি সমৃদ্ধ, । ড. হুমায়ুন আজাদের মতে, “যে রাজকোষ যত বেশি ধনাঢ্য যে রাজকোষে তত বেশি মুদ্রা, । ভাষার রাজকোষ ভরে থাকে শব্দে। সোনালি শিকির মতো শব্দ, রুপোলি আধুলির মতো শব্দ, ঝলমল করে চকচক করে। যে ভাষার ভান্ডারে যত বেশি শব্দ সে ভাষা তত বেশি ধনী।”
বাংলা ভাষা একটি শব্দসমৃদ্ধ ভাষা। হাজার বছরের নানা পরিবর্তন, বিবর্তনের মাঝে অজস্র শব্দ জমেছে বাংলা ভাষার শব্দভান্ডারে। নদীর স্রোতের মতো প্রতিটি সজীব ভাষাও বারবার তার ধারা বদল করে। পুরোনো খাত ছেড়ে নতুন পথে বয়ে চলে। যুগে যুগে ভাষার মধ্য থেকে আবার অনেক শব্দ হারিয়ে যায়, জন্ম হয় নতুন শব্দ। শব্দসমৃদ্ধির এই ইতিহাস খুবই বিচিত্র, চিত্তাকর্ষক। এর পেছনে লুকানো থাকে অতীত সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও বস্তুগত ব্যবহারের নানা গোপন তথ্য।
আরো পড়ুন : গঠন অনুসারে ও অর্থ অনুসারে শব্দ কত প্রকার ও কী কী উদাহরণ সহ
ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর প্রাচীন ভারতীয় আর্য শাখার ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে বাংলা ভাষা বর্তমান রূপলাভ করেছে। তাই এ ভাষায় সংস্কৃত শব্দের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি অসংখ্য শব্দের উপস্থিতি বিদ্যমান। প্রাচীনকাল থেকেই সংস্কৃত শব্দ বাংলা ভাষার অঙ্গরূপে স্থান করে নেয়। তেরো শতকে বঙ্গে মুসলিম শাসনের পর থেকে আরবি, ফারসি ও তুর্কি শব্দের প্রভাব বাড়তে থাকে। ষোলো শতকে বঙ্গ অঞ্চলে পর্তুগিজদের আনীত শব্দাবলি বাংলায় অন্তর্ভুক্ত হতে থাকে। সতেরো শতকে এ অঞ্চলে বিদেশিদের আগমন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পর্তুগিজ, ওলন্দাজ, ফরাসি ও ইংরেজি শব্দের প্রভাব বাড়তে থাকে। আঠারো-উনিশ শতকে ইংরেজদের শাসনের ফলে বাংলা ভাষায় অসংখ্য ইংরেজি শব্দ প্রবেশ করে। এভাবে বর্জন নয়গ্রহণের নীতিতে, মৌচাকে মধু সঞ্চয়ের পদ্ধতিতে বিভিন্ন ভাষা থেকে শব্দসম্ভার সংগ্রহ করে বাংলা ভাষার শব্দভান্ডার সমৃদ্ধিশালী হয়ে উঠেছে। অতএব, ভাষা তার আপন গতিতে চলে এবং কালক্রমে বিবর্তিত হয়।
ধ্বনি ও শব্দের মধ্যে পার্থক্য :
ধ্বনি | শদ |
---|---|
১। মানুষের মুখ থেকে নিঃসৃত শব্দের ক্ষুদ্রতম অংশের নাম ধ্বনি। | ১। এক বা একাধিক অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা বর্ণ মিলে তৈরি হয় শব্দ। |
২। ধ্বনি তৈরি হতে বাগ্যন্ত্রের সাহায্য লাগে। | ২। বাগযন্ত্রের সাহায্য ছাড়াও শব্দ তৈরি হতে পারে। |
৩। ধ্বনির লিখিত রূপের নাম বর্ণ। | ৩। একাধিকবর্ণের মিলনে গঠিত হয় শব্দ। |
৪। একাধিক ধ্বনি একত্রিত হয়ে তৈরি হয় শব্দ। | ৪। একাধিক শব্দ মিলিত হয়ে গঠিত হয় বাক্য। |
৫। ধ্বনি শব্দের ক্ষুদ্রতম অংশ। | ৫। শব্দ বাক্যের ক্ষুদ্রতম অংশ। |
৬। ধ্বনি উচ্চারিত হলে তা কেবল শ্রুতিগোচর হয়। | ৬। কিন্তু শব্দ উচ্চারিত হলে তা শ্রুতিগোচর ও শব্দের লিখিত রূপ দৃশ্যগোচর। |
৭। পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ধ্বনির মিলনে হয় সন্ধি। | ৭। আর পরস্পর সম্পর্কযুক্ত একাধিক শব্দের মিলনে হয় সমাস। |