হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

প্রবন্ধ রচনা : ঈদুল ফিতর

উপস্থাপনা :

ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। মুসলমানদের ধর্মীয় যে উৎসবগুলো রয়েছে তার মধ্যে ঈদুল ফিতর অন্যতম। শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখে ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হয়। ধর্মীয় উৎসবগুলোর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে এই ঈদুল ফিতর পালন করা হয়।

ঈদুল ফিতর :

দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করা হয়ে থাকে। মুসলমানদের জন্য যারা দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা পালন করে থাকে শুধুমাত্র তাদের জন্যই এই ঈদুল ফিতরের আনন্দ যেন স্বতঃস্ফূর্ত ধারায় প্রবাহিত হয়। ফিতরা শব্দ থেকে এসেছে ফিতর শব্দটি। গরিব দুঃখীকে খুশিতে শামিল করার ব্যবস্থায় হলো ফিতরা। ঈদুল ফিতর অর্থ রোজা ভাঙ্গার খুশি। একজন রোজাদার মুসলমান ঈদের আনন্দ শরিক হওয়ার জন্য ইসলাম নির্ধারিত ফিতরা আদায় করা নির্দেশ দিয়েছে।

আরও পড়ুন : ঈদ উৎসব – বাংলা রচনা | ক্লাস 6, 7, 8, 9, 10

উদযাপন :

এদিন সকালে মুসলমানগণ খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ আদায় করে। নামাজ শেষে গোসল করে নতুন জামা কাপড় পরে মিষ্টান্ন দ্রব্য মুখে দিয়ে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে ঈদগাহে সামিল হয় এবং সবাই একসাথে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করে। যারা সম্পদশালী রয়েছে তারা যাকাত ও ফিতরা।

ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি :

ঈদের নামাজ শেষে ধনী-গরীব সবাই মিলে একে অপরের সাথে বুকে বুক মিলিয়ে কোলাকুলি করে। আর এটাতেই প্রমাণিত হয় যে মুসলমান-মুসলমান পরস্পর ভাই-ভাই। একে অন্যের অতি আপনজন। মানবতার এমন দৃষ্টান্ত শুধু মুসলমান ছাড়া অন্য কোন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে দেখা যায় না।

ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য :

ঈদের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অশেষ। এ ঈদুল ফিতরের উৎসব কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, জাতীয় জীবনে এর প্রভাব অপরিসীম। মুসলমানদের এক গুরুত্বপূর্ণ ও অনাবিল খুশির উৎসব হলো ঈদুল ফিতর । দীর্ঘ একমাস রোযা রাখার পর ঈদের আগমন ঘটে। আনন্দঘন এ ঈদ এনে দেয় আমাদের মাঝে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।মূলত আমাদের মাঝে বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের কল্যাণবার্তা নিয়ে আসে এ ঈদ। এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য জাতীয় জীবন পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। সবাই একই ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে- এক শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলার স্পৃহা লাভ করে ।

আরও পড়ুন : ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

ঈদুল ফিতরের মহান শিক্ষা :

আমাদের মাঝে ঈদুল ফিতর এনে দেয় এক শাস্তির অনুপম বার্তাবাহী সুদৃঢ় ঐক্য। এদিন উঁচু-নীচু, রাজা-প্রজা, ধনী-গরীব সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একই প্রভুর উদ্দেশ্যে অবনত হয়। ফলে পরস্পরের মাঝে ঐক্যের বন্ধন মজবুত হয়।

ঈদুল ফিতর এক অসীম প্রেরণা :

মুসলমানদের মাঝে অসীম প্রেরণা সৃষ্টি করে ঈদুল ফিতর । এদিন নব উৎসাহ-উদ্দীপনায় জেগে ওঠে প্রতিটি মুসলিম সত্তা । নবি করীম (সাঃ)-এর যামানার দিকে তাকালে দেখা যায়, এদিন মুসলমান সকল ভেদাভেদ ভুলে নতুন জাগরণে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেছিল ।

ইসলামের প্রসার :

একটি সর্বজনীন ধর্ম হলো ইসলাম । এ সর্বজনীনতার মূলে রয়েছে কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী কৃষ্টি। এর মধ্যে অন্যতম হলো ঈদুল ফিতর । এ ঈদ সুদূরপ্রসারী কল্যাণকামী ভূমিকা পালন করে অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের মনে। সুনির্ধারিত কার্যকলাপ, সুষ্ঠু নিয়মতান্ত্রিকতা, ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই ইসলামের বিজয় সম্ভব হয়েছে ৷

আরও পড়ুন : রচনা : কুরবানি/কুরবানির শিক্ষা /জাতি গঠনে কুরবানির ভূমিকা

ঈদের তাৎপর্য :

মুসলমানরা দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করেন মসজিদে অথবা স্বগৃহে । আর ঈদ উপলক্ষে প্রতি বছর ২’বার একত্রিত হয়ে মুসলিম উম্মাহ দু’রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায়ের মাধ্যমে এক অসীম প্রেরণা লাভ করে। একমাত্র ইসলাম ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দিয়েছে, তার বাস্তব প্রতিফলন ঘটে ঈদের দিনে ।

ঈদের মূল বাণী ও আহ্বান :

ঈদের মূল বাণী হলো ন্যায়, সাম্য, ত্যাগ ও কুরবানি। ঈদের দিন আমরা যেরূপ একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করি, সেরূপ যদি সারা বছর করি, তাহলে সত্য ও সুন্দরের অনাবিল হাসিতে ভরে ওঠবে গোটা বিশ্ব সমাজ ।

উপসংহার :

একমাত্র ইসলাম মানুষকে ভাই ভাই হিসেবে একতাবদ্ধ থাকার শিক্ষা দেয় এবং মহান আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করতে উৎসাহিত করে। আমরা ঈদের দিনে এই শিক্ষা ও আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করে তা পালন করি। কিন্তু যদি আমরা শুধু আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠি আর এই মহান শিক্ষাকে ভুলে যাই, তাহলে ঈদের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য হারিয়ে যাবে।

 

Leave a Comment