হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

বাংলা প্রবন্ধ রচনা : যুদ্ধ নয় শান্তি চাই

উপস্থাপনা :

যুদ্ধ নয় শান্তি— পৃথিবীতে দুটি বিপরীতমুখী অবস্থা। অশান্ত বিশ্বে আজ কোথাও শান্তি নেই। যুদ্ধ একান্ত পাশবিক। অথচ পশুর চেয়ে মানুষই বেশি যুদ্ধ করে, আবার মানুষই যুদ্ধকে বেশি ঘৃণা করে। দুটি বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ তাণ্ডবলীলা মানুষের মানবিক চেতনাকে করেছে জাগ্রত। তাই আজ ক্ষুদ্র সেমিনার থেকে জাতিসংঘের টেবিল পর্যন্ত সর্বত্র প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে বিশ্ব শান্তি।

যুদ্ধের উৎস :

হিংসা-বিদ্বেষ আর দুঃশাসনের ফলে মানুষের মধ্যে যুদ্ধের অগ্নিশিখা প্রজ্জ্বলিত হয়। শাসক ও শোষকগোষ্ঠীর অহমিকা এবং আধিপত্য স্পৃহা মানুষের মধ্যে যুদ্ধের প্রেরণা যোগায়। কোনো দেশ শক্তিশালী হয়ে উঠলেই তার প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে চায়।

দেখুন এটি : প্রবন্ধ রচনা : সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বাংলাদেশ

যুদ্ধের কারণ :

যুদ্ধ সবসময়ই অনভিপ্রেত। শান্তিকামী মানুষ কখনো যুদ্ধ চায় না। তবুও ইতিহাসের পাতা কলঙ্কিত করে পৃথিবীতে ঘটে গেছে অনেক যুদ্ধের ঘটনা। কিন্তু কেন? উগ্র জাতীয়তাবাদ, হিংসা, ঈর্ষা, এক রাষ্ট্রের ওপর অন্য রাষ্ট্রের আধিপত্য বিস্তার, বৃহৎ শক্তিবর্গের অস্ত্র তৈরি ও অস্ত্রবিক্রির ক্ষেত্র প্রস্তুত, তেল-গ্যাসসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ লুট ইত্যাদি মূলত যুদ্ধের মূল কারণ। ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় জীবনের হিংসা, লোলুপ বাসনা মানুষকে ঠেলে দেয় যুদ্ধের ভয়াবহতার দিকে। আবার রাষ্ট্রনায়কদের অদূরদর্শিতা ও লোলুপতার কারণেও যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে।

আধিপত্যবাদীদের হিংসানীতি :

সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদীদের মূল নীতিই হলো প্রভুত্ব বিস্তার করা। এক দেশের ওপর অন্য দেশের প্রভুত্ব বিস্তার করা নিয়েই বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছে দুটি মহাযুদ্ধ। কতিপয় আধিপত্যবাদীর উন্মত্ত প্রতিযোগিতায় বিশ্ববাসীকে দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাই বিশ্ববাসীর কণ্ঠে আজ এই স্লোগান, “আর যুদ্ধ নয় শান্তি চাই।”

যুদ্ধের ভয়াবহতা :

যুদ্ধ মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে বিপন্ন করে তোলে। মানুষের স্বপ্নীল আশাগুলোকে হতাশা ও গ্লানির আবরণে ঢেকে দেয়। যুদ্ধের ভয়াবহতা বড় নিষ্ঠুর। যুদ্ধ কেড়ে নেয় অসংখ্য মানুষের প্রাণ। তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়, লাখো মানুষকে করে বিকলাঙ্গ। যুদ্ধ সভ্যতা ধ্বংস করে, মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়। যুদ্ধের তাণ্ডব মানুষকে শিহরিত করে তোলে। মূলত যুদ্ধ মানুষকে ধ্বংস ও ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই দিতে পারে না।

দেখুন এটি : প্রবন্ধ রচনা: দূষিত পরিবেশ ও বিপন্ন পৃথিবী

প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ :

যুদ্ধ মানুষের জীবনে কতটা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনে তার প্রমাণ হলো, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সংঘটিত এ দুটি যুদ্ধে কোটি কোটি মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। ১১ বছরব্যাপী সংঘটিত এ দু’টি বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ৯ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। এছাড়া ১১ কোটি মানুষ বিকলাঙ্গ হয়। সম্পদ ধ্বংস হয় ৭২০ বিলিয়ন ডলারের। পারমাণবিক বোমার আঘাতে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে যে ধ্বংসলীলা সংঘটিত হয়েছে, বিশ্বমানবতা তা কখনো ভুলবে না ৷

সমকালীন বিশ্ব ও শান্তি :

বর্তমান বিশ্বের যত জায়গায় অশান্তি ও অরাজকতা রয়েছে সবকিছুর পেছনে কলকাঠি নাড়ছে ব্রিটেন, আমেরিকা, ফ্রান্স ও রাশিয়া। বিশ্ব মানচিত্রে চোখ বুলালেই দেখতে পাই, ইসরাঈল নামক এক জগদ্দল পাথর ফিলিস্তিনি জনগণ তথা গোটা আরব সমাজকে গ্রাস করতে চলেছে। কাশ্মীরে চলছে নিরীহ ও স্বাধীনতাকামী মুসলমানদের ওপর আধিপত্যবাদী ভারতীয় পেটুয়া বাহিনীর নির্যাতন। জায়ার, চেচনিয়া, ইরাক, ইরানসহ বিভিন্ন দেশে বেজে উঠেছে যুদ্ধের দামামা। তাই এখন মানবতার একান্ত আরাধ্য যুদ্ধ নয় শান্তি ।

যুদ্ধ শান্তির পথে অন্তরায় :

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ববিবেক শান্তির অন্বেষায় জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু জাতিসংঘ শান্তি প্রতিষ্ঠায় পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। সাম্প্রতিক ইরান যুদ্ধ তার জ্বলন্ত উদাহরণ। তাই দেখা যাচ্ছে, যুদ্ধ শান্তির পথে অন্তরায় ।

দেখুন এটি : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা-ষষ্ঠ,৭ম, ৮ম, ৯ম ও ১০ম শ্রেণি-PDF

শান্তির বাণী নীরবে কাঁদে :

মানব মনের একান্ত চাওয়া শান্তির বাণী নীরবে কাঁদে। বিশ্বের পরাশক্তিগুলো অঢেল সম্পদ ব্যয় করে সুসজ্জিত করে রেখেছে তাদের সেনাবাহিনী, তৈরি করছে নতুন নতুন মারণাস্ত্র । যে কোনো মুহূর্তে এরা পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিতে পারে ।

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা :

আজকের বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলো তাদের অস্ত্রের ঝনঝনানিতে বিশ্ব মানবতাকে প্রকম্পিত করে তুলছে। যে কোনো মুহূর্তে কোনো একটি কারণে বিশ্বে তৃতীয় আরেকটি যুদ্ধ বাঁধিয়ে সমগ্র বিশ্ব ধ্বংস করে দিতে পারে তারা ৷

যুদ্ধ কেন শেষ হয় না :

যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ তথা জাতিসংঘ গঠিত হয়েছে। অস্ত্র সীমিতকরণ করতে অনেক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। কিন্তু তারপরও বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের হাহাকার কেন? মূলত যুদ্ধের আশঙ্কা শেষ না হওয়ার কারণ হলো, কেউ কাউকে মেনে নিতে পারে না এবং সর্বোপরি আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে অন্য দেশের সম্পদ হরণের লোভ ।

বিশ্ববাসীর শান্তির প্রত্যাশা :

শান্তি মানুষের চিরদিনের কাম্য। তাই মানুষ শান্তি চায় । মানুষ সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে একে অপরের পাশে দাঁড়াতে চায়। পৃথিবীর শান্তিকামী ও বিবেকবান মানুষ যুদ্ধকে সমূলে উৎপাটন করে শান্তির পতাকা উড়াতে বদ্ধপরিকর।

দেখুন এটি : রচনা : বাংলা সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ

শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের করণীয় :

বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আমাদের আরো সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যুদ্ধ প্রস্তুতির জন্য যে বিশাল অর্থ ব্যয় করা হয়, তা ব্যয় করতে হবে মানবতার কল্যাণে। পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে চাই বৃহৎ শক্তিবর্গের শুভ বুদ্ধি, শান্তির পক্ষে গণসচেতনতা, অস্ত্র উৎপাদন বন্ধ ও মানুষের প্রতি মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা ।

উপসংহার :

শান্তিই বিশ্বকে সমৃদ্ধিতে ভরে দিতে পারে । যুদ্ধের ফল কখনো শুভ হতে পারে না। এজন্যই শান্তি সকলের কাম্য হওয়া উচিত। একমাত্র যুদ্ধমুক্ত বিশ্বই পারে সকল অশান্তি তথা বিভীষিকা দূর করতে। তাই যুদ্ধ বন্ধ করতে আমাদের সকলকে আরো সচেতন হতে হবে; এক দেশের সাথে অন্য দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো বাড়াতে হবে। সর্বোপরি মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ববোধ বাড়াতে হবে। শান্তির মঙ্গল আলোকচ্ছটা বিস্তৃত হোক পৃথিবীর চারদিকে । প্রতিটি মানুষের অঙ্গীকার হোক- যুদ্ধ নয় শান্তি চাই ।

Leave a Comment