বৃটিশ প্রাণ রসায়নবিদ হ্যান্স এ. ক্রেবস সর্বপ্রথম চক্রটি আবিষ্কার করেন বলেই তাঁর নামানুসারে চক্রটিকে ক্রেবস চক্র বলে। এ চক্রের প্রথম উৎপাদিত বস্ত্র সাইট্রিক এসিড এ কারণে চক্রটি সাইট্রিক এসিড চক্র (Citric acid cycle) নামেও পরিচিত।
আবার এ চক্রে উৎপন্ন কয়েকটি এসিডে তনটি কার্বক্সিল গ্রুপ (COOH) থাকার কারণে একে ট্রাইকার্বক্সিলিক এসিড চক্র (Tricarboxylic acid cycle) (TCA চক্র) ও বলে। চক্রটি সম্পূর্ণরূপে মাইটোকন্ড্রিয়ার অভ্যন্তরে সংঘটিত হয়।
ক্রেবস চক্র কাকে বলে ?
সংজ্ঞা : ক্রেবস চক্রে 2 কার্বনবিশিষ্ট অ্যাসিটাইল Co-A জারিত হয়ে দুই অনু CO2 উৎপন্ন করে। ইংরেজি প্রাণ রসায়নবিদ হ্যান্স এ. ক্রেবস(Sir Hans Krebs) এই চক্রটি আবিষ্কার করেন বলে এটিকে ক্রেবস চক্র বলা হয় ।
ক্রেবস চক্রের বিক্রিয়াগুলি নিম্নরূপ
১। সাইট্রিক সিন্থেটেজ নামক এনজাইমের কার্যকারিতায় অ্যাসিটাইল কো-এনজাইম এ এক অণু পানি ও অক্সালো অ্যাসিটিক এসিডের সাথে মিলিত হয়ে সাইট্রিক এসিড ও কো-এনজাইম-এ তৈরি করে।
২। অ্যাকোনাইটেজ এনজাইমের কার্যকারিতায় সাইট্রিক এসিড থেকে এক অণু পানি বিয়োজিত হয়ে সিস- অ্যাকোনাইটিক এসিড উৎপন্ন হয়।
৩। অ্যাকোনাইটেজ এনজাইমের প্রভাবে সিস-অ্যাকোনাইটিক এসিড এক অণু পানি গ্রহণ করে। ফলে আইসোসাইট্রিক এসিড উৎপন্ন হয়।
৪। আইসোসাইট্রিক ডিহাইড্রোজিনেজ নামক এনজাইম এবং NAD-এর প্রভাবে আইসোসাইট্রিক এসিড জারিত হয়ে অক্সালো সাকসিনিক এসিড উৎপন্ন করে । NAD বিজারিত হয়ে NADH + H+ তে পরিণত হয়।
৫। ডিকার্বক্সিলেজ এনজাইমের প্রভাবে অক্সালো সাকসিনিক এসিড থেকে এক অণু CO2 এবং এক অণু আলফা কিটোগ্লুটারিক এসিড উৎপন্ন হয়।
৬। ডিহাইড্রোজিনেজ এনজাইমের কার্যকারিতায় আলফা কিটোগ্লুটারিক এসিড, কো-এনজাইম এবং NAD বিক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করে ফলে এক অণু CO2, NADH + H+ এবং সাকসিনাইল কো-এ উৎপন্ন হয়।
৭। সাকসিনিল থায়োকাইনেজ এনজাইমের কার্যকারিতায় সাকসিনিল কো-এ, গুয়ানোসিন ডাই ফসফেট এবং একটি অজৈব ফসফেট বিক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করে। ফলে কো-এনজাইম-এ, GTP এবং সাকসিনিক এসিড উৎপন্ন হয় ।
৮। FAD-এর উপস্থিতিতে এবং সাকসিনিক এসিড ডিহাইড্রোজিনেজ এনজাইমের প্রভাবে সাকসিনিক এসিড ফিউমারিক এসিডে পরিণত হয় এবং FADH2, উৎপন্ন হয়।
৯। ফিউমারেজ এনজাইমের প্রভাবে ফিউমারিক এসিড এক অণু পানি গ্রহণ করে ম্যালিক এসিড উৎপন্ন হয়।
১০। ডিহাইড্রোজিনেজ এনজাইমের কার্যকারিতায় এবং NAD- এর উপস্থিতিতে ম্যালিক এসিড অক্সালোঅ্যাসিটিক এসিডে পরিণত হয় এবং NADH + H+ উৎপন্ন হয় ।
ক্রেবস চক্রের ফলে নিট উৎপাদন-৪ অণু CO2, ৬ অণু NADH + H+, ২ অণু FADH2, এবং ২ অণু GTP.
ক্রেবস চক্রের গুরুত্ব
১। শক্তি উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র হলো ক্রেবস চক্র । এই চক্রের মাধ্যমে জীবে শ্বসনে উৎপাদিত অধিকাংশই শক্তিই পাওয়া যায়। এ শক্তি বিভিন্ন বিপাকীয় কাজে (অর্থাৎ খনিজ লবণ শোষণ, পানি শোষণ, বৃদ্ধি, পরিবহন, পুষ্পায়ন, চলন ইত্যাদি কাজে) ব্যবহৃত হয়।
২। এ চক্রে উৎপাদিত a-কিটোগ্লুটারিক এসিড ও অক্সালো অ্যাসিটিক এসিড নাইট্রোজেন বিপাকের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করে।
৩। ক্রেবস চক্র নাইট্রোজেন বিপাকে বিশেষত অ্যামিনো এসিড উৎপাদনের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কেননা অ্যামিনো এসিড প্রস্তুতির জন্য অপরিহার্য যৌগ অক্সালো অ্যাসিটিক এসিড, আলফা-কিটোগ্লুটারিক এসিড ইত্যাদি ক্রেবস চক্রেই উৎপন্ন হয় ।
৪। ক্লোরোফিল, সাইটোক্রোম, ফাইকোবিলিন, হিমোগ্লোবিন ইত্যাদি তৈরির উৎস সাক্সিনিল কো-এ, ক্রেবস চক্রের অন্যতম যৌগ ।
৫। ক্রেবস-চক্রে উৎপন্ন বিভিন্ন জৈব এসিড সাধারণভাবে উদ্ভিদের এবং প্রাণীদের জৈব এসিড বিপাকে অংশগ্রহণ করে।