অক্সিজেনের উপস্থিতিতে যে শ্বসন চলে সেটিই সবাত শ্বসন। এটি উদ্ভিদ ও প্রাণীর স্বাভাবিক শ্বসন প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় শর্করা ভেঙ্গে কার্বন ডাই-অক্সাইড, পানি ও শক্তি উৎপন্ন হয় ।
সবাত শ্বসন কাকে বলে ?
সংজ্ঞা : যে প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন এর প্রয়োজন হয় এবং শ্বসনিক বস্তু সম্পূর্ণরূপে জারিত হয়ে কার্বন ডাইঅক্সাইড, পানি ও জৈবনিক শক্তি এবং তাপশক্তি উৎপন্ন হয় তাকে সবাত শ্বসন বলে ।
সবাত শ্বসনের ধাপ কয়টি ও কি কি :
সবাত শ্বসন প্রক্রিয়াকে সাধারণত চারটি ধাপে আলোচনা করা হয়। ধাপগুলো হচ্ছে-
১। গ্লাইকোলাইসিস : যে প্রক্রিয়ায় এক অণু গ্লুকোজ কোষের সাইটোপ্লাজম কতগুলো উৎসেচকের সাহায্যে বিশ্লেষিত হয়ে ওই অণু পাইরুভিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে, তাকে গ্লাইকোলাইসিস বলে । এ ধাপে এক অণু ৬ কার্বন বিশিষ্ট গ্লুকোজ ৯টি পর্যায়ক্রমিক বিক্রিয়া শেষে ৩ কার্বন বিশিষ্ট দুই অণু পাইরুভিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে। এ ধাপে চার অণু ATP (দুই অণু খরচ হয়ে যায়) এবং দুই অণু NADH2 উৎপন্ন হয় ।
২। অ্যাসিটাইল কো-এ সৃষ্টি : গ্লাইকোলাইসিস পর্যায়ে সৃষ্ট প্রতি অণু পাইরুভিক অ্যাসিড ৪টি ধারাবাহিক বিক্রিয়া শেষে, দুই কার্বন বিশিষ্ট অ্যাসিটাইল কো-এ, এক অণু CO2 এবং এক অণু NADH2 উৎপন্ন করে। অর্থাৎ দুই অণু পাইরুভিক অ্যাসিড থেকে দুই অণু অ্যাসিটাইল কো-এ, দুই অণু CO2 এবং দুই অণু NADH2 উৎপন্ন হয় ।
৩। ক্রেবস্ চক্র : প্রতি অণু অ্যাসিটাইল কো-এ ক্রেবস্ চক্রে প্রবেশ করে এবং ১০টি পর্যায়ক্রমিক বিক্রিয়া শেষে দুই অণু CO2, তিন অণু NADH2, এক অণু FADH2 এবং এক অণু GTP (ATP) তৈরি করে। অর্থাৎ দুই অণু অ্যাসিটাইল কো- এ থেকে চার অণু CO2, ছয় অণু NADH2, দুই অণু FADH2 এবং দুই অণু ATP (GTP) উৎপন্ন হয়।
৪। ইলেকট্রন প্রবাহতন্ত্র : প্রথম তিন ধাপে উৎপন্ন NADH2, FADH2 জারিত হয়ে ATP ও পানি উৎপন্ন করে । সবাত শ্বসন প্রক্রিয়ায় এক অণু গ্লুকোজ সম্পূর্ণভাবে জারিত হয়ে সর্বমোট ছয় অণু CO2, ছয় অণু পানি এবং ৩৮ টি ATP ( ৬৮৬ কিলোক্যালরি শক্তি) উৎপন্ন করে। প্রথম দুইটি ধাপ কোষের সাইটোপ্লাজমে সম্পন্ন হয়। পরের ধাপ মাইটোকন্ড্রিয়াতে সম্পন্ন হয় । শ্বসনের প্রতিটি বিক্রিয়া বিশেষ বিশেষ এনজাইম-এর সাহায্যে সম্পন্ন হয়।
সবাত শ্বসনের বিক্রিয়া :
C6H12O6 + 6O2 → 6CO2 + 6H2O + শক্তি (ATP)
সবাত শ্বসনের গুরুত্ব :
শ্বসন বলতে আমরা সাধারণত সবাত শ্বসনকেই বুঝি। সমস্ত জীবই সকল সময় শ্বসন চালায়। সুতরাং শ্বসন জীবের প্রধান কর্ম। নিম্নে সবাত শ্বসনের গুরুত্ব বর্ণনা করা হলো –
১। সবাত শ্বসনের প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট শক্তি জীবের সকল প্রকার ক্রিয়া – বিক্রিয়া ও কাজ-কর্ম সম্পাদন হয়।
২। উদ্ভিদে খনিজ লবণ পরিশোষণে এ প্রক্রিয়া সাহায্য করে থাকে, যা পরোক্ষ পদ্ধতিতে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও অন্যান্য জৈবিক প্রক্রিয়া চালু রাখে ।
৩। শ্বসন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন উপ-ক্ষার ও জৈব অ্যাসিডও সৃষ্টি হয় যা অন্যান্য জৈবিক কার্যক্রমের জন্য আবশ্যক । শ্বসনিক শক্তি কোষ বিভাজনেও সহায়তা করে থাকে।
৪। সালোকসংশ্লেষণের সময় খাদ্যের মধ্যে যে সৌরশক্তি আবদ্ধ থাকে তা এই শ্বসনের ফলে তাপশক্তি রূপে মুক্ত হয়। এই শক্তির দ্বারা জীবেরা বিভিন্ন ক্রিয়াগুলো পরিচালনা করে। যেমন-বৃদ্ধি, চলন, গমন, রেচন, জনন ইত্যাদি ।
৫। একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের প্রতিদিন প্রায় 2500-3000 K. Cal তাপশক্তির প্রয়োজন হয়, তা খাদ্যস্থিত স্থৈতিক শক্তি থেকেই শ্বসন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়।
৬। জোনাকি, ইলেকট্রিক-রে প্রভৃতি মাছের দেহে যথাক্রমে যে আলোক ও বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় এটিও শ্বসনের উৎপন্ন শক্তির রূপান্তর ।
৭। শ্বসন ক্রিয়ায় উৎপন্ন তাপে পক্ষীশ্রেণী ও স্তন্যপায়ী প্রাণিদেহের তাপমাত্রা নির্দিষ্ট থাকে।
৮। বায়ুতে O2 ও CO2-এর স্বাভাবিক পরিমাণ যথাক্রমে 20.60% ও 0.30% । শ্বসনের সময় জীব পরিবেশ থেকে O2 গ্রহণ করে এবং CO2 ত্যাগ করে।
আবার, সালোকসংশ্লেষণের সময় উদ্ভিদ CO2 গ্রহণ করে এবং O2 ত্যাগ করে। এই প্রক্রিয়া ক্রমাগত চলতে থাকলে বায়ুমণ্ডলে CO2 এর অভাব এবং অক্সিজেন বৃদ্ধি পেত, কিন্তু শ্বসনের ফলে বায়ুমণ্ডলে এই CO2, এবং O2-এর সমতা বজায় থাকে । এইভাবে পরিবেশে O2 ও CO2-এর ভারসাম্য বজায় থাকে।
সবাত শ্বসনের বৈশিষ্ট্য
i. অক্সিজেন দরকার হয় ।
ii. পানি উৎপন্ন হয় এবং অধিক CO2 উৎপন্ন হয় ।
iii. পাইরুভিক এসিড সম্পূর্ণ জারিত হয়ে CO2 ও H2O উৎপন্ন করে ।
iv. উচ্চ শ্রেণীর উদ্ভিদে ঘটে ।