শ্বসন প্রক্রিয়ার প্রভাবকসমূহ :
শ্বসন একটি জৈবরাসায়নিক প্রক্রিয়া। অন্যান্য জৈবরাসায়নিক প্রক্রিয়ার মতো এ প্রক্রিয়াও কিছু বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ প্রভাবকে নিয়ন্ত্রিত হয় ।
বাহ্যিক প্রভাবকসমূহ : উদ্ভিদ দেহের বাইরের যে সমস্ত প্রভাবক শ্বসন ক্রিয়ার উপর প্রভাব বিস্তার করে সেগুলোকে বাহ্যিক প্রভাবক বলে ।
বাহ্যিক প্রভাবকসমূহ নিম্নরূপ :
অক্সিজেনের প্রাপ্যতা : অক্সিজেনের পরিমাণ খুব কম হলে সবাত ও অবাত উভয় প্রকার শ্বসন চলে। অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়লে অবাত শ্বসনের হার কমে এবং সবাত শ্বসনের হার বাড়ে।
কার্বন ডাইঅক্সাইডের ঘনত্ব : কোন কারণে বায়ুমণ্ডলে CO2-এর পরিমাণ বাড়লে শ্বসনের হার কম হয় ।
তাপমাত্রা : শ্বসনের বিক্রিয়াসমূহে বিভিন্ন প্রকার এনজাইম অংশ গ্রহণ করে। এনজাইমসমূহের কার্যকারিতা তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল । তাই তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধি শ্বসনের হারকেও নিয়ন্ত্রিত করে ।
পানি : এনজাইমের সক্রিয় কার্যকারিতার জন্য পানি প্রয়োজন। কাজেই নির্দিষ্ট পরিমাণ পানির উপস্থিতিতে শ্বসনের হার বাড়ে কিন্তু অতীব কম বা অতিরিক্ত পানির উপস্থিতিতে শ্বসন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
আলো : আলো পরোক্ষভাবে শ্বসনের হারকে নিয়ন্ত্রণ করে। আলোর তীব্রতা বেশি হলে শ্বসন দ্রুত হয়। আবার মৃদু হলে শ্বসনের হার কিছুটা কমে যায়।
রোগ ও ক্ষত : রোগাক্রান্ত উদ্ভিদ এবং আঘাতপ্রাপ্ত কলায় শ্বসনের হার বৃদ্ধি পায়।
অজৈব লবণ : কোনো কোনো ক্ষেত্রে অজৈব লবণ শ্বসন হার বৃদ্ধি করে।
যন্ত্রিক প্রভাব : কোনো পাতাকে হাত দিয়ে ঘষলে কিংবা শাখাকে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে নুইয়ে দিলে শ্বসনের হার বেড়ে যায়।
অভ্যন্তরীণ প্রভাবকসমূহ :
উদ্ভিদ দেহের অভ্যন্তরস্থ যেসব প্রভাবক শ্বসন হারকে প্রভাবিত করে সেগুলিকে শ্বসনের অভ্যন্তরীণ প্রভাবক বলে । অভ্যন্তরীণ প্রভাবক সমূহ নিম্নরূপ :
প্রোটোপ্লাজম : প্রোটোপ্লাজম জীবনের ভৌতভিত্তি। তাই শ্বসন হার প্রোটোপ্লাজমের উপর নির্ভরশীল। সজীব/নবীন কোষ ও ভাজক কলার কোষে প্রোটোপ্লাজমের পরিমাণ বেশি থাকে বলে শ্বসনের হার বেশি হয়।
শ্বসনিক বস্তু : শ্বসনিক বস্তুর পরিমাণ বাড়লে শ্বসনের হারও বেড়ে যায় ।
এনজাইম : শ্বসন প্রক্রিয়ায় রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলোতে এনজাইম অংশগ্রহণ করে। এনজাইমের উপস্থিতির উপরই সম্পূর্ণ শ্বসন প্রক্রিয়া নির্ভরশীল।
পানি : কোষে পানির পরিমাণ বেশি হলে দ্রবীভূত শ্বসনিক বস্তুর পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং এনজাইমের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় শ্বসন প্রক্রিয়াও দ্রুত হয়।
কোষের অভ্যন্তরে খনিজ : কোষমধ্যস্থ বিভিন্ন প্রকার লবণের উপস্থিতি শ্বসন প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করে ।