হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

গ্লাইকোলাইসিস কাকে বলে ? এর ধাপ সমূহ এবং গুরুত্ব

গ্লাইকোলাইসিসের অর্থ হলো গ্লুকোজের ভাঙ্গন। জার্মান বিজ্ঞানী Emden, Meyerhof এবং Parnas কর্তৃক গ্লাইকোলাইসিসের বিক্রিয়াগুলো আবিষ্কৃত হয়েছিল বলে তাদের নামানুসারে গ্লাইকোলাইসিসকে সংক্ষেপে EMP পথও বলে।

গ্লাইকোলাইসিসের বিক্রিয়াসমূহ সাইটোপ্লাজমে সংঘটিত হয়। এসব বিক্রিয়ার জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় না, তবে অক্সিজেনের উপস্থিতিতেও এ প্রক্রিয়া চলতে পারে। সবাত শ্বসন ও অবাত শ্বসনের প্রাথমিক ধাপ হলো গ্লাইকোলাইসিস।

গ্লাইকোলাইসিস কাকে বলে ?

গ্লাইকোলাইসিস (Glycolysis) : সজীব কোষের সাইটোপ্লাজমে অনুষ্ঠিত যে প্রক্রিয়ায় এক অণু গ্লুকোজ (C6 H12, O6) বিভিন্ন উৎসেচকের সাহায্যে ভেঙ্গে দুই অণু পাইরুভিক অ্যাসিড [C3,H4, O3] উৎপন্ন করে তাকে গ্লাইকোলাইসিস বলে ।

এ প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজ আংশিকভাবে জারিত হয়ে অপেক্ষাকৃত সরল অন্তবর্তী যৌগে পরিণত হয়। এ ভাঙ্গন পদ্ধতি O2 এর উপস্থিতিতে বা অনুপস্থিতিতে হতে পারে।

গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়া

গ্লাইকোলাইসিস এর গুরুত্ব :

i. গ্লাইকোলাইসিস হচ্ছে সকল জীবকোষে গ্লুকোজ জারণের একটি পর্যায় এবং বিক্রিয়াগুলো সকল জীবে একই রকম।

ii. গ্লাইকোলাইসিসের ফলে উৎপন্ন দুই অণু পাইরুভিক এসিড ক্রেবস চক্রের সাবস্ট্রেট হিসেবে ব্যবহৃত হয় ।

iii. গ্লাইকোলাইসিসের গ্লুকোজ থেকে পাইরুভিক এসিড পর্যন্ত উৎপন্ন একাধিক অন্তর্বর্তী যৌগগুলো জীবের বিভিন্ন বিপাকীয় কাজে ব্যবহৃত হয়।

iv. গ্লাইকোলাইসিসের ফলে ৪ গুণ ATP উৎপন্ন হয় এবং অবাত শ্বসনকারী জীবদের ক্ষেত্রে এখানে উৎপন্ন ২ অণু NADH, অন্যান্য বিপাকীয় কাজে ব্যবহৃত হয়।

v. অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে অবাত প্রক্রিয়ায় গ্লাইকোলাইসিস সম্পন্ন হতে পারে বিধায় অনেক জীবে গ্লুকোজ ফার্মেন্টেশনে ব্যবহৃত হয়।

সুতরাং জীবকোষে শক্তি উৎপাদনের গুরুত্বটি বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, গ্লাইকোলাইসিস কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

গ্লাইকোলাইসিস এর ধাপসমূহ

১। ম্যাগনেসিয়াম ও ATP-এর উপস্থিতিতে এবং হেক্সোকাইনেজ এনজাইমের কার্যকারিতায় গ্লুকোজ ATP থেকে একটি ফসফেট গ্রুপ গ্রহণ করে গ্লুকোজ ৬ ফসফেটে পরিণত হয় এবং ATP ফসফেট হারিয়ে ADP-তে রূপান্ত রিত হয় ।

২। গ্লুকোজ ৬-ফসফেট, ফসফোগ্লুকোআইসোমারেজ এনজাইমের কার্যকারিতায় ফ্রুক্টোজ-৬ ফসফেটে রূপান্তরিত হয়।

৩। ফসফোফ্রুক্টোকাইনেজ এনজাইমের কার্যকারিতায় ফ্রুক্টোজ-৬ ফসফেট ATP থেকে একটি ফসফেট গ্রহণ করে ফ্রুক্টোজ ১.৬ ডাইফসফেটে পরিণত হয় এবং ADP উৎপন্ন হয় ।

৪। ফুকোজ ১.৬ ডাইফসফেট অ্যালডোলেজ এনজাইমের কার্যকারিতায় ভেঙ্গে গিয়ে এক অণু ৩ – ফসফোগ্লিসারালডিহাইড’ এবং এক অণু ডাই হাইড্রক্সিঅ্যাসিটোন ফসফেট উৎপন্ন হয়। আইসোমারেজ এনজাইমের কার্যকারিতায় ৩-ফসফোগ্লিসারালডিহাইড ও ডাই হাইড্রক্সিঅ্যাসিটোন ফসফেট একটি থেকে অপরটিতে পরিণত হতে পারে।

৫। ফসফোগ্নিসারালডিহাইড ডিহাইড্রোজিনেজ এনজাইমের কার্যকারিতায় NAD ও অজৈব ফসফেটের উপস্থিতিতে ৩-ফসফোগ্লিসারালডিহাইড এক অণু অজৈব ফসফেট গ্রহণ করে ১.৩ ডাইফসফোগ্লিসারিক এসিডে পরিণত হয় এবং NAD জারিত হয়ে NADH + H+ উৎপন্ন হয় ।

৬। ফসফোগ্লিসারিক এসিড কাইনেজ এনজাইমের কার্যকারিতায় ১.৩ ডাই-ফসফোগ্লিসারিক এসিড একটি ফসফেট গ্রুপ হারিয়ে ৩-ফসফোগ্লিসারিক এসিডে পরিণত হয় এবং ATP উৎপন্ন হয় ।

৭। ফসফোগ্লিসারোমিউটেজ এনজাইমের কার্যকারিতায় ৩-ফসফোগ্লিসারিক এসিড, ২-ফসফোগ্লিসারিক এসিডে রূপান্তরিত হয় ।

৮। ইনোলেজ এনজাইমের কার্যকারিতায় ২-ফসফোগ্লিসারিক এসিড ফসফোইনোল পাইরুভিক এসিড ও এক অণু পানি উৎপন্ন হয়।

৯। পাইরুভিক এসিড কাইনেজ এনজাইমের কার্যকারিতায় ২-ফসফোইনোল পাইরুভিক এসিড ফসফেট গ্রুপ ADP-এর কাছে স্থানান্তর করে পাইরুভিক এসিডে পরিণত হয় এবং ATP উৎপন্ন হয়।

Leave a Comment

error: Content is protected !!