হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

সালোকসংশ্লেষণ ও শ্বসনের মধ্যে পার্থক্য, সম্পর্ক,গুরুত্ব

সালোকসংশ্লেষণ ও শ্বসনের মধ্যে সম্পর্ক কী?

সালোকসংশ্লেষণ ও শ্বসন জীবদেহের দুইটি প্রধান জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া। এই দুইটি প্রক্রিয়ার মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ সৌরশক্তিকে খাদ্যের মধ্যে আবদ্ধ করে, শ্বসনের মাধ্যমে জীবদেহ সেই শক্তিকে বিভিন্ন জৈবিক কাজের জন্য মুক্ত করে।

সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় CO2 গৃহীত হয় এবং O2 নির্গত হয়, আবার শ্বসন প্রক্রিয়ায় O2 গৃহীত হয় এবং CO2, নির্গত হয়। এভাবে এ দুটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে O2 এবং CO2 গ্যাসের সঠিক অনুপাত রক্ষিত হয়।

সালোকসংশ্লেষণ ও শ্বসনের মধ্যে পার্থক্য :

সালোকসংশ্লেষণ শ্বসন
১. এ প্রক্রিয়ায় আলোকশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত হয় । ১. এ প্রক্রিয়ায় রাসায়নিক স্থির শক্তি গতি শক্তিতে পরিণত হয় ।
২. শক্তি সঞ্চিত হয় । ২. শক্তি নির্গত হয় ।
৩. যে সব কোষে ক্লোরোপ্লাষ্ট আছে কেবল সে সব কোষেই এ প্রক্রিয়া সংগঠিত হয় । ৩. সব সজীব কোষেই এ প্রক্রিয়া চলতে থাকে ।
৪. সূর্যালোকের উপস্থিতিতে এ প্রক্রিয়া চলে থাকে । ৪. দিবা-রাত্রি সব সময়ই এ প্রক্রিয়া চলতে থাকে ।
৫. পানি ও কার্বন-ডাই অক্সাইড প্রধান উপাদান। ৫. জটিল খাদ্যদ্রব্য বিশেষ করে শর্করা প্রধান উপাদান ।
৬. শর্করা ও অক্সিজেন উৎপন্ন হয় । ৬. প্রধানত পানি ও কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয় তবে কার্বন ড্রাই-অক্সাইড এবং অনেকসময় শুধু ল্যাকটিক এসিড উৎপন্ন হয় ।
৭. উদ্ভিদ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে । ৭. উদ্ভিদ অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে (বায়বীয় শ্বসনে) ।
৮. এটি একটি উপচিতি প্রক্রিয়া এবং এ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের ওজন বাড়ে । ৮. এটি একটি অপচিতি প্রক্রিয়া এবং এ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের ওজন কমে ।
৯. পানি গৃহীত হয় । ৯. পানি নির্গত হয় ৷
১০.এ প্রক্রিয়ার বিক্রিয়াগুলো ক্লোরোপ্লাস্টে ঘটে থাকে । ১০.এ প্রক্রিয়ার বিক্রিয়াগুলি প্রাথমিক পর্যায়ে সাইটোপ্লাজমে এবং শেষপর্যায়ে মাইটোকন্ড্রিয়ায় ঘটে থাকে ।
১১. কেবল সবুজ উদ্ভিদ, নীলাভ সবুজ শৈবাল এবং কিছু ব্যাকটেরিয়াতে এ প্রক্রিয়া চলে । ১১.সব উদ্ভিদ এবং প্রাণীতে এ প্রক্রিয়া চলে ।

মানব সভ্যতায় সালোকসংশ্লেষণের গুরুত্ব :

মানব সভ্যতার অগ্রগতি অনেকাংশে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সালোকসংশ্লেষণের ওপর নির্ভরশীল । তুলা, রেয়ন, ফিল্ম, সেলেফোন কাগজ প্রভৃতি সেলুলোজ [এক প্রকার শর্করা] থেকে তৈরি হয়। কাগজ শিল্পে ব্যবহৃত বাঁশ বা কাঠ প্রকৃতপক্ষে সেলুলোজ থেকে উৎপন্ন হয়। সেলুলোজের মূল উৎস সালোকসংশ্লেষণ। পদ, রজন, রাবার থেকে উৎপন্ন সামগ্রী মানব সভ্যতায় বিভিন্ন রূপে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এগুলোও পরোক্ষভাবে সালোকসংশ্লেষণজাত উপাদান। মরফিন, বেলেডোনা, কুইনাইন, রেসারপিন ইত্যাদি ওষুধজাত সামগ্রীর মূল উৎসও হলো সালোকসংশ্লেষণ। সভ্য জগতের উল্লেখযোগ্য দুটি অতি প্রয়োজনীয় বস্তু কয়লা ও পেট্রোল নিঃসন্দেহে সালোকসংশ্লেষণেরই অমূল্য দান । সুতরাং বর্তমানে সালোকসংশ্লেষণ ছাড়া মানব সভ্যতা কল্পনা করা যায় না।

শ্বসনের গুরুত্ব :

i. শক্তি উৎপাদন : প্রতিনিয়ত জীবের বিভিন্ন বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় যে শক্তির প্রয়োজন পড়ে, শ্বসন প্রক্রিয়ায় কোষস্থ সঞ্চিত খাদ্য জারণের মাধ্যমে সে শক্তি উৎপন্ন হয়।

ii. গাঠনিক উপাদান উৎপাদন : শ্বসন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন বিভিন্ন মধ্যবর্তী পদার্থ ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় গাঠনিক উপাদান দেহে তৈরি করা হয়। এভাবে সাকসিনাইল কো-এ থেকে ক্লোরোফিল, সাইটোক্রোম প্রভৃতি এবং অক্সালো এসিটিক এসিড থেকে কোষে অ্যাসপারটিক এসিড উৎপন্ন হয়।

iii. কোষ বিভাজন ও বৃদ্ধি : কোষ বিভাজন ও দৈহিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি শ্বসন প্রক্রিয়া থেকে পাওয়া যায় ।

iv. বেকারি ও মদশিল্পে : বেকারিতে পাউরুটি, কেক ও চোলাই কারখানায় মদ, বিয়ার প্রভৃতি উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন প্রজাতির অণুজীবের শ্বসন বৈশিষ্ট্য কাজে লাগানো হয় ৷

v. চিকিৎসা উপকরণ উৎপাদন : অণুজীব অবাত শ্বসনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের উপজাত পদার্থ যেমন : জৈব এসিড, অ্যালকোহল, উপক্ষার স্টেরয়েড, ভিটামিন, হরমোন, এনজাইম, অ্যান্টিবায়োটিক প্রভৃতি উৎপন্ন করে। এসব পদার্থ রোগ নিরাময়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment