হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

ব্রায়োফাইটা ও টেরিডোফাইটা- সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, পার্থক্য

ভ্রূণ উৎপাদনকারী উদ্ভিদসমূহ উচ্চতর অপুষ্পক উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। সকল উচ্চতর অপুষ্পক উদ্ভিদের গঠন প্রকৃতি ও জীবনচক্র এক রকম নয়। জীবনচক্রে প্রাধান্য বিস্তারকারী পর্যায়ের উপর ভিত্তি করে এদেরকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : ব্রায়োফাইটা ও টেরিডোফাইটা ।

গ্রিক শব্দ Bryon অর্থ মস; Phyton অর্থ উদ্ভিদ। সুতরাং Bryophyta অর্থ মস জাতীয় উদ্ভিদ। এদের প্রায় ৯৫০টি গণ এবং ২৪,০০০ প্রজাতি আছে। এরা প্রধানত স্থলজ (e.g. Semibarbula, Marchantia, Pellia ইত্যাদি); তবে কিছু প্রজাতি জলজ (e.g. Riccia fluitans, Ricciocarpus natans ইত্যাদি)। এদের তিনটি শ্রেণি রয়েছে। যথা : (i) Hepaticae, (ii) Anthocerotae & ( iii) Musci.

আরও শিখুন : মস ও ফার্ন : সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য এবং পার্থক্য

ব্রায়োফাইটা (Bryophyta)

ব্রায়োফাইটা কাকে বলে ?

যেসব ভ্রূণ উৎপাদনকারী অপুষ্পক উদ্ভিদ পরিবহন কলাবিহীন, থ্যালয়েড অথবা কাণ্ড ও পাতায় বিভক্ত ও রাইজয়েডযুক্ত এবং বন্ধ্যাকোষের আবরণযুক্ত বহুকোষী জননাঙ্গ ধারণ করে, সেগুলো ব্রায়োফাইটা (Bryophyta) বলা হয়।

ব্রায়োফাইটার বৈশিষ্ট্য :

১। এদের প্রধান দেহটি গ্যামেটোফাইটিক (Gametophytic) এবং বহুকোষী ।

২। এদের গ্যামেটোফাইটিক দেহটি স্বাধীন এবং স্বভোজী।

৩। এদের স্পোরোফাইট পুষ্টির জন্য গ্যামোটোফাইটের উপর নির্ভরশীল।

৪। পরিণত এবং পরিপুষ্ট স্পোরোফাইট ক্যাপসুল ও পদ কিংবা ক্যাপসুল, পদ ও সিটায় বিভক্ত। তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে; যেমন- Corsinia-তে সিটা এবং Riccia-তে ফুট ও সিটা উভয়ই অনুপস্থিত।

৫। এরা অপুষ্পক, ফলবিহীন এবং মূলবিহীন ।

৬। গ্যামেটোফাইটকে মূল, কাণ্ড এবং পাতায় বিভক্ত করা যায় না; তবে কিছু কিছু উন্নত শ্রেণির গ্যামেটোফাইটকে কাণ্ড এবং পাতায় ভাগ করা যায় ।

৭। এদের মূলের পরিবর্তে রাইজয়েড বিদ্যমান ।

৮। যৌন জননাঙ্গ বহুকোষী এবং তার চতুর্দিকে বন্ধ্যাকোষের আবরণ থাকে ।

৯। এদের ভ্রূণ সৃষ্টি হয়।

১০। এদের যৌন জনন উগ্যামাস (Oogamous) প্রকৃতির; অর্থাৎ ক্ষুদ্র ও সচল পুংগ্যামেট নিশ্চল ও বড় স্ত্রীগ্যামেটের সাথে মিলিত হয়।

১১। শুক্রাণু সচল, দ্বি-ফ্লাজেলাযুক্ত এবং চাবুকসদৃশ।

১২। নিষেকের জন্য জলীয় মাধ্যমের প্রয়োজন হয়।

১৩। স্পোরোফাইট Homosporous ধরনের অর্থাৎ একই ধরনের স্পোর উৎপন্ন করে।

আরও শিখুন : রিকসিয়া ও টেরিস – বৈশিষ্ট্য,পার্থক্য,আবাস ও অবস্থান

টেরিডোফাইটা (Pteridophyta)

Pteridophyta শব্দটি গ্রিক শব্দ Pteron হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। Pteron শব্দের অর্থ অঙ্গ বা ডানা। পক্ষল বশিষ্ট ফ্রন্ডের বা পাতার জন্য এদের নামকরণ করা হয়েছে Pteridophyta। ভাস্কুলার উদ্ভিদের মধ্যে এরা সর্বাপেক্ষা আদিম ও অনুন্নত।

টেরিডোফাইটা কাকে বলে ?

যেসব স্পোর উৎপাদনকারী অপুষ্পক উদ্ভিদে পরিবহন কলা থাকে, তাদেরকে টেরিডোফাইটা (Pteridophyta) বলে। এদেরকে Vascular cryptogam বলা হয়। উদ্ভিদ শ্রেণিবিন্যাসে মস ও সপুষ্পক উদ্ভিদের মধ্যবর্তী স্থানে এদের অবস্থান ।

টেরিডোফাইটা বৈশিষ্ট্য :

১। উদ্ভিদদেহ স্পোরোফাইটিক, সবুজ এবং স্বাবলম্বী ।

২। প্রায় সকল স্পোরোফাইটদেহ মূল, কাণ্ড এবং পাতায় বিভক্ত। তবে কিছু সদস্যে মূল অনুপস্থিত, সেক্ষেত্রে মূলের পরিবর্তে রাইজয়েড থাকে ।

৩। অধিকাংশ সদস্যে কাণ্ড রাইজোমে রূপান্তরিত হয় ।

৪। মূল ও কাণ্ডে শুধু অগ্রস্থ বৃদ্ধি ঘটে।

৫। এরা ক্ষুদ্র বর্ষজীবী (e.g. Azolla) থেকে শুরু করে বহুবর্ষজীবী বৃক্ষ (c.g. Angiopteris ) পর্যন্ত হতে পারে।

৬। এরা অধিকাংশই স্থলজ; কতিপয় সদস্য জলজ (e.g. Azolla, Salvinia) এবং দু-একটি পরাশ্রয়ী (e.g. Psilotum).

৭। উদ্ভিদ Homosporous অর্থাৎ সমরেণুপ্রসূ বা Heterosporous অর্থাৎ অসমরেণুপ্রসূ উভয় প্রকার হয় ।

৮। অধিকাংশ সদস্যেই সুনির্দিষ্ট পাতা থাকে এবং পাতাই প্রধান সালোকসংশ্লেষণকারী অঙ্গ ।

৯। স্পোরোফাইটিক উদ্ভিদের গঠন জটিল এবং সেখানে পরিবহন কলা বিদ্যমান ।

১০। পরিবহন কলায় কোনো ক্যাম্বিয়াম থাকে না, ফলে সেকেন্ডারি বৃদ্ধি ঘটে না।

১১। গ্যামেটোফাইট প্রায়ই স্পোরোফাইটের উপর নির্ভরশীল। তবে কতিপয় ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী।

১২। জননাঙ্গ বহুকোষী ও জটিল। পুং জননাঙ্গের নাম Antheridium এবং স্ত্রী জননাঙ্গের নাম Archegonium.

১৩। প্রতিটি জননাঙ্গ একটি বন্ধ্যা আবরণী দ্বারা আবৃত থাকে।

১৪। জননাঙ্গগুলো সাধারণত গ্যামেটোফাইটের সাথে প্রোথিত থাকে।

১৫। শুক্রাণু এককোষী, এক নিউক্লিয়াসযুক্ত এবং ফ্লাজেলাযুক্ত ।

১৬। নিষেকের জন্য পানি অপরিহার্য।

১৭। স্পোরোফাইটিক উদ্ভিদ স্পোর সৃষ্টির মাধ্যমে অযৌন জনন সম্পন্ন করে ।

১৮। এদের সুনির্দিষ্ট হেটেরোমরফিক (heteromorphic) জনুক্রম বিদ্যমান।

আরও শিখুন : সানফার্ন কি?এর বৈশিষ্ট। Pteris কে সানফার্ন বলা হয় কেন?

ব্রায়োফাইটা ও টেরিডোফাইটা পার্থক্য :

ব্রায়োফাইটা টেরিডোফাইটা
১। প্রধান দেহ গ্যামিটোফাইটিক । ১। প্রধান দেহ স্পোরোফাইটিক ।
২। দেহ মূল, কাণ্ড ও পাতায় বিভেদিত নয়। ২। দেহ মূল, কাণ্ড ও পাতায় বিভেদিত।
৩। মূল অনুপস্থিত । এর পরিবর্তে রাইজয়েড থাকে । ৩। মূল উপস্থিত।
৪। পরিবহন টিস্যু অনুপস্থিত। ৪। পরিবহন টিস্যু উপস্থিত।
৫। পাতা সরল। ৫। পাতা যৌগিক ।
৬। স্পোর অঙ্কুরিত প্রোটোনেমা সৃষ্টি করে। ৬। স্পোর অঙ্কুরিত হয়ে প্রোথ্যালাস সৃষ্টি করে।

Leave a Comment