একটি বিশেষ প্রকারের অস্বাভাবিক যৌন জনন পদ্ধতি অপুংজনি বা পার্থেনোজেনেসিস। এই প্রক্রিয়ায় মূলত ডিম্বাণু বা পুংগ্যামেট নিষেক ব্যতীত অপত্য জীব সৃষ্টি করে। রটিফার, মৌমাছির ইত্যাদি প্রাণিদেহে এবং কলা, Mucor, Spirogyra প্রভৃতি উদ্ভিদের দেহে এই প্রকার জনন ঘটতে দেখা যায় ।
সংজ্ঞা : জীবের অনিষিক্ত ডিম্বাণু বা পুংগ্যামেট থেকে জাইগোট বা ভ্রূণ উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়াকে অপুংজনি বা পার্থেনোজেনেসিস বলে।
কলা পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয় বলে এটি বীজহীন। বীজহীন হওয়ার জন্যই একে সারা দেশে চাষ করা হয়। কিন্তু বীচিকলার চাষ করা হয় না ।
যে সকল উদ্ভিদে নিষেক ও পরাগায়নের অভাবে ফল সৃষ্টি হয় না, তাদের ক্ষেত্রে অক্সিন প্রয়োগ করে কৃত্রিমভাবে পার্থেনোকার্থিক ফল সৃষ্টি করা সম্ভব।
আরও পড়ুন : কৃত্রিম প্রজনন সংজ্ঞা, পদ্ধতি, গুরুত্ব ও উদ্দেশ্য
আবার আপেল, চেরিসহ বিভিন্ন উদ্ভিদে জিবেরেলিন প্রয়োগ করে পার্থেনোকার্থিক ফল সৃষ্টি করা সম্ভব। কিন্তু যে ক্ষেত্রে জিবেরেলিন প্রয়োগ করা হবে সেক্ষেত্রে অক্সিন প্রয়োগ তেমন কার্যকর হয় না। উপর্যুক্ত উদ্ভিদে অক্সিনের কার্য বিনষ্টকারী রাসায়নিক পদার্থ আছে এবং জিবেরেলিন ঐ পদার্থের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে।
পার্থেনোজেনেসিস এর প্রকারভেদ :
পার্থেনোজেনেসিস দুই ধরনের হতে পারে। যেমন-
(ক) হ্যাপ্লয়েড পার্থেনোজেনেসিস (Haploid Parthenogenesis) : হ্যাপ্লয়েড অনিষিক্ত ডিম্বাণু হতে যখন ভূণ তৈরী হয় তখন একে হ্যাপ্লয়েড পার্থেনোজেনেসিস বলে।
কাকমাছি নামক উদ্ভিদে এই প্রকার অপুংজনি দেখাযায়। যেমন- Solanum nigrum উদ্ভিদে এই প্রকার পার্থেনোজেনেসিস’ দেখা যায় ।
(খ) ডিপ্লয়েড পার্থেনোজেনেসিস (Diploid Parthenogenesis) : ডিপ্লয়েড ডিম্বাণু থেকে অপত্য ভ্রূণ সৃষ্টি হওয়াকে ডিপ্লয়েড পার্থেনোজেনেসিস বলে। যেমন- Parthenium : argentatum উদ্ভিদে ডিপ্লয়েড পার্থেনোজেনেসিস দেখা যায়।
আরও পড়ুন : সংকরায়ন বা হাইব্রিডাইজেশন কাকে বলে? এবং প্রক্রিয়া সমূহ
পার্থেনোজেনেসিসকে বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী অনেকে নিম্নোক্ত তিন ভাগে বিভক্ত করেন-
(i) বংশগত : মিউটেশন (পরিব্যক্তি) বা হাইব্রিডাইজেশন (সংকরায়ন ঘটিত) কারণে যেখানে নিষেক ঘটে না যেমন- কলা, লেবু ইত্যাদি ।
(ii) পরিবেশগত : নিম্ন বা অধিক উষ্ণতা, কুয়াশা, অধিক বৃষ্টিপাত প্রভৃতি আরহাওয়াগত কারণে টমেটো ও মরিচে এমনটি ঘটে থাকে ।
(iii) রাসায়নিক : নিম্ন তাপমাত্রার (10-7-19-6mol) জিব্বেরেলিন বা ইনডোল এসিটিক এসিড (IAA) প্রয়োগ করলে অনেক সময় বীজ ছাড়াই ফল সৃষ্টি হয়।
পারথেনোজেনেসিস-এর গুরুত্ব :
উদ্ভিদের প্রজননে পারথেনোজেনেসিস তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। যেসব উদ্ভিদে পারথেনোজেনেসিস হতে দেখা যায় (যেমন- Solanum nigrum, Parthenium argentatum) তাদের স্বাভাবিক প্রজনন যৌন প্রকার ।
- কোন উদ্ভিদে অযৌন বা যৌন পদ্ধতিতে প্রজনন না ঘটে কেবল পারথেনোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় নতুন উদ্ভিদের জন্ম হলে ঐ উদ্ভিদের জন্য এ প্রক্রিয়াটি অতি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বন্ধ্যাত্বের হাত থেকে বা বিলুপ্তির হাত থেকে প্রজাতিটি রক্ষা পায়।
- এ প্রক্রিয়ায় কোনো প্রকরণ সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে না ।
- এ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের সুবিধাজনক মিউটেন্ট বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটতে পারে ।
- এ প্রক্রিয়ায় তৈরী কৃত হ্যাপ্লয়েড উদ্ভিদ ব্রিডিং গবেষণায় কাজে লাগানো যায় ।
আরও পড়ুন : প্রজনন, যৌন ও অযৌন জনন সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, পার্থক্য