যেকোনো রচনার একটি বক্তব্য থাকে। অনুচ্ছেদ আকারে গদ্যাংশ বা পদ্যাংশের মূলভাবকে সহজ সরল ভাষায় সংক্ষেপে প্রকাশ করার রীতিকে সারাংশ বা সারমর্ম বলা হয় ।
লেখকরা একটি বিষয়কে নানারকম উপমা ও উদাহরণ দিয়ে প্রকাশ করেন। তাই নির্ধারিত অংশটুকু বার বার পড়ে মূলবক্তব্য অনুধাবন করতে হয়।
সারাংশ বা সারমর্ম ভাবসম্প্রসারণের বিপরীত রীতি। সারাংশ ও সারমর্মে বিষয়বস্তুকে সংক্ষেপে প্রকাশ করতে হয়। এ কারণে সেখানে ব্যবহৃত দৃষ্টান্ত, উদ্ধৃতি, উপমা ও অলংকার প্রভৃতি বাদ দিয়ে লিখতে হয়। একই কথার পুনরাবৃত্তি করা ঠিক নয়। সারাংশ ও সারমর্মের ক্ষেত্রে উদ্ধৃত বিষয়ের বিশেষণ, ক্রিয়াপদ ও বাহুল্য বাদ দিয়ে মূল বিষয়টি সরাসরি লিখতে হয়। সারাংশ ও সারমর্মের আয়তন অপেক্ষাকৃত ছোট, সাধারণত মূল অংশের এক-তৃতীয়াংশ হওয়া উচিত।
সারাংশ কি ?
যে কোনো বিষয়ে কোনো বিস্তারিত গদ্য রচনার মধ্য থেকে অপ্রয়োজনীয় কথাগুলো বাদ দিয়ে মূল কথাগুলো সংক্ষেপে লেখার নাম সারাংশ ।
সারমর্ম কাকে বলে?
কোনো পদ্য বা কবিতায় কবি যে ভাবটি প্রকাশ করতে চেয়েছেন তা সংক্ষেপে উপস্থাপন করার নাম সারমর্ম। সারমর্মকে ভাবার্থ বা মর্মার্থও বলা হয়।
সারাংশ ও সারমর্ম লেখার নিয়ম :
১. পঠন : যখন তুমি কোন অংশের সারাংশ বা সারমর্ম লিখবে তখন প্রথমে তা বার বার মনযোগ দিয়ে পড়বে। সারাংশ বা সারমর্মের যে মূল ভাবটুকু রয়েছে অনেক সময় উপমা-রূপক বা অলংকারের আড়ালে থাকে। তাই যখন তুমি সারাংশ বা সারমর্ম লিখবে তখন উপমা, রূপক, অলংকার ইত্যাদি বাদ দিয়ে মূল ভাবটি বুঝে নিয়ে তা লিখবে ।
২. বাড়তি বিষয় বর্জন : যেহেতু শুধু মূল ভাবকে খুব সংক্ষেপে লিখতে হয় সেজন্য বাড়তি যে বিষয়াদি রয়েছে সেগুলো বাদ দেবে।
৩. প্রসঙ্গ : মূল ভাবের বাহিরে অন্য কিছু উপস্থাপনা করা উচিত নয়। যদি রচয়িতার নাম জানা থাকে সেটাও উল্লেখ করবে না। ‘কবি বলেছেন’ এ জাতীয় কথাও লিখবে না ।
৪. অনুচ্ছেদ : সারমর্ম ও সারাংশ সবসময় একটি অনুচ্ছেদে লিখবে ।
৫. প্রারম্ভিক বাক্য : প্রারম্ভিক যে বাক্যটি থাকবে সেটি অবশ্যই গোছালো ও আকর্ষণীয় করে লিখতে চেষ্টা করবে ।
৬. প্রত্যক্ষ উক্তি : যদি সারাংশে প্রত্যক্ষ উক্তি থাকে তাহলে তা পরোক্ষ উক্তিতে সঠিক ও সংক্ষেপ করে লিখবে ।
৭. পুরুষ : সারাংশ ও সারমর্ম বক্তব্যে উত্তম পুরুষ যেমন :(আমি/আমরা) বা মধ্যম পুরুষ (তুমি/তোমরা) দিয়ে বাক্য কখনোই লিখবে না ।
৮. উদ্ধৃতি : যদি মূল অংশে উদ্ধৃতি থাকলে তার পুনরাবৃত্তি করবে না। প্রয়োজনে তার যে ভাবটুকু রয়েছে তা উদ্ধৃতি চিহ্ন ছাড়া লিখবে ।
৯. ভাষা : সারাংশ ও সারমর্মের ভাষা যথাসম্ভব সহজ ও সরল ভাষায় বাক্যে গুছিয়ে লিখতে চেষ্টা করবে।
এ অংশের জন্যে বিশেষভাবে মনে রাখবে-
- সারাংশ ও সারমর্ম একটি মাত্র অনুচ্ছেদ বা প্যারায় লিখবে।
- ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ, উদাহরণ এবং যাবতীয় বাড়তি কথা বর্জন করবে।
- উদ্ধৃত অংশে প্রত্যক্ষ উক্তি থাকলে তা পরোক্ষ উক্তিতে সংক্ষেপে লিখবে। উদ্ধৃতি থাকলে তার ভাবটুকুই শুধু লিখবে।
সারাংশ ও সারমর্মের পার্থক্য :
সারাংশ ও সারমর্ম প্রায় সমার্থক হলেও এদের মধ্যে একটু ভিন্নতা আছে। কোনো তথ্যবহুল গদ্যাংশের মূলভাবকে সংক্ষিপ্তাকারে লিখনই সারাংশ। আর সারমর্ম হলো কোনো পদ্যাংশের ভাবগম্ভীর, ইঙ্গিতপূর্ণ মূলভাব। আমরা সারমর্মকে মর্মার্থ বা ভাবার্থও বলতে পারি।
সারাংশ ও সারমর্মের প্রয়োজনীয়তা :
সারমর্ম বা সারাংশের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বক্তব্যের আসল কথাটি জানার জন্য সাধারণত মানুষ আগ্রহী। আর আসল কথা জেনে যেখানে কাজ চলে সেখানে অতিরিক্ত কথা বলার দরকার পড়ে না। কবি বা সাহিত্যিকগণ তাঁদের রচনাকে আকর্ষণীয় করার জন্য অথবা নিজেদের খেয়াল খুশিমতো বাহুল্য উপমা অলঙ্কারে, যুক্তিতে, উদাহরণে সাজিয়ে দেন।
এক্ষেত্রে পাঠকের প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করতে হয়। তার সময়ের সমস্যাও আছে। আছে মনমানসিকতা ও পরিবেশের ব্যাপার। তাই বড় বড় বাক্য ছোট করার মধ্যেই তার সার্থকতা প্রমাণ করে। বেশি পড়া বা বেশি শোনার অত্যাচার থেকে পাঠক রেহাই পেতে চায়। সাহিত্যের কথা বাদ দিয়েও দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় লেখালেখি, অফিস-আদালতের কাজকর্মে এই ধরণের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের উপযোগিতা অনেক বেশি।
মানবজীবনে এমন অনেক ঘটনা থাকে যা বিশেষ পরিবেশে ছোট করে বলা আবশ্যক হয়ে পড়ে। এসব কারণে সারমর্ম বা সারাংশ লেখাজাতীয় কাজটির বিশেষ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সারমর্ম বা সারাংশের সঙ্গে পাঠকের সম্পর্ক শুধু প্রয়োজনের । বাস্ত বতার নিরিখে তা বিচাৰ্য ।