আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে সঠিক পথের দিশা দেয়ার জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন। আর তাঁদের সত্যতা প্রমাণের জন্য স্বীয় নবীর মাধ্যমে তাঁর বান্দাদেরকে কিছু অলৌকিক ঘটনা প্রদর্শন করেছেন, যা মুজিযা নামে খ্যাত। আর অলীগণের অলৌকিক ঘটনা কারামত নামে খ্যাত।
মুজিযা আভিধানিক অর্থ :
১. অক্ষম করা।
২. অলৌকিক ঘটনা।
৩. অসম্ভব নিদর্শন।
৪. অসাধারণ ঘটনা।
৫. স্বাভাবিকতার বিপরীত ।
সংজ্ঞা : নবীগণ তাঁদের নবুয়তের দাবি প্রমাণ করতে যে সকল অলৌকিক কর্ম তথা নিদর্শন প্রদর্শন করেন, সেগুলোকে মুজিযা বলা হয় ।
আরও : মুজিজা শব্দের অর্থ, সংজ্ঞা, রাসূল (সা) এর প্রধান মুজিজা
মুজিযার উদাহরণ :
নবী করীম (স) কর্তৃক চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হওয়া ও জড় পদার্থের সালাম দেয়া, সামান্য পানিতে হাত রাখলে ঝরনা বের হওয়া, মাত্র দু’পাত্র পানি থেকে হাজার হাজার পাত্র পূর্ণ করা ইত্যাদি।
কারামাত এর আভিধানিক অর্থ :
অভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে কারামত শব্দটি কয়েকটি অর্থে ব্যবহার হয়। যেমন – ভদ্রতা, সম্মান, মাহাত্ম, বদান্যতা, দান করা ইত্যাদি।
আর ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো – Nobility, Respect, Mark of honour ইত্যাদি।
সংজ্ঞা : ঈমান ও তাকওয়ার অধিকারী ফরয এবং নফল ইবাদত পালনকারী কোনো ব্যক্তি থেকে যদি কোনো অলৌকিক কর্ম প্রকাশ পায়, তবে তাকে কারামত বলে ।
আরও : মুজিযা এর দৃষ্টান্ত, উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য কুরআনের আলোকে
কারামতের উদাহরণ :
কারামতের কয়েকটি উদাহরণ নিম্নে উপস্থাপন করা হলো-
১. হযরত সোলায়মান (আ)-এর প্রধানমন্ত্রী আসিফ রানী বিলকিসের সিংহাসন চোখের পলকে কারামতরূপে এনে উপস্থিত করেন।
২. হযরত ওমর (রা)-এর চিঠিতে নীল নদ প্রবাহিত হয়েছে।
৩. হযরত ওমর (রা) মসজিদে নববীতে খোতবারত অবস্থায় নাহওয়ান্দে যুদ্ধরত সেনাপতিকে যুদ্ধের দিকনির্দেশনা প্রদান করেছিলেন। যেমন তিনি বলেছিলেন- يَا سَارية الجبل
৪. হযরত খালেদ ইবনে ওয়ালীদ (রা)-এর প্রতি বিষ প্রয়োগে প্রতিক্রিয়া না হওয়া।
৫. কোনো কোনো অলীর পানির উপর দিয়ে চলাফেরার কথাও বলা যেতে পারে।
৬. খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (র) একবার শত্রুর প্রতি এক মুষ্টি বালি নিক্ষেপ করলে শত্রু ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ বিষয়ে ইমাম তাহাবী (র) বলেন-
لَا يُفَضِّلُ أَحَدًا مِنَ الْأَوْلِيَاءِ عَلَى أَحَدٍ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ
وَنَقُولُ نَبِيٌّ وَاحِدٌ أَفْضَلُ مِنْ جَمِيعِ الْأَوْلِيَاءِ.
মুজিযা ও কারামতের মধ্যে পার্থক্য :
মুজিযা ও কারামত মাঝে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন-
ক. আভিধানিক পার্থক্য : মুজিযা শব্দটি বাবে أَفْعَالٌ থেকে اِسْمُ فَاعِلٍ এর সীগাহ। আর কারামাত শব্দটি বাবে ضَرَبَ থেকে ব্যবহৃত মাসদার ।
খ. পারিভাষিক পার্থক্য : মুজিযা নবী রাসূলগণের পক্ষ থেকে আর কারামত অলীগণের থেকে প্রকাশ পায়।
গ. অন্যান্য পার্থক্য :
১. মুজিযা শুধু নবী রাসূলগণের দ্বারাই সম্ভব; কিন্তু কারামাত অলীগণের দ্বারা প্রকাশিত হতে পারে। তবে তা শুধু আল্লাহর ইচ্ছায় হয়ে থাকে।
২. মুজিযা আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং নবীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ইচ্ছা থাকে। কারামত প্রকাশের জন্য অলীর ইচ্ছা আবশ্যক নয়।
৩. নবী রাসূলগণ আল্লাহর নিকট মুজিযা প্রকাশের দাবি ও দোয়া করতেন। পক্ষান্তরে অলীগণ কারামত প্রকাশের জন্য দাবি করতে পারে না।
8. মুজিযা অস্বীকারকারী কাফের হয়ে যায়; কিন্তু কারামত অস্বীকারকারী কাফের হয় না।