হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

আরকানুল ঈমান কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি বিস্তারিত

ঈমান হচ্ছে এমন এক আত্মিক শক্তি, যা মানুষের অন্তর থেকে উদিত হয়ে দৈহিক-মানসিক চেতনার উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এটি কখনই দৃষ্টিগোচর হয় না। যদি দৃষ্টিগোচর হতো, তবে আর ঈমান বলার কোনো প্রয়োজন হতো না। যে সকল ভিত্তির উপর এই ঈমান বা বিশ্বাস করার বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত সেগুলোকে আরকানুল ঈমান বলে । নিম্নে এ সম্পর্কে সবিস্তারে আলোচনা করা হলো –

আরকানুল ঈমান এর পরিচিতি :

আরকান এর আভিধানিক অর্থ : أركان শব্দটি رُكْن শব্দের বহুবচন। এর আভিধানিক অর্থ হলো- ভিত্তি, স্তম্ভ, খুঁটি, কোন, মূল অংশ, শক্তি, যার উপর নির্ভর হয়, ফাউন্ডেশন ইত্যাদি।

ঈমান এর আভিধানিক অর্থ : إِيمَان শব্দটি বাবে أَفْعَال এর মাসদার। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- আনুগত্য করা, অবনত হওয়া, নির্ভর করা, আস্থা স্থাপন করা, স্বীকৃতি দেওয়া, নিরাপত্তা প্রদান করা, বিশ্বাস করা ইত্যাদি।

আরকানুল ঈমান কাকে বলে ?

প্রতিটি মানুষকে মুমিন হিসেবে গণ্য হতে হলে যে সকল বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়, সেগুলোকেই ইসলামের পরিভাষায় আরকানুল ঈমান বলা হয়।

আরো পড়ুন : ঈমান অর্থ কি?কাকে বলে। ঈমানের মূল বিষয় কয়টি ও কি কি

আরকানুল ঈমান কয়টি ও কি কি ?

আরকানুল ঈমান তথা ঈমানের মৌলিক স্তম্ভ হল মোট ছয়টি। যথা –

১। আল্লাহর প্রতি ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন।

২। ফেরেশতাগণের প্রতি ঈমান।

৩। আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান।

৪। রাসুলগণের প্রতি ঈমান।

৫। আখেরাতের প্রতি ঈমান।

৬। তকদিরের প্রতি ঈমান

১. তথা আল্লাহর প্রতি ঈমান : আল্লাহর প্রতি ঈমানের অর্থ হলো—

ক. তিনিই একমাত্র ইলাহ তথা আইনদাতা। তাঁর আইন ছাড়া আর কারো আইন চলবে না ।

খ. তিনি এক ও অদ্বিতীয়; তাঁর কোনো শরীক নেই। তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।

গ. তিনি সকল কিছুর স্রষ্টা, তিনি নিজে সৃষ্ট নন। তিনি কাউকে জন্ম দেন না, আবার তাঁর জন্মও কারো থেকে হয়নি।

ঘ. তিনি আরশের উপর সমাসীন। ইলমের দিক থেকে তিনি বান্দার নিকটে আছেন।

ঙ. ইবাদত পাওয়ার তিনিই একমাত্র যোগ্য ।

যেমন মহান আল্লাহ তায়ালার বাণী-

١- وَإِلَـٰهُكُمْ إِلَـٰهٌ وَاحِدٌ ۖ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَـٰنُ الرَّحِيمُ

٢- قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ ۝ اللَّهُ الصَّمَدُ ۝ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ ۝ وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ

٣ -أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ ۗ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ

আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়নের তিনটি মাধ্যম রয়েছে। যথা-

ক. মৌখিক স্বীকারোক্তি ।

খ. অন্তরের বিশ্বাস ।

গ. আরকানসমূহ কর্মে বাস্তবায়ন ।

আরো পড়ুন : ইসলাম ও ঈমান কাকে বলে?এদের মধ্যে সম্পর্ক ও পার্থক্য

২. ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান : ফেরেশতাকে আরবিতে বলা হয় مَلَكَ ; এটি একবচন। এর বহুবচন হচ্ছে مَلَائِكَة তথা আল্লাহর দূতগণ । ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান বা বিশ্বাসের কয়েকটি দিক রয়েছে। আর তা হচ্ছে—

ক. ফেরেশতাদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করা।

খ. তাঁদের নামে বিশ্বাস করা।

গ. তাঁদের আকৃতি প্রকৃতিতে বিশ্বাস করা।

ঘ. তাঁদের কর্মে বিশ্বাস করা।

৩. আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান : আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান আনা বা বিশ্বাস করা প্রতিটি মুমিনের ওপর ফরয। আসমানী কিতাব সর্বমোট ১০৪ খানা। এর মধ্যে ১০০ খানা সহীফা আর অবশিষ্ট ৪ খানা প্রধান। এ চারখানা হচ্ছে-

ক. তাওরাত; যা হযরত মুসা (আ)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে।

খ. যাবুর ; যা হযরত দাউদ (আ)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে।

গ. ইঞ্জিল; যা হযরত ঈসা (আ)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে।

ঘ. কুরআন; যা হযরত মুহাম্মদ (স)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে।

আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ এসব কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ফরয। আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির হেদায়াতের জন্য যুগে যুগে নবী রাসূলদের নিকট অহীর মাধ্যমে এসব কিতাব প্রেরণ করেছেন। সন্দেহাতীতভাবে এসব কিতাবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

قُلْ امَنَّا بِاللهِ وَمَا اُنْزِلَ عَلَيْنَا وَمَا أُنْزِلَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالأَسْبَاطِ -( ال عمران :(٨٤

আরো পড়ুন : তাওহীদ শব্দের অর্থ কি? কাকে বলে। কত প্রকার ও কি কি

৪. রাসূলগণের প্রতি ঈমান : ঈমানের অন্যতম রোকন হলো এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, মহান আল্লাহ যুগে যুগে মানবজাতিকে সঠিক পথের দিশাদানের জন্য অসংখ্য নবী রাসূল পাঠিয়েছেন। তাঁরা সকলেই মহৎ চরিত্রের অধিকারী সৎ ও কল্যাণকর মানুষ ছিলেন।

তাঁদের মধ্যে যাদের নাম পবিত্র কুরআনে উল্লেখ রয়েছে এবং যাদের নাম উল্লেখ নেই, সকলকে নবী রাসূল বলে বিশ্বাস করা, শ্রদ্ধা করা এবং ভালোবাসা আর সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ (স)-এর অনুসরণ করা এবং তাঁর আনীত শরীয়ত অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা ।

৫. আখেরাতের প্রতি ঈমান : আখেরাতের প্রতি ঈমান আনয়নের অর্থ হচ্ছে- মৃত্যুর পর কবর, পুনরুত্থান, কেয়ামত, শেষ বিচার, আমলনামা প্রদান, পাপ পুণ্যের ওজন, পুলসিরাত, জান্নাত ও তার নেয়ামত, জাহান্নাম ও তার শাস্তি এবং আল্লাহর দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে হুবহু সেভাবে বিশ্বাস স্থাপন করা ।

৬. তাকদীরের প্রতি ঈমান : তাকদীরের প্রতি ঈমান বা বিশ্বাস হলো ঈমানের ষষ্ঠ রোকন। তাকদীর অর্থ নির্ধারণ, নিয়তি, ভাগ্য ইত্যাদি। এ বিশ্বের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে আল্লাহ প্রতিটি সৃষ্টির জন্য যে সুশৃঙ্খল নিয়ম ও কার্যপ্রণালি নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তাকেই তাকদীর তথা আল্লাহর নির্ধারণ বলা হয়।

বিশ্বের ভালো-মন্দ, আনন্দ-উল্লাস ও দুঃখ-কষ্টের যা কিছু ঘটে তা সবই মহান আল্লাহর জ্ঞান ও ইচ্ছানুসারে হয়ে থাকে। আর এ সবের ওপর বিশ্বাস করাই তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস করার শামিল।

Leave a Comment