হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

জীবপ্রযুক্তি কি? কাকে বলে। এবং এর গুরুত্ব বা অবদান

মানব কল্যাণে জীববিজ্ঞানের অন্যতম আবিষ্কার হলো জীবপ্রযুক্তি বা বায়োটেকনোলজি। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ইতিমধ্যে অকল্পনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে হাঙ্গেরীয় প্রকৌশলী কার্ল এরেকি (Karl Ereky) সর্বপ্রথম শব্দটি প্রবর্তন করেন।

জীবপ্রযুক্তি কি ?

জীবপ্রযুক্তি দুটি শব্দ Biology এবং Technology এর সমন্বয়ে গঠিত। Biology শব্দের অর্থ জীব এবং Technology শব্দের অর্থ প্রযুক্তি। অর্থাৎ Biology এবং Technology-র আন্ত:সম্পর্কিত বিষয়ই হলো জীবপ্রযুক্তি।

জীবপ্রযুক্তি কাকে বলে ?

যে প্রযুক্তি প্রয়োগে কোনো জীবকোষ, অনুজীব বা তার অংশবিশেষ ব্যবহার করে নতুন কোনো বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীব এর উদ্ভাবন বা উক্ত জীব থেকে প্রক্রিয়াজাত বা উপজাত দ্রব্য প্রস্তুত করা হয় তাকে জীবপ্রযুক্তি বলে।

আরও দেখো : টিস্যু কালচার: সংজ্ঞা,পদ্ধতি,গুরুত্ব,ধাপ,ব্যবহার, সুবিধা

জীবপ্রযুক্তির গুরুত্ব / অবদান:

জীবপ্রযুক্তির বহু পদ্ধতি ইতোমধ্যেই উদ্ভাবিত হয়েছে এবং প্রয়োগ হচ্ছে। নিচে কয়েকটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো

১। জিন প্রযুক্তিতে : (i) উদ্ভিদ ও প্রাণিদেহে (মানুষের) ভাইরাস জীবাণু শনাক্তকরণ। (ii) বিভিন্ন প্রকার জিনগত ব্যাধি শনাক্তকরণ ও রোগ নিরাময়। (iii) বিভিন্ন জীবাণু প্রয়োগে জীবাণু অস্ত্র হিসেবে দেশের প্রতিরক্ষা কাজে ব্যবহার। (iv) বিভিন্ন টিউমার কোষকে নিশ্চিত করতে নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি উৎপাদন ও সঠিক স্থানে প্রেরণ ।

২। এনজাইম প্রযুক্তিতে : (i) উন্নতমানের এনজাইম উৎপাদন এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদনে এনজাইমের ব্যবহার । (ii) প্রাকৃতিক প্রোটিনের চেয়ে উন্নত পেপটাইড, নির্দিষ্ট ওষুধ, সঞ্চয়ী প্রোটিন প্রভৃতি জৈবযৌগের উৎপাদন।

৩। কৃষিক্ষেত্রে : (i) উদ্ভিদকোষ, টিস্যু ও অঙ্গের কালচার। (ii) সালোকসংশ্লেষণে বেশি সক্ষম, নাইট্রোজেন স্থায়ীকরণ ক্ষমতাসম্পন্ন ও উন্নত সঞ্চয়ী প্রোটিন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন উদ্ভিদ উৎপাদন। রোগ-পতঙ্গ-বালাইনাশক প্রতিরোধী উদ্ভিদ জাত উৎপাদন । (iv) বেশি মাংস ও দুধ উৎপাদনকারী সুস্থ ও সবল গবাদিপশু উদ্ভাবন। (v) জীবপ্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপন্ন গবাদিপশুর দুধ, রক্ত ও মলমূত্র থেকে ওষুধ উৎপাদন ।

আরও দেখো : জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কী? কাকে বলে। এবং এর ব্যবহার

৪। চিকিৎসা শাস্ত্রে : (i) বিভিন্ন জটিল রোগের প্রতিষেধক এবং রোগব্যাধি শনাক্তকরণের জন্য অ্যান্টিবডি উৎপাদন। ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে সংশ্লেষিত ইনসুলিন ও ইন্টারফেরনসহ নানা ধরনের হরমোন উৎপাদন। (iii) মানুষের বৃদ্ধি হরমোন উৎপাদন। (iv) মস্তিষ্কে, হৃদপিণ্ডে ও ফুসফুসে রক্ত জমাট প্রতিরোধক উপাদান উৎপাদন। বর্তমানে বায়োফার্মের মাধ্যমে হরমোন, অ্যান্টিজেন ও ভিটামিন তৈরি করা হচ্ছে।

৫। শিল্পক্ষেত্রে : (i) শিল্পক্ষেত্রে অণুজীববিদ্যার জ্ঞানকে ভালোভাবে কাজে লাগিয়ে জীবপ্রযুক্তির সাহায্যে বিভিন্ন ওষুধের গুণগত ও পরিমাণগত উৎপাদন বাড়ানো। (ii) জৈবশক্তি উৎপাদন। (iii) অণুজীব থেকে খাদ্য উৎপাদন।

৬। পরিবেশ রক্ষায় : (i) কলকারখানায় নির্গত রাসায়নিক পদার্থের বিক্রিয়া প্রশমন ঘটানোর জন্য অণুজীবের ব্যবহার । (ii) মনুষ্যসৃষ্ট বর্জ্য ও জঞ্জাল ধ্বংস ও পরিবেশ নির্মল করার কাজে অণুজীবের ব্যবহার। জিন ব্যাংক স্থাপন করে জীববৈচিত্র্য রক্ষা ।

আরও দেখো : রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ:সংজ্ঞা,ধাপ,গুরুত্ব,প্রযুক্তি চিত্র সহ

Leave a Comment

error: Content is protected !!