আল্লামা যাহাবী (র)-এর মতে, লক্ষাধিক সাহাবীর মধ্যে মহানবী (স) হতে গ্রহণযোগ্য সূত্রে হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবীগণের সংখ্যা মাত্র ১০৫ জন। মুসনাদে আবু দাউদে বর্ণনাকারী সাহাবীর সংখ্যা ২৫০ জন এবং উসদুল গাবাহ নামক গ্রন্থে ৭৫৫৪ জন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মুহাদ্দিসীনে কেরাম বর্ণিত হাদীস সংখ্যার ভিত্তিতে হাদিস বর্ণনাকারীর সাহাবীগণকে ৪ ভাগে ভাগ করেছেন। নিম্নে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো ।
হাদিস বর্ণনাকারীর স্তর :
হাদীস বিশেষজ্ঞগণ হাদীস বর্ণনার সংখ্যানুপাতিক পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে হাদীস বর্ণনাকারীগণকে চারটি স্তরে ভাগ করেছেন। যথা-
১। مُكْثِرِينَ
২। مُتَوَسِّطِينَ
৩। مُقِلِّينَ
৪। أَقَلِّينَ
১। مُكْثِرِينَ এর পরিচিতি : মুহাদ্দিসগণের পরিভাষায়, যেসব সাহাবী মহানবী (স) হতে কমপক্ষে এক হাজার বা ততোধিক হাদীস বর্ণনা করেছেন, সেসব প্রখ্যাত সাহাবীকে مُكْثِرِينَ বলা হয়। এ স্তরের সাহাবীগণের সংখ্যা মাত্র সাতজন ।
আরো জানো : সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী- নাম, হাদিস সংখ্যা ও অবদান
২। مُتَوَسِّطِينَ পরিচিতি : مُتَوَسِّطِينَ -এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- মধ্যমপন্থা অবলম্বনকারী, মধ্যম বা মাঝামাঝি আর হাদীসবিশারদগণের পরিভাষায়, যেসব সাহাবী কমপক্ষে ৫০০ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং তাঁদের বর্ণিত হাদীস সংখ্যা এক হাজার পর্যন্ত পৌঁছেছিল, সেসব বর্ণনাকারী সাহাবীকে مُتَوَسِّطِينَ বলা হয়।
অন্য কথায়, সেসব সাহাবীর বর্ণিত হাদীস সংখ্যা ন্যূনতম ৫০০ অথচ এ সংখ্যা مُكْثِرِينَ বর্ণনাকারীগণের সমপর্যায়ে অর্থাৎ এক হাজার পর্যন্ত পৌঁছেছিল, তাঁদেরকে مُتَوَسِّطِينَ বলা হয়। এ স্তরের বর্ণনাকারীগণের সংখ্যা চারজন ।
৩। مُقِلِّينَ পরিচিতি : مُقِلِّينَ শব্দটি বহুবচন। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- অল্প পরিমাণ বা কমসংখ্যক। মুহাদ্দিসগণের পরিভাষায়-
ক. যেসব সাহাবী কমপক্ষে ৪০টি হাদীস বর্ণনা করেছেন, তবে তাঁদের বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা ৫০০ পর্যন্ত পৌঁছেছিল, সেসব বর্ণনাকারী সাহাবীকে مُقِلِّينَ বলা হয় ।
খ. ‘হাদীস সংকলনের ইতিহাস’ গ্রন্থে মাওলানা মোঃ আবদুর রহিম বলেছেন, কমপক্ষে ১০০ এবং অনূর্ধ্ব ৫০০ হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীগণ مُقِلِّينَ স্তরের অন্তর্ভুক্ত ।
আরো জানো : ইসলামে হাদিসের গুরুত্ব ও কুরআনের সাথে হাদিসের সম্পর্ক
গ. জমহুর মুহাদ্দিসীনের মতে, ন্যূনতম ৪০টি এবং অনূর্ধ্ব ৫০০ হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীগণকে مُقِلِّينَ বলা হয়। এ স্তরের বর্ণনাকারীগণের সংখ্যা ৫৯ জন।
৪। أَقَلِّينَ পরিচিতি : أَقَلِّينَ শব্দটি বহুবচন। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- সর্বনিম্ন পরিমাণ, কম সম্পাদনকারী, সর্বনিম্ন সংখ্যক।
আর মুহাদ্দিসীনে কেরামের পরিভাষায়, চল্লিশটির কম সংখ্যক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীগণকে أَقَلِّينَ বলা হয়। এ স্তরের বর্ণনাকারী সাহাবীগণের সংখ্যা ৫৫ জন।
অধিক হাদীস বর্ণনাকারীগণ ও তাঁদের হাদীস সংখ্যা :
হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীগণের ৪টি স্তরের মধ্যে প্রথম স্তরটি হচ্ছে, অধিক সংখ্যক হাদীস বর্ণনাকারীগণের স্তর। مُصْطَلَحُ الحَدِيثِ এ-এর পরিভাষায় তাঁদেরকে বলা হয়-مُكْثِرُونَ فِي رِوَايَةِ الحَدِيثِ এ স্তরের বর্ণনাকারীগণের সংখ্যা সর্বমোট সাতজন। নিম্নে তাঁদের বর্ণিত হাদীসের সংখ্যাসহ নামের তালিকা পেশ করা হলো।
| নাম | হাদীসের সংখ্যা |
|---|---|
| ১। হযরত আবু হোরায়রা (রা) | ৫৩৭৪টি |
| ২। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) | ২৬৩০টি |
| ৩। হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) | ২২৮৬টি |
| ৪। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা) | ২২১০টি |
| ৫। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) | ১৬৬০টি |
| ৬। হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা) | ১৫৪০টি |
| ৭। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) | ১১৭০টি |
পরিশেষে : সাহাবায়ে কেরামের গভীর আন্তরিকতা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় হাদীসের বিশাল ভাণ্ডার সংগ্রহ ও সংকলন করা সম্ভব হয়েছে। সুতরাং বলা যায়, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স)-এর জীবনাদর্শ সমগ্র মুসলিম উম্মাহর নিকট উপস্থাপনে তাঁরা অবিস্মরণীয়, তাই তাঁদের নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আরো জানো : হাদিস সংকলনের ইতিহাস বিস্তারিত – pdf