হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

বঙ্গভাষা কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর – রচনামূলক

প্রশ্ন : ১ ৷৷ সনেট হিসেবে ‘বঙ্গভাষা’ কবিতাটির সার্থকতা বিচার কর।

অথবা, সনেট কাকে বলে? সনেট হিসেবে ‘বঙ্গভাষা’ কবিতাটির বৈশিষ্ট্য ও সার্থকতা আলোচনা কর।

অথবা, চতুর্দশপদী কবিতা কাকে বলে? চতুর্দশপদী কবিতার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করে দেখাও, ‘বঙ্গভাষা’ একটি সার্থক চতুর্দশপদী কবিতা।

উপস্থাপনা : আধুনিক বাংলা সাহিত্য জগতের এক অনন্য সাধারণ প্রতিভা মাইকেল মধুসূদন দত্ত। বিশেষত কাব্য ও নাটক রচনায় তিনি ছিলেন অবিসংবাদিত। তাঁর প্রতিভা আজও আমাদের বিস্মিত করে। চতুর্দশপদী কবিতা চর্চা করে তিনি বাংলা কাব্য সাহিত্যে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছেন।

তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। ‘বঙ্গভাষা’ তাঁর রচিত একটি বিখ্যাত সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতা।

সনেটের অর্থ : ইতালীয় সনেটো’ (Sonnetto) শব্দ থেকে ‘সনেট’ শব্দের উৎপত্তি । ‘সনেটো’ শব্দের অর্থ গতিম্পন্দিত মৃদু ধ্বনি। সনেটের বাংলা অর্থ- চতুর্দশপদী বা চৌদ্দ চরণবিশিষ্ট এক বিশেষ ধরনের কবিতা।

আরো পড়ো : বঙ্গভাষা কবিতার মূলভাব এবং প্রতি লাইনের ব্যাখ্যা

পারিভাষিক সংজ্ঞা : কবিহৃদয়ের একটি অখণ্ড ভাব বা অনুভূতি যখন চৌদ্দ অক্ষর সমন্বিত চৌদ্দ চরণ দ্বারা বাণীমূর্তি লাভ করে, তখন তাকে সনেট বলে। বাংলায় একে বলা হয় চতুর্দশপদী কবিতা ।

সনেটের প্রবর্তন : ইতালির কবি পেত্রার্ক (Petrarch-1304–74) সর্বপ্রথম সনেটের সূচনা করেন। ষোড়শ শতকে Wyatt এবং Surry সর্বপ্রথম ইংরেজিতে সনেট রচনা করেন। পরবর্তীতে তার অনুসরণে দান্তে, ট্যাসো, আরো পরে সিডনি, শেকসপিয়র, মিল্টন, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, কীটস, ব্রাউনিং প্রমুখ ইংরেজ কবি সফলতার সাথে সনেট রচনা করেন ।

সনেটের গঠনকৌশল : একটিমাত্র অখণ্ড ভাব-কল্পনা বা অনুভূতি-কণা যখন ১৪ অক্ষর সমন্বিত ১৪ পঙক্তিতে একটি বিশেষ ছন্দরীতিতে আত্মপ্রকাশ করে তখন তা সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতার রূপ পরিগ্রহ করে। সনেট হলো সেই কাব্যরীতি যার পক্তি বা চরণসংখ্যা ১৪ এবং প্রতি পঙক্তির মাত্রা সংখ্যাও ১৪। কবিতাটির দুটি পর্ব বা ভাগ থাকবে ।

আরো পড়ো : যে সবে বঙ্গেত জন্মি কবিতার মূলভাব/সারমর্ম। প্রশ্ন উত্তর সহ

প্রথম পর্ব ৮ পঙক্তির এবং দ্বিতীয় পর্ব ৬ পঙক্তির। প্রথম ৮ পঙক্তিকে বলা হয় অষ্টক (Octave), আর দ্বিতীয় পর্বের ৬ পঙক্তিকে বলা হয় ষটক (Sestet)। অষ্টকে কবিতার মূল বক্তব্যের উপস্থাপন এবং ষটক পর্বে অষ্টকেরই চূড়ান্ত বিশ্লেষণ বা পরিণতি নির্ধারিত হয়। চরণশেষের অন্ত্যমিল পেত্রার্কীয় ও শেকসপিয়রীয় রীতিতে ভিন্নতর।

আলোচ্য ‘বঙ্গভাষা’ কবিতার মিল-বিন্যাস নিম্নরূপ-

অষ্টক (Octave) ষটক (Sestet)
কখ গঘ
কখ ঘগ
খক ঙঙ
খক ঙঙ

সনেট হিসেবে ‘বঙ্গভাষা’ কবিতার বৈশিষ্ট্য : ‘বঙ্গভাষা’ মধুসূদন দত্তের একটি বিখ্যাত সনেট কবিতা। সনেট হিসেবে এ কবিতার কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন-

ক. সনেটের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এ কবিতায় একটি অখণ্ড ভাবের অবতারণা করা হয়েছে, প্রকাশিত হয়েছে মাতৃভাষার প্রতি কবির গভীর মমত্ববোধ ।

ঘ. সনেটের রীতি অনুযায়ী এ কবিতায় চৌদ্দটি পক্তি রয়েছে এবং প্রতি পঙ্ক্তির মাত্রাসংখ্যা চৌদ্দ। কবিতার প্রথম আট চরণে ভাবের প্রবর্তন এবং শেষ ছয় চরণে রয়েছে ভাবের পরিণতি ।

গ. ছন্দের দিক থেকে ‘বঙ্গভাষা’ কবিতাটি অনিয়মিত ধরনের। তবে সমগ্র কবিতায় এর অখণ্ড ভাব নান্দনিক সৌন্দর্যে ফুটে উঠেছে।

‘বঙ্গভাষা’ কবিতায় ছন্দের ব্যাপারে অষ্টক ও ষটকের রীতি এক নয় । এদের আলাদা মিল- বিন্যাস চোখে পড়ে। এ বৈশিষ্ট্যের কারণে কবিতাটির অষ্টক ও ষটকের পার্থক্য ধরা পড়ে।

আরো পড়ো : সাত সাগরের মাঝি কবিতার মূলভাব- তোমার নিজের ভাষায় লেখ

সনেট হিসেবে ‘বঙ্গভাষা’ কবিতার সার্থকতা : ‘বঙ্গভাষা’ শুধু বাংলা সাহিত্যে প্রথম সনেটই নয়; বরং এটি বাংলা সাহিত্যের সেরা সনেটগুলোরও একটি। এর ভাব যেমন মার্জিত, পরিশীলিত ও সুসংহত, তেমনি এর শিল্পরূপও উঁচুমানের। এ কবিতায় কবির ব্যক্তিজীবনের গভীর ভাব প্রতিফলিত হয়েছে।

বিশেষত বিদেশি ভাষা থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে কবি যখন মাতৃভাষা বাংলার প্রতি নিবেদিত হন, সে অনুভূতি এতে বাণীরূপ লাভ করেছে। সনেট হিসেবে ‘বঙ্গভাষা’ কবিতায় রয়েছে চৌদ্দটি পঙ্ক্তি। প্রতি পঙ্ক্তিতে রয়েছে চৌদ মাত্রা। প্রতি চরণে দুটি পর্ব।

প্রথম পর্বে মাত্রাসংখ্যা ৮ এবং দ্বিতীয় পর্বে ৬। কবিতায় অন্ত্যমিলের ক্ষেত্রে অনিয়মিত রীতি অনুসরণ করা হয়েছে। কবিতার প্রথম চারটি ও শেষ দুটি চরণ শেকসপিয়রীয় রীতিতে রচিত। পঞ্চম থেকে অষ্টম চরণ অনিয়মিত শেকসপিয়রীয় ঢঙের, নবম থেকে দ্বাদশ চরণে পেত্রার্কীয় ঢং লক্ষ করা যায়।

‘বঙ্গভাষা’ কবিতায় পরিমিত পরিসরে কবি একটি ভাবের অখণ্ড ব্যঞ্জনা দান করতে সক্ষম হয়েছেন। তাই বলা যায়, বৈশিষ্ট্য বিচারে ‘বঙ্গভাষা’ একটি সার্থক সনেট কবিতা ।

উপসংহার : ‘বঙ্গভাষা’ কবিতাটি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের অসাধারণ কাব্য প্রতিভারই জ্বলন্ত প্রমাণ। ছন্দ, ভাষাশৈলী ও গঠনের বিচারে সত্যিই ‘বঙ্গভাষা’ কবিতাটি একটি অসাধারণ কবিতা। এ কবিতার আবেদন চিরদিন অম্লান থাকবে।

প্রশ্ন : ২৷৷ ‘বঙ্গভাষা’ কবিতা অবলম্বনে মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্বদেশ প্রীতির পরিচয় দাও।

অথবা, মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বঙ্গভাষা’ কবিতা অবলম্বনে কবির স্বদেশপ্রীতির পরিচয় দাও।

অথবা, মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বঙ্গভাষা’ কবিতা অবলম্বনে কবির মাতৃভাষা ও স্বদেশপ্রীতির পরিচয় দাও।

অথবা, ‘বঙ্গভাষা’ কী জাতীয় কবিতা? এ কবিতায় মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্বদেশপ্রেমের পরিচয় দাও।

উপস্থাপনা : মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্য জগতের এক অনন্য সাধারণ প্রতিভার নাম। গভীর স্বদেশপ্রেমে আপ্লুত হয়ে মাইকেল মধুসূদন দত্ত উনিশ শতকে বাঙালির সমাজজীবনে চিন্তার ক্ষেত্রে যেমন বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন তেমনি বাংলা কবিতার আঙ্গিকের ক্ষেত্রেও ঘটিয়েছিলেন অভূতপূর্ব পরিবর্তন। ‘বঙ্গভাষা’ কবিতাটি মাইকেলের চিরন্তন স্বদেশপ্রীতির সার্থক শিল্পরূপ।

‘বঙ্গভাষা’ কবিতার ধরন : বঙ্গভাষা কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম সনেটধর্মী দেশপ্রেমমূলক কবিতা। এ কবিতায় কবি অভিনব ছন্দ, ভাষা ও আবেগের উচ্ছ্বাসে মাতৃভাষার জয়গান গেয়েছেন। সনেট হিসেবে ‘বঙ্গভাষা’ কবিতায় রয়েছে ১৪টি পঙ্ক্তি, প্রতি পদ্ধতিতে রয়েছে ১৪টি মাত্রা, প্রতি চরণে রয়েছে দুটি পর্ব।

প্রথম পর্বে মাত্রাসংখ্যা ৮ এবং দ্বিতীয় পর্বে মাত্রাসংখ্যা ৬। কবিতার অন্ত্যমিলের ক্ষেত্রে অনিয়মিত রীতি লক্ষ করা যায় কবিতার প্রথম চারটি ও শেষ দুটি চরণ শেকসপিয়রীয় রীতিতে রচিত। পঞ্চম থেকে অষ্টম চরণ অনিয়মিত শেকসপিয়রীয় ঢঙের, নবম থেকে দ্বাদশ চরণে পেত্রার্কীয় ঢং লক্ষ করা যায় তাই বলা যায়, ‘বঙ্গভাষা একটি সার্থক সনেট।

কবির স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ

মধুসূদনের প্রথম জীবনের বাসনা : কবি মাইকেল মধুসুদন দত্ত যৌবনের উন্মেষকালে উচ্চাভিলাসী হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর আশা ছিল তৎকালীন ঔপনিবেশিক ভারতের রাজশক্তি ইংরেজি ভাষায় কবিতা রচনা করে খ্যাতিলাভ করবেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি কঠোর সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। একপর্যায়ে স্বধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন কিন্তু অবশেষে তাঁর আশার গুড়ে বালি পড়ে।

বঙ্গভাষা কবিতার প্রেক্ষিত : খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে কবি পাশ্চাত্য সাহিত্য সংস্কৃতির সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি কলকাতা ছেড়ে মাদ্রাজে গমন করেন। সেখানে নিজেকে ইউরোপীয় সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন। এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তিনি ইংরেজি কবিতা লিখতে শুরু করেন।

তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ক্যাপটিভ লেডি’ প্রকাশিত হলে তা সমালোচকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। এরপর কবি মাদ্রাজ ছেড়ে সুদূর ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে পাড়ি জমান, কিন্তু সেখানেও চরম প্রতিকূলতার সম্মুখীন হন। ক্রমেই তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারেন এবং স্বদেশ ও মাতৃভাষার প্রয়োজন অনুভব করেন ৷ তারপর বাংলা ভাষায় কবিতা রচনা শুরু করে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন।

মাতৃভাষার প্রতি অনুরাগ : কবি আপন ভুল বুঝতে পেরে আবার মাতৃভাষা বাংলার কাছে ফিরে আসেন। ইংরেজি ভাষা ও ইংরেজি সংস্কৃতির প্রতি মোহগ্রস্ত মনোবৃত্তিকে তিনি ভিক্ষাবৃত্তির সাথে তুলনা করেছেন। তিনি তাঁর মোহগ্রস্ত জীবনের প্রচেষ্টাকে পণ্ডশ্রম হিসেবে আখ্যায়িত করে মাতৃভাষাকে পদ্মকাননের সাথে আর বিদেশি ভাষাকে শ্যাওলার সাথে তুলনা করেন। যেমন কবির ভাষায়-

মজিনু বিফল তপে অবরণ্যে বরি;
কেলিনু শৈবালে; ভুলি কমল-কানন!

কবির দুর্দশামোচন : মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ যা আর মাতৃভাষা। সুদূর প্রবাসে বসে কবি দুঃখ-দারিদ্র্যে জর্জরিত দুঃসময়ে মাতৃভূমি আর হারানো মাতৃভাষার মহিমা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিলেন। অবশেষে স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে এ দৈন্যদশা থেকে মুক্তিলাভ করেন। কবির ভাষায়-

এ ভিখারী-দশা তবে কেন তোর আজি?
যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, যা রে ফিরি ঘরে!

কবির স্বদেশপ্রেম : কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের দেশাত্মবোধ অত্যন্ত প্রবল ছিল। বিদেশ ও বিদেশি ভাষার প্রতি প্রচণ্ড মোহ ভেঙে গেলে তিনি দেশের প্রতি আরো দুর্বল হয়ে পড়েন। তিনি প্রবাস জীবনকে ভিক্ষাবৃত্তির জীবনের সাথে তুলনা করেছেন । জীবনের এ পর্যায়ের চিত্র অঙ্কন করে কবি বলেন-

হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন;
তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি,
পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ
পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।

উপসংহার : বিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতির মোহ কবির দেশাত্মবোধ চাপা দিয়ে রেখেছিল, কিন্তু সত্যিকারের আন্তরিকতা, ভালোবাসা কখনো চাপা থাকে না। একসময় কবির বিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি মোহভঙ্গ ঘটে এবং তিনি স্বদেশ, স্বদেশি ভাষা ও সাহিত্যের জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েন। কবির স্বদেশপ্রীতির বাণীময় রূপ ‘বঙ্গভাষা’ কবিতাটি বিশ্ব সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।

প্রশ্ন : ৩ ৷৷ বঙ্গভাষা কবিতার নামকরণের সার্থকতা আলোচনা কর।

উপস্থাপনা : উনিশ শতকের শ্রেষ্ঠ কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা কবিতা, নাটক, মহাকাব্যে বিশেষ ধারা প্রবর্তন করে অমর হয়ে আছেন। বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দরীতির প্রবর্তক তিনিই। বঙ্গভাষা কবির সর্বপ্রথম সনেট কবিতা।

এ কবিতায় তাঁর দেশপ্রেম ও মাতৃভাষার প্রতি গভীর অনুরাগ প্রকাশিত হয়েছে। বঙ্গভাষা কবিতাটির নামকরণের মধ্য দিয়ে মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যচেতনার অত্যন্ত বলিষ্ঠ ও শিল্পসফল রূপ প্রকাশিত হয়েছে।

সাহিত্যে নামকরণের রীতিনীতি : সাহিত্য সমাজের দর্পণস্বরূপ, আর সাহিত্যের দর্পণ হলো নামকরণ। কারণ নামকরণের মধ্য দিয়েই যে-কোনো আলোচিত বিষয়ের সঠিক ভাববস্তু ফুটে ওঠে। নামকরণ সম্পর্কে প্রখ্যাত ইংরেজ মনীষী Cavendis বলেছেন- ‘A beautiful name is better than a lot of wealth.’ অর্থাৎ একটি সুন্দর নাম অঢেল সম্পদের চেয়ে উত্তম।

কবিরা কল্পনাবিলাসী, মুক্ত বিহঙ্গের মতো। তাই বলে তারা সাহিত্যের স্বীকৃত রীতিনীতির ঊর্ধ্বে নন। সুতরাং একটি শিল্পকর্ম সার্থক করে তুলতে নামকরণের রীতিনীতি মেনে চলা একান্ত অপরিহার্য।

নামকরণের ভিত্তি : সাহিত্যে নামকরণের কোনো সুনির্দিষ্ট ভিত্তি নেই। অন্যদিকে নামকরণ যথাযথ না হলে সাহিত্যকর্মের সঠিক মর্মার্থ অনুধাবন করা সম্ভব নয়। তাই সাহিত্যিকগণ যথাযথ নামকরণের ওপর যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করেছেন। তারা সাধারণত নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর ভিত্তিতে নামকরণ করে থাকেন-

  • রচনার মূলভাব অনুসারে।
  • রূপক বা প্রতীকী অর্থানুসারে।
  • কোনো সুনির্দিষ্ট স্থান বা কালের নামানুসারে।
  • রচনার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বা বিষয়বস্তু অনুসারে।
  • নায়ক-নায়িকার নামানুসারে।
  • কেন্দ্রীয় চরিত্রের নামানুসারে।

বঙ্গভাষা কবিতার নামকরণ : কবিতার মূলভাবের মধ্যে যে বক্তব্য লুকিয়ে আছে, নামকরণের মধ্য দিয়ে তা ফুটে উঠেছে। ‘বঙ্গভাষা’ কবিতায় কবির ব্যক্তি জীবনের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। মাতৃভাষা ও স্বদেশের প্রতি কবির যে মমত্ববোধ তা-ই এ কবিতার মূল প্রতিপাদ্য।

বঙ্গভাষা নামকরণের সার্থকতা : ‘বঙ্গভাষা’ নামকরণের মধ্য দিয়ে একটি ভাষার প্রতি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে, তা হচ্ছে বাংলা ভাষা। কবি প্রথম জীবনে বাংলা ভাষার প্রতি বিমুখ ছিলেন, কিন্তু ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য সাধনা করে সফলতা না পাওয়ায় তিনি আবার বাংলার কাছে আত্মসমর্পণ করেন, যা আলোচ্য কবিতার বিষয়বস্তু।

এ কবিতায় কবির একটি অখণ্ড ভাব-কল্পনা প্রকাশিত হয়েছে, যা চমৎকারভাবে বিকশিত হয়ে ক্রমে পরিণতির দিকে এগিয়ে মাতৃভাষার প্রতি উপেক্ষাজনিত মনোবেদনার কাছে শেষ হয়েছে। ফলে এতে কবির সুগভীর হৃদয়াবেগই শুধু প্রকাশিত হয়নি- সাথে সাথে মাতৃভাষার প্রতি তাঁর প্রগাঢ় মমত্ববোধও প্রকাশ পেয়েছে। এ সকল দিক পর্যালোচনা করে বলা যায়, ‘বঙ্গভাষা’ নামকরণ সার্থক ও সুন্দর হয়েছে।

উপসংহার : বঙ্গভাষা কবিতাটি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের একটি অনবদ্য সৃষ্টি। সাহিত্য-সংস্কৃতি, শিল্পকলা ও নন্দনতত্ত্বে সঠিক, আকর্ষণীয় ও শিল্পবোধসম্পন্ন নামকরণ অত্যাবশ্যক। যথার্থ নামকরণ রচনার সৌন্দর্য বাড়ায়। আলোচ্য ‘বঙ্গভাষা’ কবিতায় কবির দেশপ্রেম ও মাতৃভাষাপ্রীতির হিরন্ময় প্রকাশ কবিতাটিকে সুখপাঠ্য ও হৃদয়স্পর্শী করে তুলেছে। তাই ‘বঙ্গভাষা’ নামকরণ কবিতাটিকে তাৎপর্যমণ্ডিত, আকর্ষণীয় ও অর্থবহ করেছে।

শিক্ষাগার

প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে

মাহমুদুল হাসান

শিক্ষাগত যোগ্যতা
গণিতে অনার্স ও মাস্টার্স

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ফাজিল সম্পন্ন

গোপালপুর দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসা

বিশেষ দক্ষতা

বাংলা সাহিত্য • গণিত • ইসলামিক শিক্ষা

অভিজ্ঞতা

শিক্ষকতা ও ৫+ বছর কন্টেন্ট রাইটিং

আমাদের লক্ষ্য

শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা সামগ্রী প্রদান করা। ২০২৩ সাল থেকে লাখো শিক্ষার্থী শিক্ষাগার থেকে উপকৃত হচ্ছে।

Leave a Comment