হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

পথ জানা নাই গল্পের আলোকে গহুরালির চরিত্র/কেন্দ্রীয় চরিত্র

প্রশ্ন :॥ ‘পথ জানা নাই’ গল্পের আলোকে গহুরালির চরিত্র বিশ্লেষণ কর।

অথবা, “মন্বন্তরে গহুরালী নিঃস্ব হইয়াছিল বাহিরে, এবারে হইল অন্তরে”- ‘পথ জানা নাই’ গল্প অবলম্বনে অন্তরে-বাইরে নিঃস্ব গহুরালীর জীবন-যন্ত্রণার চিত্র অঙ্কন কর।

অথবা, শামসুদ্দীন আবুল কালামের ‘পথ জানা নাই’ গল্পের গহুরালির চরিত্র বিশ্লেষণ
কর।

অথবা, শামসুদ্দীন আবুল কালাম রচিত ‘পথ জানা নাই’ গল্পের প্রধান বা কেন্দ্রীয় চরিত্রটি বিশ্লেষণ কর।

উপস্থাপনা : বাংলা সাহিত্যের স্বনামধন্য সাহিত্যিক, প্রথিতযশা গল্পকার শামসুদ্দীন আবুল কালাম রচিত ‘পথ জানা নাই’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র গফুর আলী ওরফে গহুরালি। লেখক অত্যন্ত নিপুণ শৈল্পিক তুলিতে গহুরালির চরিত্র বিকশিত করেছেন আলোচ্য গল্পে। একই সাথে তার জীবন-যন্ত্রণার আলেখ্যও রচনা করেছেন ।

গহুরালির চরিত্র

১. গহুরালির পরিচয় : শামসুদ্দীন আবুল কালাম রচিত ‘পথ জানা নাই” গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র গহুরালি দক্ষিণ বাংলার এক অনুন্নত গ্রাম মাউলতলার অধিবাসী। নিজের সামান্য জমিজমা চাষ করে সে। পরিবারে তার একমাত্র জীবনসঙ্গিনী হাজেরা ছাড়া আর কেউ নেই ।

আরও জানো : পথ জানা নাই গল্পের মূলভাব/ বিষয়বস্তু/সার-সংক্ষেপ

২. অশিক্ষিত : গহুরালি অশিক্ষিত এক গ্রাম্য কৃষক। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়নি সে। প্রাচীনকালের চিন্তা-চেতনাতেই তার জীবন সীমাবদ্ধ ছিল। শহর সম্পর্কে সে ছিল একেবারেই অজ্ঞ। নতুন সড়ক নির্মাণে তার জমির প্রয়োজন হলে সে জোনাবালিকে উত্তর দিয়েছিল, “মোডে পাঁচকুড়া আমার ভুঁই, হের দুই কুড়াই সড়কে খাইলে আমি খামু কী?”

৩. যুক্তি অনুসারী : গহুরালি সড়ক নির্মাণে জমি না দিতে চাইলে জোনাবালি তাকে নতুন সড়ক নির্মাণে কী কী সুবিধা আছে, সেসব যুক্তি প্রদর্শন করলে সে সহজেই রাজি হয়ে যায় ৷

৪. মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী : নতুন জীবনের প্রত্যাশায় গহুরালি মনে মনে ঠিক করে রাস্তার জন্য জমি দেবে। এ ব্যাপারে সে স্ত্রীকেও বোঝায়, “অতোশতো ভাবতে গেলে কী আর দ্যাশের- দশের কাম হয়? সকলেরই মঙ্গলের জন্য যে কাম তার লইগ্যা সকলেরই কিছু কিছু ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে।”

আরও জানো : পথ জানা নাই গল্পের নামকরণের সার্থকতা

৫. নতুন জীবনের প্রত্যাশী : জোনাবালির যুক্তি-পরামর্শে প্রভাবিত হয়ে এক নতুন জীবনের প্রত্যাশায় গহুরালির মনপ্রাণ ভরে ওঠে। তার মনে হলো- “তাহার চেয়ে সম্মুখে যে নয়া-জীবনের হাতছানি তাহাকে বরণ করিয়াই দেখুক না এবার।”

৬. ভাগ্য পরিবর্তন প্রত্যাশী : হতদরিদ্র এক পিতার সন্তান ছিল জোনাবালি, কিন্তু সে শহরে গিয়ে নিজের অনেক উন্নতি করেছে। অনেক ধনসম্পদের মালিক হয়েছে। দরিদ্রের ছেলে হয়ে যদি জোনাবালি ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে তাহলে সেও (গহুরালি) পারবে; এ প্রত্যাশায় গহুরালি সড়কের জন্য জমি দান করে ।

৭. সমৃদ্ধ জীবনের স্বপ্ন : গহুরালি সড়কের মাধ্যমে এক নতুন, উন্নত ও সমৃদ্ধ জীবনের স্বপ্নে বিভোর ছিল। তার স্বপ্নের দিগন্ত— “সবুজ বনানীর সীমারেখায়, কাশবনের উদ্দাম ইশারায় সে দিগন্ত যেন কোন সুদূর স্বপ্ন-রাজ্যে হারাইয়া গিয়াছে।” স্ত্রীকে সে বোঝাল- “এ কী কেবল সড়ক ! একটা নোতুন জীবনেরো রাস্তা।”

৮. শহর সম্পর্কে অভিজ্ঞতা : জোনাবালির প্রচেষ্টায় নতুন সড়ক নির্মিত হওয়ার পর একে একে গ্রামের সব পুরুষই শহর ঘুরে এলো। গহুরালিও ঘুরে এল। শহরবাসীর আত্মকেন্দ্রিকতা, উগ্র আধুনিকতা ও প্রাণহীনতা তাকে মর্মাহত করে। শহরবাসীর দৃষ্টি সম্পর্কে তার অভিমত হলো, “সে দৃষ্টিতে মায়া নয়, মমতা নয়, আত্মীয়তার শুভ ইঙ্গিতও নয়, শুধু তাচ্ছিল্যমাখা বলিয়াই বোধ হইয়াছে তাহার।”

৯. সহজ-সরল : গহুরালি গ্রামের সহজ-সরল এক কৃষক। সরলতা তার চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। জোনাবালির কথায় সহজেই সে নিজের পাঁচকুড়া জমি থেকে দুই কুড়া দান করে দেয় সড়ক নির্মাণের জন্য। শহরে গিয়ে সরল বিশ্বাসে বারাঙ্গনা কর্তৃক প্রতারণার শিকার হয়। মিলিটারির দালালকে বিশ্বাস করে স্ত্রী হাজেরাকে হারায়।

১০. পরিশ্রমী : অনেক পরিশ্রমী লোক ছিল গহুরালি। স্ত্রী-সংসার নিয়ে সুখে দিনাতিপাত করার জন্য সে তরিতরকারি শহরে নিয়ে বিক্রি করে। তার পরিশ্রমের ফলেই মোটামুটি সচ্ছলতা ফিরে আসে পরিবারে। এমনকি খড়ের ঘরে টিনের চাল উঠাতে সক্ষম হয়।

১১. বিশ্বাসপ্রবণ : সহজ-সরল মনের গহুরালি সহজেই মানুষকে বিশ্বাস করতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মাউলতলা গ্রাম যখন মন্বন্তরে বিপর্যস্ত, তখন মিলিটারীর ঠিকাদারের এক দালালের সাথে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে গহুরালির।

তার মাধ্যমে আয়-উপার্জনের একটা আশাও ছিল তার সরল মনে। তার এ বিশ্বাসপ্রবণতার সুযোগ নিয়ে ঠিকাদারের দালাল তার প্রিয়তমা স্ত্রী হাজেরাকে ফুসলিয়ে শহরে নিয়ে যায়। মন্বন্তরে গহুরালি বাইরে নিঃস্ব হয়েছিল, এবার নিঃস্ব হলো অন্তরে ।

উপসংহার : গহুরালি সহজ-সরল, বিশ্বাসপ্রবণ গ্রাম্য নিরক্ষর কৃষকদের প্রতিনিধি। তার চোখে ছিল নতুন জীবনের স্বপ্ন, কিন্তু নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা তার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। স্বপ্নভঙ্গের পাশাপাশি অন্তরে-বাইরে নিঃস্ব হয়েছে গহুরালি। গহুরালির জীবনযন্ত্রণার একটি নিখুঁত ভাষাচিত্র অঙ্কন করা হয়েছে ‘পথ জানা নেই’ গল্পে।

শিক্ষাগার

প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে

মাহমুদুল হাসান

শিক্ষাগত যোগ্যতা
গণিতে অনার্স ও মাস্টার্স

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ফাজিল সম্পন্ন

গোপালপুর দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসা

বিশেষ দক্ষতা

বাংলা সাহিত্য • গণিত • ইসলামিক শিক্ষা

অভিজ্ঞতা

শিক্ষকতা ও ৫+ বছর কন্টেন্ট রাইটিং

আমাদের লক্ষ্য

শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা সামগ্রী প্রদান করা। ২০২৩ সাল থেকে লাখো শিক্ষার্থী শিক্ষাগার থেকে উপকৃত হচ্ছে।

Leave a Comment