যার কোন পরিবর্তন নেই বা কোন অবস্থাতেই ব্যয় নেই তার নাম হলো অব্যয়। অব্যয় শব্দটির সাথে কোন বিভক্তি চিহ্ন যুক্ত হয় না, একবচন বা বহুবচন হয় না এবং এগুলির স্ত্রী-পুরুষ বাচকতা নির্ণয় করা যায় না। বাক্যের অর্থকে পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করার জন্য অব্যয়ের গুরুত্বপূর্ণ অনস্বীকার্য। নিচে অব্যয় পদের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
সংজ্ঞা : বাংলা ভাষায় এমন কতগুলো শব্দ বা পদ আছে যাদের কারক, বচন, লিঙ্গ, বিভক্তি ইত্যাদি ভেদে কোন আকার ও আকৃতির পরিবর্তন হয় না, তাদেরকে অব্যয় পদ বলে।
অর্থাৎ যার কোন ব্যয় নেই, তাকে অব্যয় বলে। যেমন— ও, এবং, আর, না, বা, অথবা, দ্বারা, অপেক্ষা, পর্যন্ত, নতুবা, তথাপি, অর্থাৎ ইত্যাদি অব্যয় পদ।
অব্যয় পদের উদাহরণ বাক্যে প্রয়োগ :
মিনা ও রিনা দুই বোন ৷ রহিম এবং করিম স্কুলে যায়। রাখাল গরু চরায় আর গান গায়। মাহিন অথবা শাহিন কাজটি করেছে। লোকটি গরিব কিন্তু সৎ। তুমি যাও নতুবা আমাকেই যেতে হবে। ফল চাই, আম কিংবা জাম একটা হলেই হলো। বাঃ, বাংলাদেশ খুব ভালো খেলছে। আহা! বইটি পেয়ে আবার হারালাম ৷
অব্যয় পদের প্রকারভেদ :
অব্যয় পদ প্রধানত পাঁচ প্রকার। যথা-
- সমুচ্চয়ী অব্যয় ৷
- পদান্বয়ী অব্যয় ৷
- অনন্বয়ী অব্যয় ৷
- অনুকার বা ধনাত্মক অব্যয় ৷
- নিত্য সম্বন্ধীয় অব্যয় ৷
১। সমুচ্চয়ী অব্যয় : যে অব্যয় দুটি পদের সাথে বা দুটি বাক্যের সাথে সংযোজন বা বিয়োজন ঘটায়, তাকে সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে। যেমন-মিনা ও রিনা দুই বোন। মুনীর ঢাকা যাবে এবং সেখানে লেখাপড়া করবে। করিম কিংবা রহিম কাল আসবে। আমি জামা অথবা জুতা কিনব।
আরও শিখুন : সমুচ্চয়ী অব্যয় কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি উদাহরণ সহ
২। পদান্বয়ী অব্যয় : যে অব্যয় বিশেষ্য ও সর্বনামের পর বিভক্তির ন্যায় অর্থ প্রকাশ করে তাকে পদান্বয়ী অব্যয় বলে। যেমন-মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়। মাহিনকে দিয়ে একাজ হবে না। এ সব বাক্যে ‘থেকে’ ‘দিয়ে’ অব্যয় দুটি বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের পরে বিভক্তির ন্যায় ব্যবহৃত হয়েছে। এভাবে ব্যবহৃত অব্যয়ই পদান্বয়ী অব্যয়।
৩। অনন্বয়ী অব্যয় : যে অব্যয় পদ বাক্যের অন্য কোনো পদের সাথে সম্পর্ক না রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে ভাব প্রকাশ করে, তাকে অনন্বয়ী অব্যয় বলে। যেমন-ওহে! তুমি কেমন আছ? ছি! ছি! তুমি এত খারাপ? এখানে ব্যবহৃত অব্যয়- ওহে! ছি! ছি! অন্য কোনো পদের সাথে সম্পর্ক না রেখে নিজেরাই স্বাধীনভাবে ভাব প্রকাশ করেছে। এগুলোই অনন্বয়ী অব্যয়।
৪। অনুকার বা ধনাত্মক অব্যয় : যে অব্যয় কোনো ধ্বনির অনুকরণে বা ধ্বনির অস্তিত্ব বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, তাকে অনুকার বা ধনাত্মক অব্যয় বলে। যেমন-মাছি ভন্ ভন্ করছে। রিমঝিম বৃষ্টি পড়ছে। এখানে ভন্ ভন্, রিমঝিম পদ দুটো একক পদ নয়। মাছির ডাকের অনুকরণে ভন্ ভন্ পদটির উদয়। তেমনি বৃষ্টির শব্দের অনুকরণে রিমঝিম পদটির উদয়। এরূপ কোনো বস্তু, প্রাণী বা দ্রব্যের কার্যাবলির অনুকরণে যে অব্যয় পদের উৎপত্তি, তাদের অনুকার বা ধনাত্মক অব্যয় বলে।
৫। নিত্য সম্বন্ধীয় অব্যয় : যে অব্যয় জোড়ায় জোড়ায় সম্পর্ক স্থাপন করে ব্যবহৃত হয়, তাকে নিত্য সম্বন্ধীয় অব্যয় বলে। যেমন-যেমন কর্ম তেমন ফল। যত গর্জে তত বর্ষে না। এখানে যেমন-তেমন, যত-তত অব্যয়গুলো পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। একটি ছাড়া অপরটি বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে না। পরস্পর স্থায়ী সম্পর্ক বলেই অব্যয়গুলো নিত্য সম্বন্ধীয় ।