বাংলা ভাষায় নানা উপায়ে শব্দ গঠিত হয়। শব্দগঠন প্রক্রিয়ায় ভাষায় নতুন নতুন শব্দ তৈরি হয় এবং এর মাধ্যমে বাংলা ভাষার শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ হয়।
শব্দ গঠন বলতে কি বুঝ?
উৎপত্তিগতভাবে সাধিত শব্দই শব্দগঠনের মৌলিক প্রকার, যা নতুন শব্দ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। শব্দের অর্থ-বৈচিত্র্য এবং ব্যবহারউপযোগী করে তোলার জন্য শব্দ তৈরির প্রক্রিয়াকে শব্দ গঠন বলে।
বাংলা ভাষায় নতুন শব্দ গঠনের প্রধান উপায়
বাংলা ভাষায় নানা উপায়ে নতুন শব্দ গঠিত হয়। যেমন-
১। বিভক্তিনিম্পন্ন নতুন শব্দ: শব্দের পরে বিভক্তি যুক্ত হয়ে বিভক্তিনিম্পন্ন নতুন শব্দ গঠিত হয়। যেমন- বালক + কে = বালককে; বন + এ = বনে।
২। প্রত্যয়নিষ্পন্ন নতুন শব্দ: শব্দ বা ধাতুর পরে প্রত্যয় যুক্ত হলে প্রত্যয়নিষ্পন্ন নতুন শব্দ গঠিত হয়। যেমন- রাঁধ + না = রান্না; মিঠা + আই = মিঠাই।
৩। উপসর্গনিষ্পন্ন নতুন শব্দ: শব্দের পূর্বে উপসর্গ যুক্ত হলে উপসর্গনিষ্পন্ন নতুন শব্দ গঠিত হয়। যেমন- অ + জানা = অজানা; উপ + হার = উপহার।
৪। সন্ধিনিষ্পন্ন নতুন শব্দ: সন্ধির সাহায্যে সন্ধিনিষ্পন্ন নতুন শব্দ গঠিত হয়।যেমন- সু + আগত = স্বাগত; বনঃ + পতি = বনস্পতি; উৎ + শ্বাস = উচ্ছ্বাস।
৫। সমাসনিষ্পন্ন নতুন শব্দ: সমাসের সাহায্যেও নতুন শব্দ গঠিত হয়। যেমন- ত্রি (তিন) ভুবনের সমাহার = ত্রিভুবন; জায়া ও পতি = দম্পতি; মহান যে রাজা = মহারাজ।
আরো পড়ুন : শব্দ গঠন কাকে বলে ? বাংলা ভাষায় শব্দ গঠনের প্রয়োজনীয়তা
৬। বর্ণের সাথে বর্ণ যোগ করে। যেমন- ক + ল = কল; ক+ ল + স = কলস; ক + ল + ম = কলম; ক + ম = কম; ক + ম + ল = কমল; ফ + ল = ফল ইত্যাদি।
৭। ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গো ‘কার’ যোগ করে। যেমন- ম + 1 (আকার)= মা; মা + মা= মামা ইত্যাদি।
৮। ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে ব্যঞ্জনবর্ণের সংযোগ ঘটিয়ে বা ‘ফলা’ যোগ করে। যেমন- ক্র + ম = ক্রম; ক +র +ম = কর্ম ইত্যাদি।
৯। পদ পরিবর্তন করে। যেমন- বাদল > বাদলা; ঈশ্বর> ঐশ্বরিক ইত্যাদি।
১০। পদেরদ্বিরুক্তির সাহায্যে। যেমন- রাজায় রাজায়; সময় সময় ইত্যাদি।
১১। ধ্বন্যাত্মক শব্দের মাধ্যমে। যেমন- কনকন; ঝিরঝির; ঝনঝন ইত্যাদি।
১২। বাগবিধি বা প্রবাদ-প্রবচনরূপে বিশেষ অর্থ প্রকাশের উপায় হিসেবে। যেমন- অর্ধচন্দ্র; চিৎপটাং; কুচকুচে।
১৩। ব্যবহৃত শব্দকে সংক্ষেপে প্রকাশ করে। যেমন- টেলিভিশনের
বদলে ‘টিভি’, ‘ইনফ্লুয়েঞ্জার বদলে ‘ফু’ ।
১৪। সংখ্যাবাচক শব্দগঠন করে: গাণিতিক সংখ্যাকে বর্ণের সাহায্যে
প্রকাশ করলে সংখ্যাবাচক শব্দ গঠিত হয়। যেমন- ৯> নয়; ১২> বারো; ২০ > বিশ; ৮০ > আশি ইত্যাদি।