উপস্থাপনা :
গানের সুরের মতো আনন্দ উৎসবের দেশ বাংলাদেশ। ষড়ঋতুর রূপবৈচিত্র্যে এ দেশ যেমন সৌন্দর্যময়, উৎসব আয়োজনেও তেমনি আকর্ষণীয়। সামাজিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক নানা উৎসব আনন্দে সারা বছরই মাতোয়ারা থাকে এ দেশের অধিবাসীরা ।
উৎসবের সংজ্ঞা :
আভিধানিক দৃষ্টিকোণে উৎসব বলতে আনন্দময় অনুষ্ঠানকে বোঝায়। অর্থাৎ যে সামাজিক সাম্প্রদায়িক বা পারিবারিক সমাবেশ থেকে সুখ, আনন্দলাভ করা যায় তাকে উৎসব বলে । তাছাড়া দেশব্যাপী সংঘটিত বড় ধরনের অনুষ্ঠানকে উৎসব বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের উৎসব গুলোকে কয়েকটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। যেমন- ধর্মীয় উৎসব, সামাজিক উৎসব, সাংস্কৃতিক উৎসব, পারিবারিক উৎসব, বরেণ্য ব্যক্তিদের স্মরণে আয়োজিত উৎসব ইত্যাদি ।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য – রচনা : ২০ পয়েন্ট
উৎসবের প্রকারভেদ:
উৎসব নানা ধরনের। ধর্মীয় উৎসব, সামাজিক উৎসব, পারিবারিক উৎসব। উৎসবের রূপও ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কোথাও খেলাধুলার মাধ্যমে উৎসব, কোথাও পিকনিকের উৎসব, কোথাও ভ্রমণের উৎসব। এ সবকিছুকে একসঙ্গে পাওয়া যায় তেমন উৎসব খুব বিরল।
ধর্মীয় উৎসব :
বাংলাদেশের ধর্মীয় উৎসবগুলোর অন্যতম হলো- মুসলমানদের ঈদ, হিন্দুদের পূজা পার্বণ, খ্রিস্টানদের বড়দিন, গারোদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব হলো ওয়ানগালা, চাকমাদের সবচেয়ে বড় জাতিগত উৎসব বিজু ইত্যাদি।
ঈদুল ফিতর উৎসব:
মুসলমানদের সর্ববৃহৎ উৎসব হলো ঈদ। বছরে মোট দুটি ঈদ- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর সমাজে শান্তির ফল্গুধারা নিয়ে আসে ঈদুল ফিতর। রহমত বরকত আর মাগফিরাতের বাণী নিয়ে আসে মাহে রমযান, রমযান শেষে আসে ঈদুল ফিতর।
ঈদুল আযহা উৎসব :
বাংলাদেশের উৎসব এর আরেকটি প্রদান হলো ঈদুল আযহা। ত্যাগের মহিমা শেখাতে আমাদের মাঝে আসে ঈদুল আযহা। আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে হযরত ইবরাহীম (আ) স্বীয় পুত্র ইসমাঈলকে কুরবানি করার জন্য প্রস্তুত হলে আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে বেহেশত থেকে দুম্বা প্রেরণ করেন । সে ধারায় আজও আমরা ঈদুল আযহার দিনে মহান প্রভুর স্মরণে পশু কুরবানি করে থাকি ।
আরও পড়ুন : ঈদ উৎসব – বাংলা রচনা | ক্লাস 6, 7, 8, 9, 10
অন্যান্য উৎসব :
দুটি ঈদ ছাড়াও মুসলমানরা ঈদে মিলাদুন্নবী (স), শবে বরাত, শবে মেরাজ, শবে কদর, মহররম ইত্যাদি ধর্মীয় উৎসব অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে পালন করে থাকে ।
পূজাপার্বণ উৎসব :
হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো দুর্গাপূজা। এ উৎসবের মতো আর কোনো উৎসবই এমন জাঁকজমকের সাথে পালিত হয় না। এ কারণে দুর্গাপূজাকে ‘কলির অশ্বমেধ’ বলা হয়। দুর্গাপূজার শাস্ত্রীয় কাহিনী হলো- দুর্গম নামক অসুরকে বধ করায় মায়ের নাম হয় দুর্গা।
দুর্গম অসুরের কাজ ছিল জীবকে দুর্গতি দেয়া। সেই দুর্গমকে বধ করে যিনি জীবজগৎকে দুর্গতির হাত থেকে রক্ষা করেন তিনিই মা-দুর্গা। এছাড়াও হিন্দু সম্প্রদায়ের চৈতপূজা, সরস্বতী, রথযাত্রা, কালীপূজা, জন্মাষ্টমী ইত্যাদি পালিত হয়।
বুদ্ধ পূর্ণিমা উৎসব :
প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে আগত এক মহামানবকে কেন্দ্র করে বুদ্ধ পূর্ণিমা উৎসব শুরু হয়। বৌদ্ধ সমাজের এটি অতি পবিত্র উৎসব। মূলত এটি বৈশাখী পূর্ণিমা। তাছাড়া প্রবারণা ও কঠিন চীবরদান নামেও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একটি উৎসব হয়ে থাকে, সেটিও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একটি বড় উৎসব।
আরও : বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা (২০ পয়েন্ট) SSC, HSC- pdf
বড় দিনের উৎসব :
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব হলো বড়দিন। এর ইংরেজি নাম ক্রিসমাস। এর মূল বিষয় হচ্ছে যিশুখ্রিস্টের আবির্ভাব উপলক্ষে আনন্দ উপভোগ । ২৫ ডিসেম্বর যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
সামাজিক উৎসব :
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারি তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে জাতীয় উৎসবের মর্যাদা দেয়া হয়ে থাকে। ২৬ মার্চকে স্বাধীনতা দিবস, ১৬ ডিসেম্বরকে বিজয় দিবস হিসেবে আনন্দ উৎসবে পরিণত করা হলেও একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
১৯৫২ সালের এ দিনে বাংলা ভাষার জন্য সংগ্রাম করে সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারসহ অনেকেই প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। তাদের স্মরণে বাংলা একাডেমীতে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয় ।
বইমেলা মেলা উৎসব :
বইমেলা এদেশের জাতীয় জীবনে অভাবনীয় গুরুত্বের অধিকারী একটি জাতীয় উৎসব। এদেশের সভ্যতা সংস্কৃতিতে বইমেলা অবিচ্ছেদ্য একটি দিক হিসেবে বিবেচিত হয়। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে লক্ষ লক্ষ পাঠক ও লেখক-প্রকাশকের অভূতপূর্ব মিলন মেলায় পরিণত হয় বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশের বইমেলা।
কর্মক্লান্ত মানুষেরা এ মেলা উপলক্ষ্যে তাদের পছন্দের লেখক ও তাদের প্রকাশিত বইয়ের সাথে পরিচিতি লাভ করে। পছন্দের বই ক্রয় করে নিজের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধির সুবর্ণ সুযোগপ্রাপ্ত হয়। সর্বোপরি বইয়ের পঠন ও পাঠনে বইমেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরও : রচনা : বাংলাদেশের পোশাক শিল্প ( ২০ পয়েন্ট ) – PDF
বাংলা নববর্ষের উৎসব :
বাংলা নববর্ষ বাংলাদেশের প্রধান সাংস্কৃতিক উৎসব। পয়লা বৈশাখ হচ্ছে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। সারা বছরের দুঃখ-বেদনা ভুলে এ দিন সবাই আনন্দে মেতে উঠে। পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন এ দেশের প্রাচীন ঐতিহ্য। এ সময় ব্যবসায়ীদের ‘হালখাতা’ একটি জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান হিসেবে পালিত হয়।
পরিবারকেন্দ্রিক উৎসব :
মনীষীদের স্মরণোৎসব :
দুর্গোৎসব :
দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসব হলো শক্তির দেবী দুর্গার পূজাকে কেন্দ্র করে প্রচলিত একটি উৎসব। দুর্গাপূজা সমগ্র হিন্দুসমাজেই প্রচলিত ৷ তবে বাঙালি হিন্দুসমাজে এটি অন্যতম বিশেষ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। আশ্বিন ও চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে দুর্গাপূজা করা হয়। আশ্বিন মাসের দুর্গাপূজা শারদীয় দুর্গাপূজা এবং চৈত্র মাসের দুর্গাপূজা বাসন্তী দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। শারদীয় দুর্গাপূজার জনপ্রিয়তা বেশি। বাসন্তী দুর্গাপূজা মূলত কয়েকটি পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – প্রবন্ধ রচনা ২০ পয়েন্ট
জাতীয় উৎসব :
উৎসবের বিভিন্ন দিক :
উৎসবের তাৎপর্য :
উপসংহার :
ক্লান্তিময় কোলাহলপূর্ণ জীবনে উৎসব নবপ্রাণ ও নির্মল আনন্দ সঞ্চার করে। সেজন্য উৎসবের শালীনতা ও মাহাত্ম্য রক্ষা করতে হবে। আন্তরিকতার সাথে দলমত ও জাতিভেদ নির্বিশেষে উৎসবকে করে তুলতে হবে ঐক্য ও মিলনের প্রতীক। সেক্ষেত্রে প্রত্যেকের স্বাধীনতা তথা ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষা করতে হবে। তবেই উৎসব আমাদের কাছে নির্মল আনন্দের উৎস এবং মানবীয় সম্প্রীতির উপাদান হিসেবে পরিণত হবে।
ধন্যবাদ, খুব ভালো লিখেছেন।