গোসল ফরজ হওয়ার কারণ সমূহ এবং যেসব কারণে গোসল ফরয হয় না

গোসল ফরজ হওয়ার কারণ সমূহ

মাসআলা— ১ : নিদ্রিত বা জাগ্রত অবস্থায় যৌবনসুলভ উত্তেজনায় বীর্যপাত ঘটলে গোসল ফরয হয়। তা স্বামী বা স্ত্রীর হস্ত স্পর্শে হোক কিংবা মনের চিন্তা বা অন্য কোন কারণে হোক ।

মাসআলা– ২ : ঘুম থেকে জেগে যদি শরীরে বা কাপড়ে মনি বা বীর্য দেখতে পায় তবে গোসল ওয়াজিব হবে, ঘুমে কোন স্বপ্ন দেখুক বা না দেখুক ।

মনি ও মযীর পরিচয় :

যৌবনের উত্তেজনায় প্রথম দিকে যে পানি বের হয়ে উত্তেজনা কমে না; বরং আরো বেড়ে যায়, তাকে মযী বলে। আর স্ফূর্তি ও মজা অনুভূত হয়ে পরে যে পানি বের হয় তাকে মনি বলে ৷ মযী ও মনির পার্থক্য বুঝার উপায় এই যে—

(ক) মনি বা বীর্য বের হলে মনে তৃপ্তি পেয়ে উত্তেজনা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। আর মযী বের হলে তা ঠান্ডা হয় না; বরং আরো বাড়ে।

(খ) মযী পালা ও পানির রং হয়, কিন্তু মনি বা বীর্য অপেক্ষাকৃত গাঢ় ও সাদা বর্ণের হয় ।

(গ) মনি বা বীর্য দুর্গন্ধময় হয়, কিন্তু মযীতে তা হয় না ।

(ঘ) মনি বের হলে গোসল ওয়াজিব হয়। আর মযী বের হলে গোসল ওয়াজিব হয় না, শুধু ওযু নষ্ট হয়।

মাসআলা— ৩ : স্বামীর যৌনাঙ্গের শুধু অগ্রভাগ অর্থাৎ খতনার জায়গাটুকু ভেতরে ঢুকলেই গোসল ওয়াজিব হবে। যদিও এতে কিছু বের না হোক। সামনের দ্বার দিয়ে ঢুকালে এর যে হুকুম কোন পাপিষ্ঠ পেছনের মলদ্বার দিয়ে ঢুকালেও তার একই হুকুম । অর্থাৎ বীর্য বের হোক বা না হোক উভয় অবস্থায় ও উভয় ক্ষেত্রে গোসল ওয়াজিব হবে । যদিও এভাবে পেছনের মলদ্বার দিয়ে প্রবেশ করানো এবং করতে দেয়া মারাত্মক পাপের কাজ ।

মাসআলা- ৪ : সামনের যোনিপথ দিয়ে মাঝে মাঝে যে রক্ত (তিন থেকে দশ দিন) আসে তাকে ‘হায়েয’ বলে । এ রক্ত আসা বন্ধ হলে গোসল করা ওয়াজিব।

আরও পড়ুন : গোসলের দোয়া,ফরজ,সুন্নাত ও ওয়াজিব,সুন্নাত,মুস্তাহাব গোসলসমূহ

চারটি কারণে গোসল ওয়াজিব :

মোট কথা, নিম্নে বর্ণিত এ চার কারণে গোসল ওয়াজিব হয়

(১) উত্তেজনার সাথে মনি বা বীর্য বের হলে ।
(২) পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ যোনির ভেতর প্রবেশ করলে ।
(৩) হায়েয ও নিফাসের রক্ত বন্ধ হলে (এ দু’টোর বিস্তারিত বিবরণ পরে আসবে)।

মাসআলা- ৫ : অপ্রাপ্ত বয়স্কা মেয়ের সাথে সঙ্গম করলে সে মেয়ের উপর গোসল ওয়াজিব নয় বটে, কিন্তু অভ্যাস করানোর জন্য গোসল করা উচিত ।

মাসআলা- ৬ : স্বপ্নে দেখলো স্বামীর সাথে সঙ্গম করছে এবং স্বাদও অনুভব করছে, কিন্তু জেগে দেখে, বীর্য বের হয়নি। এতে গোসল ওয়াজিব হবে না। হাঁ যদি মনি বা বীর্য দেখতে পায় কিংবা কাপড় বা শরীর কিছুটা ভিজে ভিজে মনে হয়, তবে গোসল ওয়াজিব হবে।

মাসআলা- ৭: সামান্য কিছু বীর্য বের হয়েছে দেখে গোসল করল । পরে আবার বীর্য বের হলো, তখন আবার গোসল করতে হবে । তবে এ বীর্য যদি স্বামীর বলে চিনতে পারা যায় তবে পুনরায় গোসল ওয়াজিব হবে না ।

মাসআলা- ৮: গোসল ওয়াজিব হবার জন্য বীর্যপাতে উত্তেজনা শর্ত । যদি কোন রোগের কারণে উত্তেজনা ছাড়া বীর্যপাত ঘটে, তবে গোসল ওয়াজিব হবে না, কিন্তু ওযু নষ্ট হবে।

মাসআলা— ৯ : স্বামী স্ত্রী এক বিছানায় শয়ন করলো, জেগে কাপড়ে বা বিছানায় বীর্য বা দাগ দেখতে পেল, কিন্তু কারো স্বপ্নদোষের কথা মনে নেই । তখন উভয় জনকে গোসল করতে হবে। কারণ তাদের জানা নেই এটা কার বীর্য

মাসআলা-১০ : ঘুম থেকে উঠে যদি কোন পুরুষ তার পুরুষাঙ্গ উত্তেজিত অবস্থায় দেখতে পায় এবং স্বপ্নদোষ ছাড়া কিংবা শরীর বা কাপড়ে কোন দাগ ও ভিজা ছাড়া শুধু পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগে কিছু মযী দেখতে পায়, তবে গোসল ওয়াজিব হবে।

আরও পড়ুন : গোসল করার নিয়ম এবং পর্দার অন্তরালে বিবস্ত্র গোসল করা যাবে ?

যেসব কারণে গোসল ফরজ হয় না

মাসআলা– ১ : কোন রোগবশতঃ বীর্য পাতলা হয়ে বা কোন আঘাতপ্রাপ্তিবশতঃ উত্তেজনা ছাড়া ধাতু নির্গত হলে তাতে গোসল ফরয হয় না ।

মাসআলা– ২ : স্বামী-স্ত্রী শুধু লিঙ্গ স্পর্শ করে কিছুমাত্রও ভেতরে প্রবেশ করানো হলো না, বীর্যও নির্গত হলো না, এতে গোসল ফরয হয় না।

মাসআলা— ৩ : শুধু মযী বের হলে কেবল ওযু যায়, গোসল ফরয হয় না।

মাসআলা- ৪ : ঘুম থেকে উঠার পর যদি স্বপ্নদোষের কথা স্মরণ থাকে কিন্তু কাপড়ে বা শরীরে কোন নিদর্শন দেখা না যায়, তাহলে গোসল ফরয হয় না ।

মাসআলা- – ৫ : স্ত্রীলোকদের নির্গত রক্ত তিন প্রকার— হায়েয, নিফাস এবং এস্তেহাযা। হায়েয ও নিফাসের রক্ত আসে রেহেম হতে, তাতে গোসল ফরয হয় । কিন্তু এস্তেহাযার রক্ত রোগের কারণে আসে, রেহেম থেকে নয় । এতে গোসল ফরয হবে না ।

মহিলার লজ্জাস্থানে আঙ্গুল প্রবেশ করালে গোসল করতে হবে কি?

প্রশ্নঃ কোন ব্যক্তি নিজের স্ত্রীর লজ্জাস্থানে উভয়ের কামোত্তেজনা অবস্থায় অথবা কামোত্তেজনাহীন অবস্থায় নিজের হাতের অঙ্গুলী ঢুকিয়ে দিল, এই অবস্থায় উভয়ের জন্য বা শুধু স্ত্রীর জন্য কি গোসল করা ফরয হবে?

উত্তরঃ স্ত্রীর লজ্জাস্থানে অঙ্গুলী প্রবেশ করানোর সময় যদি সে কামোত্তেজিত অবস্থায় থাকে, তাহলে এক বর্ণনা মতে স্ত্রীর উপর গোসল করা ফরয। আবার অন্য এক বর্ণনানুসারে গোসল করা ফরয নয়। অবশ্য যদি স্ত্রীর বীর্যপাত ঘটে যায়, তাহলে তার জন্য গোসল করা ফরয হবে, তবে বীর্যপাত না ঘটলেও সতর্কতামূলক গোসল করে নেয়াই উত্তম। আর যদি স্ত্রীর কামোত্তেজনা না থাকে, তবে কারও মতেই তার জন্য গোসল করা ফরয নয়। এ ছাড়া স্বামী যে স্ত্রীর লজ্জাস্থানে নিজের অঙ্গুলী ঢুকিয়েছে তার জন্য গোসল করা ফরয নয় ।

গোসল ফরয এমন ব্যক্তির তাফসীর হাদীস, ফেকাহর কিতাব পাঠ করা

প্রশ্নঃ যে ব্যক্তির উপর গোসল করা ফরয, তার জন্য কি হাদীস, তাফসীর, ফেকাহ্, কুরআন তরজমা ইত্যাদি কিতাব পাঠ করা এবং লেখা শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে জায়েয হবে?

উত্তরঃ গোসল ফরয এমন ব্যক্তির জন্য তাফসীর, হাদীস এবং ফেকাহর কিতাব স্পর্শ করা এবং পাঠ করা জায়েয আছে। এ অবস্থায় কুরআন শরীফ লেখার ক্ষেত্রে মতবিরোধ রয়েছে। যদি লেখার সময় কাগজে হাতের স্পর্শ না লাগে, তাহলে প্রয়োজনের সময় লেখার সুযোগ আছে। অবশ্য কোন অবস্থাতেই কাগজ স্পর্শ করা যাবে না। অযূ ব্যতিত কুরআনের তরজমা স্পর্শ করার ক্ষেত্রেও ফেকাহবিদরা কুরআন শরীফের ন্যায়ই বলেছেন। (আহসানুল ফাতাওয়াঃ খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৩৬)

আমার মূল লক্ষ্য একটাই (Sikkhagar-শিক্ষাগার) ওয়েবসাইটের হাত ধরে “শিক্ষা হবে উন্মুক্ত ও বাণিজ্যমুক্ত”। এই প্লাটফর্মে থাকবে একাডেমিক প্রস্তুতি, ভর্তি প্রস্তুতি, চাকরি প্রস্তুতি, স্পেশাল স্কিল এবং ধর্মীয় শিক্ষাসহ নানাবিধ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ।

Leave a Comment