ইসলামী শরীয়তে طهاره (তাহারাত) তথা পবিত্রতার গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্রতা ছাড়া কোন ইবাদাত গ্রহণযোগ্য নয় । আর পবিত্রতা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হলো পবিত্র পানি ।
তাহারাত শব্দের আভিধানিক অর্থ :-
طهاره (তাহারাত) শব্দটি فعاله - এর ওযনে বাবে نصر- ينصر এর মাসদার । শব্দটি "ط" বর্ণের হরকতের বিভিন্নতায় এটাকে তিন রকমে পড়া যায়। পঠনভেদে এর অর্থও ভিন্ন হয়। যেমন-
১. طهاره (যরব যোগে) النظافه তথা পবিত্রতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা।
2. طهاره (যের যোগে): اله النظافه তথা পবিত্রতার পাত্র।
৩. طهاره (পেশ যোগে) : ما به النظافه তথা যা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা যায় । যেমন- মাটি, পানি ইত্যাদি।
পবিত্র কুরআনেও এ শব্দের ব্যবহার পাওয়া যায়। যেমন- وان كنتم جنبا فاطهروا, অর্থাৎ যখন তোমরা অপবিত্র হও তখন পবিত্রতা অর্জন কর।
পারিভাষিক সংজ্ঞা :-
১. ফকীহদের মতে, তাহারাত -এর পারিভাষিক সংজ্ঞা হলো-
শরীয়তের নির্দেশিত পন্থায় পবিত্রতা অর্জন করাকে তাহারাত নামে অভিহিত করা হয়। যেমন- অযু, গোসল ও তায়াম্মুম দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা।
২. ‘ফাতহুল মুলহিম' গ্রন্থকার বলেন- অপবিত্রতা এবং কদর্যতা হতে শরীর, কাপড় ও স্থান পবিত্র করাকে তাহারাত বলা হয় ।
৩. কতিপয় ইসলামী আইন শাস্ত্রবিদ বলেন- প্রকৃত এবং বিধানগত অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা অর্জন করাকে তাহারাত বলা হয় ।
মূল সংজ্ঞা :- ইসলামি পরিভাষায় শরিয়ত নির্দেশিত পদ্ধতিতে দেহ, মন, পোশাক, খাদ্য, বাসস্থান ও পরিবেশ পরিষ্কার ও নির্মল রাখাকে তাহারাত বলে।
আরও পড়ুন :- অজুর নিয়ত,দোয়া, ফরজ,সুন্নত। অজু ভঙ্গের কারণ ও অজুর নিয়ম
যে সব পানি দ্বারা তাহারাত অর্জন বৈধ :-
১. বৃষ্টির পানি।
৩. কূপের পানি।
2. নদী ও সমুদ্রের পানি।
৪. পুকুরের পানি।
৫. ঝর্ণার পানি।
৬. উপত্যকার পানি।
৭. প্রবাহিত পানি। এ পানিতে যদি নাপাকের কোন চিহ্ন বর্তমান না থাকে তবে তা দ্বারা তাহারাত অর্জন জায়েয ।
৮. সন্দেহযুক্ত পানি। যখন অন্য কোন পানি না পাওয়া যায়, তখন সন্দেহযুক্ত পানি দ্বারা তাহারাত অর্জন জায়েয। তবে এর পরে তায়াম্মুম করতে হবে।
৯. তথা বড় পুকুরের পানি। এরূপ পুকুরের এক প্রান্তে নাপাকি পড়লে অন্য প্রান্তের পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন বৈধ ।
১০. যেসব প্রাণীর প্রবাহিত রক্ত নেই, তা পানিতে পড়ে মারা গেলে সে পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন জায়েয । যেমন- মশা, মাছি।
১১. পানিতে বসবাসকারী প্রাণী পানিতে মারা গেলে তা দ্বারা অযু, গোসল জায়েয।
১২. যে প্রাণীর গোশত খাওয়া হালাল তার উচ্ছিষ্ট পানি দ্বারা তাহারাত অর্জন বৈধ ।
১৩. পানির মৌলিক তিনটি গুণের মাত্র একটি গুণ নষ্ট হলে তা দ্বারা তাহারাত অর্জন করা জায়েয।
যে সব পানি দ্বারা তাহারাত অর্জন বৈধ নয়:-
১. ফল-মূল চিবানো পানি।
৩. তরকারির ঝোল।
২. ঘাস-পাতা চিবানো পানি।
৪. স্থির পানিতে নাজাসাত পড়লে।
৫. তথা ব্যবহৃত পানি; অপবিত্রতা হতে পবিত্র হওয়ার জন্য ব্যবহৃত পানি পুনরায় ব্যবহার করা বৈধ নয়।
৬. এমন পানি যার সাথে পাক জিনিস মিশ্রিত হয়ে তার তরলতা ও প্রবাহ নষ্ট করে দিয়েছে। যেমন- ফলের রস।
৭. এমন পানি যার তিনটি গুণের দু'টিই অবর্তমান।
তাহারাত সম্পর্কে মহানবী সাঃ যা বলেছেন :-
তাহারাত অর্থ পবিত্রতা। তাহারাত সম্পর্কে মহানবী সাঃ বলেন -الطهور شطر الايمان অর্থাৎ পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ।