কুরবানি মুসলমানদের জন্য আত্মত্যাগের এক মহৎ দৃষ্টান্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটা স্মরণ করিয়ে দেয় মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম (আ)-এর পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ)-এর আত্মোৎসর্গের কথা। নিম্নে কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্ত কয়টি বা কার উপর কুরবানী ওয়াজিব ও কার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করা হলো ।
কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্ত কয়টি বা কার উপর কুরবানী ওয়াজিব ও কার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়?
কুরবানি একটি আর্থিক ইবাদত। সুতরাং ঢালাওভাবে ধনী গরিব সকলের ওপর কুরবানী এটা ওয়াজিব নয়; বরং কতিপয় শর্তসাপেক্ষে নিম্নোক্ত ৫ ব্যক্তিবর্গের ওপর কুরবানি ওয়াজিব হয় । যেমন-
১। أَنْ يَكُونَ مُسْلِمًا তথা মুসলমান হওয়া। সুতরাং অমুসলিমের ওপর কুরবানি ওয়াজিব নয় ।
২। أَنْ يَكُونَ حُرًّا তথা স্বাধীন হওয়া। সুতরাং পরাধীন ব্যক্তির ওপর কুরবানি ওয়াজিব নয় ।
৩। أَنْ يَكُونَ مُقِيمًا তথা মুকিম হওয়া। সুতরাং মুসাফিরের ওপর কুরবানি ওয়াজিব নয়। যেমন হযরত আলী (রা) বলেন- لَيْسَ عَلَى الْمُسَافِرِ جُمُعَةٌ وَلَا أُضْحِيَّةَ
৪। أَنْ يَكُونَ صَاحِبَ النِّصَابِ তথা নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হওয়া। সুতরাং ফকির, মিসকিনের ওপর কুরবানি ওয়াজিব নয় ।
তবে এ নেসাবের ক্ষেত্রে যাকাতের ন্যায় বছর পূর্ণ হওয়া এবং বর্ধনশীল মাল হওয়া শর্ত নয় ।
৫. কুরবানির দিন উপস্থিত হওয়া। এ সম্পর্কে হেদায়া গ্রন্থকার বলেন-
الْأَضْحِيَّةُ وَاحِبَةُ عَلَى كُلِّ حُرٍّ مُسْلِمٍ مُقِيمٍ مُوسِدٍ فِى يَوْمِ الْأَضْحَى عَنْ نَفْسِهِ وَعَنْ وَلَدِهِ الصِّغَار
আরো পড়ুন : কুরবানী করার নিয়ম, দোয়া ও কুরবানীর মাসয়ালা-মাসায়েল। pdf
যে সকল ত্রুটির কারণে কুরবানি শুদ্ধ হয়না :
যে সকল ত্রুটির কারণে কুরবানি শুদ্ধ হয় না, তা নিম্নরূপ-
- অতিশয় দুর্বল পশু।
- যে পশুর এক চোখ অন্ধ ।
- যে পশুর উভয় চোখ অন্ধ ।
- দাঁতহীন পশু ।
- যে পশু জন্মগতভাবে কানহীন
- যে কুরবানির স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না এমন লেংড়া পশু, ।
- যে পশুর স্তনের মাথা কাটা ।
- যে পশুর একতৃতীয়াংশ কান কাটা ।
- ময়লা, আবর্জনা ও পায়খানা খেতে অভ্যস্ত যে পশু ।
- যে পশুর পিছনের পা কাটা।
- যে পশুর সামনের পা কাটা।
- যে পশুর একতৃতীয়াংশ লেজ কাটা ।
- উট, গরু, ছাগল, দুম্বা, মহিষ ও ভেড়া। এ ছয় শ্রেণির প্রাণী কুরবানির যোগ্য বয়সসীমায় উপনীত না হওয়াটাও অন্যতম ত্রুটি।
উল্লিখিত ত্রুটিসমূহ ছয় ধরনের পশুর যে কোনোটিতে পাওয়া গেলে ঐ পশু দ্বারা কুরবানি বৈধ নয়।
আরো পড়ুন : কোরবানি শব্দের অর্থ কি? কাকে বলে এবং কুরবানির হুকুম কি?
মানতকারী, ফকির ও ধনীর কুরবানির হুকুমে পার্থক্য :
মানতকারী, ফকির ও ধনী ব্যক্তি যদি নির্ধারিত সময়ে কুরবানি করতে না পারে, তবে তাদের কুরবানির হুকুম প্রসঙ্গে শরীয়তের ফয়সালা নিম্নরূপ-
১. মানতকারীর হুকুম : মানতকারী কুরবানির দিনসমূহের মধ্যে কুরবানি করতে অক্ষম হলে সে ঐ প্রাণীটিকে সদকা করে দেবে; হোক সে অসচ্ছল বা দরিদ্র। কেননা যে কোনো নফল ইবাদত মানত দ্বারা ওয়াজিব হয়।
2. ফকিরের হুকুম : যে ফকির কুরবানির জন্য পশু ক্রয় করেছে; কিন্তু সে নির্দিষ্ট সময়ে কুরবানি করতে পারেনি, তাহলে সেও ঐ পশুটিকে সদকা করে দেবে। তার মূল্য দ্বারা সদকা দিলে জায়েয হবে না। কেননা কুরবানির জন্য সে পশুটিকে নির্দিষ্ট করে নিয়েছে।
৩. ধনীর কুরবানির হুকুম : ধনী ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময়ে কুরবানি করতে না পারলে সে ঐ পশুর মূল্য সদকা করে দেবে। সে পশু ক্রয় করুক বা না করুক। তার জন্য নির্ধারিত পশু সদকা করা ওয়াজিব নয়। তবে পশু সদকা করলেও চলবে।
আরো পড়ুন : কুরবানির প্রশ্ন উত্তর – দলিল সহ