হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

কৃত্রিম প্রজনন সংজ্ঞা, পদ্ধতি, গুরুত্ব ও উদ্দেশ্য

মাতৃ উদ্ভিদ থেকে এক বা একাধিক অংশ কেটে সরাসরি বা সেই অংশকে অন্য আরেকটি উদ্ভিদে স্থাপন করার মাধ্যমে নতুন উদ্ভিদ জাত সৃষ্টি করার প্রক্রিয়া হলো কৃত্রিম অঙ্গজ জনন । কৃত্রিম জনন প্রক্রিয়ায় ফুল ও ফলের গুণ মান বজায় রেখে একটি উদ্ভিদের কোনো অংশ আরেকটি উদ্ভিদে স্থানান্তর করে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি করা যায়। মানুষ বিভিন্নভাবে কৃত্রিম উপায়ে এই জনন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকে।

কৃত্রিম প্রজনন : যে প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম উপায়ে ফুল ও ফলের গুণাগুণ অক্ষুণ্ণ রেখে একটি উদ্ভিদের কোনো অংশ আরেকটি উদ্ভিদে স্থানান্তর করা হয় তাকে কৃত্রিম প্রজনন বলে ।

কৃত্রিম প্রজননের গুরুত্ব

উপকারী দিকসমূহ

  • একটি উদ্ভিদদেহ থেকে একটি জিনতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য আরেকটি উদ্ভিদে স্থানান্তর সম্ভব।
  • যেকোনো বংশগতীয় বৈশিষ্ট্য যেকোনো উদ্ভিদে স্থানান্তরের মাধ্যমে বংশগতীয় পরিবর্তন আনা সম্ভব।
  • একটি নিম্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উদ্ভিদে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে উচ্চ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উদ্ভিদে পরিণত করা যায় ।
  • এই পদ্ধতিতে উন্নত, অধিক ফলনশীল, রোগ প্রতিরোধক্ষম এবং পতঙ্গরোধক উদ্ভিদ সৃষ্টি হয় ।
  • দৃষ্টিনন্দন ও ডেকোরেটিভ উদ্ভিদ তৈরি করা যায়।

আরও পড়ুন : প্রজনন, যৌন ও অযৌন জনন সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, পার্থক্য

অপকারী দিকসমূহ

  • এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া ।
  • এটি খুব কষ্টের, সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল পদ্ধতি।
  • পুং বন্ধ্যত্বকরণ খুব সতর্কতার সাথে করতে হয়।
  • এক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষ এবং অভিজ্ঞ প্রজননবিদের প্রয়োজন হয়।

কৃত্রিম প্রজননের অর্থনৈতিক গুরুত্ব –

i. অধিক ফলন : ফল ও শস্যদানার সংখ্যা ও আকার বৃদ্ধির মাধ্যমে ধানের ফলন ৩ গুণ, ভুট্টার ফলন ৩.৫ গুণ, আলুর ফলন ২ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে (G. W. Burton 1992).

ii. গুণগতমানের উন্নয়ন : ফলনের পরেই ফসলের গুণগতমান বিচার করা হয়। যেমন- আমিষের মাত্রা ও মান, স্টার্চের মাত্রা, তন্তুর দৈর্ঘ্য, বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ, রন্ধন উপযোগিতা প্রভৃতির পরিবর্তন করা হয়েছে। যেমন- করলার তিক্ততা হ্রাস পেয়েছে।

iii. পরিপক্বতা কালের পরিবর্তন : ভিন্ন ঋতুতে চাষ অধিকাংশ ফসলের দ্রুত পরিপক্বতা লাভ, কোনো কোনো ফসল বিলম্বে হলে আমরা আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হতে পারি। যেমন- গ্রীষ্মকালীন টমেটো, চিচিঙা প্রভৃতি ।

আরও পড়ুন : অঙ্গজ প্রজনন কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি উদাহরণ সহ

iv. সমকালীন পরিপক্বতা লাভ : সমকালীন পরিপক্ব ফসলের ক্ষেত্রে যান্ত্রিক উপায়ে ফসল উত্তোলনে ব্যায় হ্রাস পায়। এমন ধরনের মুগ ডাল উদ্ভাবন হয়েছে।

v. কৃষিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন : উদ্ভিদের খর্বতা (অড়হর, কার্পাস), জলাবদ্ধতা সহনশীলতা (দেশি পাট), শাখাহীনতা (পাট গাছ, কাঠ উৎপাদনকারী বৃক্ষ), বৃহদাকার দেহ (আম গাছ), আলোর সংবেদনশীলতা না থাকা (ধান, গম, ভুট্টা) বৈশিষ্ট্যগুলোতে পরিবর্তন করা সম্ভব হয়েছে।

vi. রোগ-প্রতিরোধী জাত উৎপাদন : বিভিন্ন রোগ সংক্রমণের ফলে প্রচুর পরিমাণে আবাদি ফসলের ফলনহানী ঘটে। বুনো প্রজাতির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় সংকরায়নের মাধ্যমে এ বৈশিষ্ট্য আবাদি জাতে কৃত্রিমভাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে রোগ-প্রতিরোধী জাত উৎপাদন সম্ভব। গাজী (BB14), মক্তা (BB10), মোহিনী (BR15), শাহীবালাম (BR16) প্রভৃতি ধানের রোগ প্রতিরোধী জাত ।

vii. পীড়ন সহনশীল জাত উৎপাদন : ক্ষরা, লবণাক্ততা, জলমগ্নতা কৃষিতে বিরাট সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। সংকরায়নের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পীড়ন সহনশীল অর্থাৎ ক্ষরা, লবণাক্ততা, জলমগ্নতা সহনশীল জাত উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।

আরও পড়ুন : নিষেক সংজ্ঞা,প্রকারভেদ,প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা, তাৎপর্য,গুরুত্ব

vi. রোগ-প্রতিরোধী জাত উৎপাদন : বিভিন্ন রোগ সংক্রমণের ফলে প্রচুর পরিমাণে আবাদি ফসলের ফলনহানী ঘটে। বুনো প্রজাতির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় সংকরায়নের মাধ্যমে এ বৈশিষ্ট্য আবাদি জাতে কৃত্রিমভাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে রোগ-প্রতিরোধী জাত উৎপাদন সম্ভব। গাজী (BB14), মক্তা (BB10), মোহিনী (BR15), শাহীবালাম (BR16) প্রভৃতি ধানের রোগ প্রতিরোধী জাত ।

vii. পীড়ন সহনশীল জাত উৎপাদন : ক্ষরা, লবণাক্ততা, জলমগ্নতা কৃষিতে বিরাট সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। সংকরায়নের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পীড়ন সহনশীল অর্থাৎ ক্ষরা, লবণাক্ততা, জলমগ্নতা সহনশীল জাত উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।

viii. আবাদকাল সংক্ষিপ্তকরণ : আমাদের দেশে বিল ও হাওড় অঞ্চলে আগাম বর্ষার কারণে অনেক সময় ফসল নষ্ট হয়। কৃত্রিম সংকরায়নের মাধ্যমে যদি ফসলের আবাদকাল সংক্ষিপ্ত করা যায় তাহলে এ সমস্যা দূর করা সম্ভব।

কৃত্রিম অঙ্গজ প্রজনন পদ্ধতি :

শাখা কলম (Cutting) : মাতৃ উদ্ভিদ থেকে একটি অংশ কেটে নিয়ে সেই অংশটা আবার লাগালে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি হয় । গোলাপ, জবা প্রভৃতি উদ্ভিদে এটা করা সম্ভব।

দাবা কলম (Layering) : পেয়ারা, পাতিলেবু, কমলালেবু, রঙ্গন প্রভৃতি গাছের শাখাকে মাটির নিচে বাঁকাভাবে পোঁতা হয়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাঁকানো অংশ থেকে অস্থানিক মূল নির্গত হয় ও দাবা কলমকে মাতৃ উদ্ভিদ থেকে আলাদা করা হয় এবং কলম স্বাধীনভাবে বৃদ্ধি পায়।

গুটিকলম (Gootee) : গুটিকলমের জন্য নির্বাচিত ক্ষতস্থান মস, কম্পোস্ট সার মেশানো ভেজা মাটি দিয়ে ঢেকে দড়ি দিয়ে মজবুত করে বেঁধে দিতে হবে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে অস্থানিক মূল বের হবার পর গুটি কলমকে মাতৃ উদ্ভিদ থেকে আলাদা করা হয় এবং উপযুক্ত স্থানে লাগানো হয়। এভাবে লিচু, পেয়ারা, গন্ধরাজ প্রভৃতি উদ্ভিদের গুটিকলমের মাধ্যমে বংশবিস্তার করা সম্ভব।

কৃত্রিম প্রজননের উদ্দেশ্য

প্রধানত তিনটি উদ্দেশ্যে কৃত্রিম প্রজনন করা হয়। যথা-

  • একই জাতে সবধরনের কাঙ্ক্ষিত গুণাবলির সন্নিবেশন।
  • বিভিন্ন চরিত্রের পুনঃসংযোজনের মাধ্যমে প্রজনকের কৌলিক প্রকরণতা বৃদ্ধিসাধন ।
  • সংকরীয় সবলতা সৃষ্টি এবং এর যথাযথ ব্যবহার ।

Leave a Comment