হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

নবী করীম (সা) এর: জন্ম, নাম, বংশ পরিচয় ও মর্যাদা

মুসলিম মিল্লাতের জনক হযরত ইবরাহীম (আ) আল্লাহর নিকট এভাবে দোয়া করেছিলেন- رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَتِكَ মহান আল্লাহ হযরত ইবরাহীমের পুত্র ইসমাঈল (আ)-এর বংশে বিশ্বনবী মুহাম্মদ (স)-কে প্রেরণ করেন।

তাতে ইবরাহীম (আ)-এর দোয়ার বাস্তবতা প্রমাণিত হয়। রাসূলুল্লাহ (স)-এর আগমন ছিল গোটা বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ ও কল্যাণকর। আলোচ্য প্রশ্নে রাসূল (স)-এর জন্ম, বংশপরিচয় ও তাঁর মর্যাদা উপস্থাপন করা হলো।

নবী করীম (স)-এর জন্ম :

নবী করীম (স)-এর জন্মের সময়কাল ও তারিখ নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

খ. সহীহ বুখারীতে রাসূল (স)-এর মোট পাঁচটি নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যথা- ১. مُحَمَّدٌ তথা প্রশংসিত, ২. أَحْمَدُ তথা অধিক প্রশংসিত, ৩. الْمَاحِي তথা উচ্ছেদকারী, ৪. الْحَاشِرُ তথা একত্রকারী, ৫. الْعَاقِبُ তথা সর্বশেষ।

আরও : মুজিজা শব্দের অর্থ, সংজ্ঞা, রাসূল (সা) এর প্রধান মুজিজা

গ. কোনো কোনো আলেম বলেন, রাসূলুল্লাহ (স)-এর মাতা স্বপ্নের আলোকে তাঁর নাম রাখেন আহমদ (أَحْمَدُ ) এবং তাঁর দাদা আবদুল মুত্তালিব তাঁর নাম রাখেন মুহাম্মদ (مُحَمَّدٌ);

পবিত্র কুরআনের مُحَمَّدٌ ও أَحْمَدُ ছাড়াও আরো কিছু উপনাম উল্লেখ করা এ হয়েছে। যেমন- يٰس- حٰم – طٰهٓ – الْمُدَّثِّرُ- الْمُزَمِّلُ

এছাড়া রাসূলুল্লাহ (স) আল আমীন (الْأَمِينُ), আসসাদেক ( الصَّادِقُ) ইত্যাদি উপাধিতেও ভূষিত ছিলেন।

নবী করীম (স)-এর বংশপরিচয় :

রাসূল (স)-এর বংশপরিচয় নিম্নরূপ-

১. বংশ : মহানবী (স) আরব দেশের প্রাণকেন্দ্র মক্কা নগরীতে সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল্লাহ, তাঁর পিতা আবদুল মুত্তালিব, তাঁর পিতা হাশেম। হাশেম ছিলেন কুরাইশ বংশের লোক। যারা ইবরাহীম (আ)-এর পুত্র ইসমাঈল (আ)-এর বংশধর।

২. বংশপরিচয় : রাসূলুল্লাহ (স)-এর বংশধারাকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

ক. প্রথম অংশের নির্ভুলতার ব্যাপারে সীরাত রচয়িতা এবং বংশধারা বিশেষজ্ঞরা একমত । এ অংশ ইসমাঈল (আ)-এর সন্তান আদনান পর্যন্ত ।

খ. দ্বিতীয় অংশ সম্পর্কে সীরাত রচয়িতাদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। এ অংশ আদনান থেকে ওপরে ইবরাহীম (আ) পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয় ।

আরও : নবী ও রাসূল: অর্থ কি, সংজ্ঞা, পার্থক্য ৫টি, চরিত্র

গ. তৃতীয় অংশের মধ্যে নিশ্চিত ভুল রয়েছে। এটা হযরত ইবরাহীম (আ) থেকে আদম (আ) পর্যন্ত পৌঁছেছে।
ইবনে আব্বাস ও ইবনে মাসউদ (রা) বর্ণনা করেন, যারা আদনানের ওপরে বংশ তালিকা বর্ণনা করে, তারা মিথ্যা বলে ।

৩. রাসূলুল্লাহ-এর বংশপরম্পরা : সীরাতে ইবনে হিশামে বর্ণিত বিশুদ্ধভাবে আদনান পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (স)-এর বংশপরম্পরা নিম্নরূপ-

অর্থাৎ, মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিব (শায়বা) ইবনে হাশেম (আমর) ইবনে আবদে মানাফ (মুগীরা) ইবনে কুসাই (যায়দ) ইবনে কেলাৰ ইবনে মুররা, ইবনে কাব ইবনে লুয়াই, ইবনে গালেব ইবনে ফিহর ইবনে মালেক ইবনে নযর (কায়স) ইবনে কেনানা ইবনে খোযায়মা ইবনে মুদরেকা (আমের) ইবনে ইলিয়াস ইবনে মুদার ইবনে মায়াদ ইবনে আদনান। এর সমর্থনে সহীহ মুসলিম শরীফে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। রাসূল (স) বলেন-

আল্লাহ তায়ালা ইসমাঈল (আ)-এর বংশধরদের মধ্য থেকে কেনানাকে বিশেষভাবে মনোনীত করেছেন এবং কেনানার বংশধরদের মধ্য থেকে . কুরাইশকে বিশেষভাবে মনোনীত করেছেন। আর কুরাইশদের থেকে বনি হাশেমকে বিশেষভাবে মনোনীত করেছেন এবং বনি হাশেম থেকে আমাকে বিশেষভাবে মনোনীত করেছেন।

৪. কুরাইশ বংশের মর্যাদা : মহান আল্লাহ বিশ্বনবী মুহাম্মদ (স)-কে কুরাইশ বংশে প্রেরণ করেছেন। কারণ কুরাইশ বংশ হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষভাবে মনোনীত আরবের শ্রেষ্ঠ বংশ। কুরাইশ বংশের মধ্যে হাশেমের পরিবার ছিল অত্যন্ত সম্মানিত।

মক্কাবাসীরা তাদেরকে ধর্মীয় ও সামাজিক নেতৃত্বের আসনে স্থান দেন। কুরাইশ বংশের অন্য বিশেষ মর্যাদা হলো নেতৃত্ব প্রদান । এ হাশেম পরিবারের অন্যতম নেতা ছিলেন আবদুল মুত্তালিব।

আরও : মুজিযা ও কারামতের সংজ্ঞা, অর্থ ও পার্থক্য

নেতৃত্ব : তৎকালীন আরবের শাসক নির্বাচিত করা হতো কুরাইশ বংশ থেকে। কারণ কুরাইশদের মধ্যে নেতৃত্ব প্রদানের সকল যোগ্যতা ও গুণাবলি বিদ্যমান ছিল। অন্যত্র রাসূল (স) ইরশাদ করেছেন- অর্থাৎ, ইমামত তথা নেতৃত্ব কেবল কুরাইশদের থেকে হবে।

মহানবীর মর্যাদা :

মুহাম্মদ (স)-কে সম্মান করা রিসালাতের অবিচ্ছেদ্য অংশ । তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, মানবজাতির পথপ্রদর্শক, নবী রাসূলদের নেতা। তিনি আল্লাহ তায়ালার প্রিয়তম হাবীব, তাঁর সবচেয়ে সম্মানিত বান্দা। তিনি ছিলেন নিষ্পাপ ও নিষ্কলুষ।

নবুয়তপ্রাপ্তির পূর্বে ও পরে আল্লাহ তাঁকে সকল পাপ, অন্যায় ও কালিমা থেকে রক্ষা করেছেন। এমনকি এগুলোর ওপর আল্লাহ তাঁকে বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। তাঁর মর্যাদা দুটি দিক থেকে উপস্থাপন করা যেতে পারে। যথা-

১. পবিত্র কুরআনে তাঁর মর্যাদা : পবিত্র কুরআনে তাঁর মর্যাদার ব্যাপারে তাঁর প্রতি আল্লাহর অপার অনুগ্রহের কথা ঘোষণা করে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

-١ وَلَوْلا فَضْلُ اللهِ عَلَيْكَ وَرَحْمَتُهُ لَهَمَّتْ طَائِفَةً مِنْهُمْ أَنْ يُضِلُّوكَ

তাঁকে সকল মানুষের ঊর্ধ্বে সম্মান দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

النبى أولى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنفُسِهِمْ وَأَزْوَاجُه أمهاتُهُمْ… الآيَةٌ .

তাঁর বিশেষ মর্যাদার অংশ হিসেবে তাঁর ওফাতের পর তাঁর স্ত্রীদেরকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ করেছেন এবং কোনোভাবে তাঁকে কষ্ট দেয়া মুমিনদের জন্য নিষেধ করে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

وَمَا كَانَ لَكُمْ أنْ تُؤْذُوا رَسُولَ اللهِ وَلا أَنْ تَنكِحُوا أَزْوَاجَهُ مِنْ بَعْدِهِ اَبَداً اِنَّ ذلِكُمْ كَانَ عِندَ اللهِ عَظِيمًا

অন্যান্য সকল মানুষ থেকে পৃথকভাবে সম্মানের সাথে তাকে ডাকতে হবে এবং তাঁর ডাকে সাড়া দিতে হবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন-

لا تَجْعَلُوا دَعَاءَ الرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاءِ بَعْضِكُم بَعْضًا

২. হাদীসে নববীর আলোকে তাঁর মর্যাদা : হাদীসে নববীতেও তাঁর মর্যাদার ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যেমন- ক. হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা)

١ أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا فَخْرَ.
٢ أَنَا أَكْرَمُ وَلَدِ آدَمَ عَلَى رَبِّي وَلَا فَخْرَ.

তার মর্যাদার বিষয়ে অহীর অনুসরণ : নবী রাসূলগণের প্রতি অবিশ্বাস যেমন মানুষদের ধ্বংস করেছে, তেমনি ধ্বংস করেছে নবীগণের প্রতি ভক্তিতে সীমালঙ্ঘন । এজন্য রাসূল (স) অহীর জ্ঞানের ওপর গুরুত্বারোপ করতঃ স্বীয় উম্মতকে এ বিষয়ে সতর্ক করছেন।

আরো : সাহাবা কারা? তাদের পরিচয় ও তাদের সমালোচনা করার বিধান

Leave a Comment

error: Content is protected !!