উপস্থাপনা ঃ
আমাদের গ্রামের নাম শালিয়াবহ । আয়তনে অন্যান্য গ্রামের চেয়ে অনেক বড়। আমাদের গ্রামকে বাংলাদেশের একটি আদর্শ গ্রাম বলা চলে । আমদের গ্রাম সম্বন্ধে বলতে গেলে কবির ভাষায় বলতে হয়-
“আমাদের গ্রামখানি ছবির মতন
মাটির তলায় এর ছড়ানো রতন।”
সত্যি আমাদের গ্রামখানি যেন একট ছবি। এর এক দিক দিয়ে চলে গেছে একটি রাজপথ । রাজপথে প্রকাণ্ড বৃক্ষরাজি দণ্ডায়মান হয়ে ধ্যানমগ্ন বীথির রূপ নিয়েছে। দিগন্ত বিস্তৃত মাঠের প্রান্তে আম, নারিকেল, তাল, সুপারীর বন। মাঝে রয়েছে বাঁশ ঝাড়। পাখির কলকাকলিতে গ্রামে প্রভাত দেখা দেয় আর পাখির ডানায় ভর করে নেমে আসে সন্ধ্যা।
গ্রামের পাশ দিয়ে একটি স্রোতস্বিনী নদী কুল কুল রবে একটানা বয়ে চলেছে। বর্ষায় তার দুই কুল বরে যায়। চাঁদিনী রাতে নদীর ঢেউয়ের সাথে চাঁদ যেন খেলা করে। আবার গ্রীষ্মের প্রতাপে নদীকে দেখা যায় শীর্ণ ।
বর্ণনা :
এখানে যেমন অপূর্ব প্রকৃতির শোভা বিরাজ করছে তেমনি রয়েছে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানাদি যা দিয়ে শুধু আমাদের গ্রামের লোকেরাই উপকৃত হয় না, আশপাশের অনেকগুলো গ্রামের অধিবাসীদের অনেক উপকারে আসে। গ্রামের প্রায় মধ্যখানে মোড়লদের প্রকাণ্ড দীঘি। দীঘির পাড়েই একটি হাই স্কুল এবং তার পাশে একটি প্রাইমারী স্কুল।
আরও পড়ুন :- আমাদের বিদ্যালয় - রচনা : ( ক্লাস ৬, 7, 8 )
স্কুলের মাঠে প্রতিদিন বিকালে শতশত ছেলেমেয়ে নানা ধরনের খেলাধুলা করে।স্কুল হতে অনতিদূরেই একটি মসজিদ। তার পাশেই একটি পুরানো বৈঠকখানা । সেখানে গ্রামের লোকেরা একত্রিত হয়ে নিজেদের বিবাদ-বিসংবাদ মিটিয়ে নেয় । গ্রামের পঞ্চায়েত কমিটি গ্রামের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সদা সচেতন। তাছাড়াও এখানে একটি পোষ্ট অফিস এবং একটি মাদরাসা রয়েছে।
বর্তমান সভ্যযুগে পোষ্ট অফিস আমাদের এতো উপকার করছে যে আমরা প্রত্যহ ঘুম থেকে উঠেই পেয়ে যাই নানা প্রকার সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন ।শহরের সাথে চিঠিপত্র, টাকা-পয়সা ইত্যাদি লেনদেনও এখানে নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। আমাদের গ্রামটি একটি আদর্শ গ্রাম। অধিবাসীদের প্রায় অধিকাংশই শিক্ষিত ।
জীবিকার প্রয়োজনে বেশির ভাগ শিক্ষিত লোকই শহরে থাকে। কৃষকেরা ধান, পাটসহ নানা ধরনের শস্য উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করে। কিছু কিছু ব্যবসায়ী, মৎস্যজীবি এবং অন্যান্য পেশার লোকও এখানে রয়েছে। যেমন- ডাক্তার, উকিল, শিক্ষক ও অন্যান্য সরকারী চাকরিজীবি। অধিবাসীদের সকলেই সত্যনিষ্ঠ, কর্তব্যপরায়ন, পরিশ্রমী ও ধর্মভীরু।
গ্রামের একপাশ দিয়ে আঁকাবাকা হয়ে গেছে একটি পায়ে চলা মেঠোপথ। এ মেঠো পথ দরে একটু সামনে গেলেই দেখা যায় প্রকাণ্ড এক বট বৃক্ষ । ফাঁকে ফাকে রয়েছে দুই-একটি নারিকেল গাছ । তার নিকট দেখা যায় কিছু কিছু চালা ঘর, দুই-একটি বড় বাড়ি । তার পরেই রয়েছে গ্রামের বাজার।
আরও পড়ুন :- প্রবন্ধ রচনা : আমাদের দেশ / বাংলাদেশ
এ বাজারটি সপ্তাহে দুই দিন বসে, শনিবার ও মঙ্গলবার। প্রত্যহ সকাল ও বিকেলে মাছ, কিছু তরিতরকারী বেচাকেনা হয়। দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় দ্রব্যও এ বাজারে পাওয়া যায়। বট গাছের নিচে বাজার বসে। বাজারের তারিখে বাজারখানি বেশ সরগরম হয়। চলাচলের সুবিধার জন্য রয়েছে গ্রামের মধ্যে ছোট রাস্তা। বর্ষাকালেও এদিকে-সেদিকে যেতে কোন অসুবিধা হয় না।
বিভিন্ন ঋতুতে আমাদের গ্রাম নতুন নতুন রূপ ধারণ করে। বর্ষায় ছোট ছোট বাড়িগুলোকে দ্বীপের মত মনে হয় বসন্তের আগমনে বিভিন্ন প্রকারের পুষ্প বিকশিত হয়ে গ্রামবাসীকে সৌরভ দান করে। কোকিলের কুহুতানে হৃদয় মন আনন্দে ভরে উঠে তাই আমাদের গ্রামকে একটি আদর্শ গ্রাম বলা হয় ।
উপসংহার :
আমদের গ্রাম যেমন বর্ধিষ্ণু তেমনি উন্নত। শিক্ষা-দীক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও কৃষি ক্ষেত্রে এ গ্রামের মতো উন্নত গ্রাম আশেপাশে দেখা যায় না। এ দিক থেকে আমাদের গ্রামটি একটি আদর্শ গ্রাম। আমরা সবাই আমাদের এই গ্রামকে ভালবাসি । এ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করে আমি গর্বিত। এ গ্রামের কল্যাণই আমাদের জীবনের ব্রত।
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্টের তালিকা