বাংলা রচনা - বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র্য [ Class 6, 7, 8. 9, 10 ]

উপস্থাপনা ঃ

সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা আমাদের বাংলাদেশ অনুপম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নীলাভূমি। এদেশের ছয়টি ঋতু প্রাকৃতিক নিয়মে আপনাপন বিচিত্র রূপ আর বৈশিষ্ট্য নিয়ে আবির্ভূত হয়। এদের আবির্ভাবে বাংলাদেশ অপরূপ প্রাকৃতিক লীলা-বৈচিত্র্যে মেতে ওঠে, নৈসর্গিক দৃশ্যের পথ পরিবর্তিত হয়। 

এদেশের ঋতুবৈচিত্র্য যুগে যুগে কবিদের আবেগ ও সৌন্দর্য চেতনাকে আন্দোলিত করেছে । তাঁদের লেখনীর নিপুণ আঁচড়ে এঁকেছেন রূপসী সৌন্দর্য ও ঐশ্বর্যে ঝলমল এক প্রাণবন্ত ছবি।

বাংলাদেশের ঋতু : 

ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। ছয়টি ঋতুর রূপবৈচিত্র্য নিম্নে তুলে ধরা হল-

গ্রীষ্ম : গ্রীষ্মঋতু অগ্নি মশাল হাতে নিয়ে আমাদের সামনে এসে হাজির হয় । বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ এই দুই মাস গ্রীষ্মকাল । চৈত্রের শেষ দিক থেকেই গ্রীষ্মের সূচনা । উত্তাপ একটু একটু করে বাড়তে থাকে। সেই তাপে খাল, বিল, পুকুর সব শুকিয়ে যায় । বাংলার শ্যামলতা শুকিয়ে প্রকৃতি রুদ্ররূপ ধারণ করে তখন জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। কবির ভাষায়-

“রোদ যেন নয় শুধু ঘনঘন ফুলকি,
আগুনের ঘোড়া যেন ছুটে চরে দুলকি।”

বর্ষা : আষাঢ় ও শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল । ধরণীর শুষ্কতা আর মলিনতা দূর করার জন্য গ্রীষ্মের পরে আসে বর্ষা। সারা আকাশ জুড়ে ভাসতে থাকে মেঘের ভেলা। বারি বর্ষণে বাংলার মাঠঘাট, নদীনালা সবকিছু ভরে যায় । কৃষক রোপণ করে ধান । নদী নালায় মাছ খেলা করে বেড়ায় ।

আরও পড়ুন :- বর্ষাকাল অথবা, বাংলার বর্ষা রচনা [  ক্লাস ৬, ৭, ৮, ৯, ১০ ]

শরৎ : ভাদ্র ও আশ্বিন এই দুই মাস শরৎকাল। বর্ষার বর্ষণ ধীরে ধীরে কমে আসতে থাকে। আকাশের কালো মেঘ একটু একটু করে সাদা হতে থাকে । মেঘের গুডু গুডু ডাক থেমে যায় । এমনি করে শরৎ এসে আবির্ভূত হয় । শিউলি ফুল ফোটে। কাশবনে দোল লাগে । পালতোলা নৌকাগুলো ভরা নদী বক্ষে ভেসে যায় ।

হেমন্ত : শরতের পর আসে হেমন্ত। কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এ দুমাস হেমন্তকাল। কার্তিকের মাঝামাঝি থেকেই ঠাণ্ডা পড়তে থাকে এ ঋতু শীতের পূর্বাভাস নিয়ে আসে। সোনালী ফসলে ভরে উঠে মাঠ । গ্রামে গ্রামে শুরু হয় নবান্নের উৎসব। কবির ভাষায়-


“ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোট সে তরী,
আমারি সোনার ধানে গিয়াছে ভরী।”

শীত : পৌষ-মাঘ এ দু'মাস শীতকাল। শুষ্ক, বিষাদময় প্রতিমূর্তিরূপে শীতের আগমন। এ ঋতুই সবুজ পত্রকে নির্মমতার ডা দিয়ে ঝরিয়ে ফেলে। উত্তরের কনকনে শীত হাড়ে এসে লাগে। বস্ত্রহীন মানুষ কাঁপে থর থর করে। দরিদ্র বাঙালি আগুন জালি উপভোগ করে উত্তাপ। এ ঋতুর পিঠা ও পায়েস সবার কাছে খুবই প্রিয়। 

বসন্ত : শীতকে তাড়িয়ে দখিণা মলয়ে শিহরণ জাগিয়ে আবির্ভূত হয় ঋতুরাজ বসন্ত। বনবীথিকার বিচিত্র ফুলের সমারোে কোকিলের কুহুতানে, আমের মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে পল্লী বাংলা হয় মুখরিত, রোমাঞ্চিত। শিমুল, পলাশ আর অশোকের শাখায় শাখ জ্বলে রঙের দাবানল । নতুন দিনের সোনালী আশার বার্তা বয়ে উল্লাসে হাসে ঋতুরাজ বসন্ত । কবির ভাষায়-
“মহুয়ার মালা গলে কে তুমি এলে,
নয়ন ভুলানো রূপে তুমি এলে।”

উপসংহার : 

এভাবেই গ্রামবাংলা ঋতুচক্রের আবর্তনে বিচিত্র মনোহর সাজে হয় সজ্জিত। এভাবেই প্রত্যেকটি ঋতু নিজ নিজ দ পূর্ণতা এনে দেয় প্রকৃতির বুকে। এ ঋতু-বৈচিত্র্যের গুণেই বাংলাদেশ সবসময় নতুন বলে অনুভূত হয় । মানুষ হয়ে উঠে সজীব ও প্রাণবন্ত ।

Post a Comment

0 Comments