উপস্থাপনা ঃ
শাপলা এক প্রকার জলজ ফুল । শাপলা চাষাবাদ ব্যতীত আপনা আপনিই পানিতে জন্মে। শাপলা সাধারণত বদ্ধ পানিতে জন্মায় ।
শাপলার জন্ম :
বর্ষা ঋতুতে যখন মাঠ-ঘাট, খাল-বিল পানিতে ভরে যায়, তখনই তা মাটির ভেতর থেকে অঙ্কুরিত হয় । মাটির ভেতরে এর মূল থাকে । শুকনার সময় এর মূল মাটির নিচে বেঁচে থাকে। বর্ষাকালে পানির সংস্পর্শে তার কাণ্ড বা ডাঁটা ফুটে বের হয়। মূলের ভেতর থেকে সরু নলের মত একটি করে দণ্ড জন্মাতে থাকে এবং তা পানির উপরে ওঠে পাতা গজায়।
পানির গভীরতার সাথে সাথে শাপলা বৃদ্ধি পায় । এভাবে এক একটি মূল থেকে কয়েকটি শাখা বের হয়ে ঝাড়ের মত হয়। এর মাথার পাতাটি ক্রমশ বড় হয়ে পানির উপরে ভাসতে থাকে। তা প্রথমে পানির নিচে সরু থাকে এবং এর মাথায় ফুলের মুচিটি কুঁড়ির মত, পাঁপড়িগুলো কলার মোচার মত আবন্ধ থাকে।
দু-তিন দিনের মধ্যেই তা পানির উপরে ওঠে আসে। এ দণ্ড পাতার দণ্ডাপেক্ষা বেশ সতেজ, মোটা ও শীর্ষ সম্পন্ন হয়, মোচাটি পানির ওপরে ওঠার পর আলো বাতাসের স্পর্শে দু-একদিনের মধ্যে ফুটে যায়। তখনই এর রূপ বিকশিত হয় ।
আরও পড়ুন :- বাংলাদেশের পাখি : রচনা [ক্লাস ৬, ৭, ৮, ৯, ১০]
শাপলার শুভ্র হাসি :
টলমল দিঘির পানিতে; বদ্ধ পুকুরের পানিতে, ধানের ক্ষেতে, দিগন্ত বিস্তৃত বিলের পানিতে প্রস্ফুটিত শাপলা ফুলের এক অপূর্ব শোভা জলময় প্রশস্ত বিলের পানিতে সবুজ পাতার গালিচার উপর হাজার হাজার শাপলা ফুলের শুভ্র হাসি প্রাকৃতিক শোভার এক অনুপম রূপ; এক অতুলনীয় ছবি।
কবিগুরু বলেছেন- “নিস্তরঙ্গ গঙ্গায় নৌকা ভাসিয়ে সূর্যোদয়ের শোভা দেখে নাই, বাংলার শোভা সে দেখে নাই বলিলেও চলে।” তাঁর কথার অনুসরণ করে বলা চলে, বাংলাদেশের টলমল বিলের জলে হাজার হাজার প্রস্ফুটিত শাপলা ফুলের শুভ্র হাসি যে দেখেনি বাংলার রূপ পুরাপুরি সে দেখেনি বললেও চলে। মনে হয় যেন আকাশের অগণিত তারকারাজি বিলের জলে ঝরে পড়ে ভাসছে।
জাতীয় ফুলের মর্যাদা :
শাপলার বৈশিষ্ট্য তার এই নির্মল হাস্যময় রূপ। তা কি বাংলার সরল প্রকৃতির জনগণের প্রেমের প্রতীক । গন্ধহীন এ ফুল কোন যত্ন বা চাষাবাদ ছাড়াই বিল, ঝিল, দিঘি, পুকুর ও ডোবার স্থির স্বচ্ছ পানিতে আপনা-আপনি জন্মে আপন মহিমায় প্রস্ফুটিত হয় । এ জন্যই শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুলের মর্যাদায় ভূষিত। বাংলাদেশের মুদ্রায় এর প্রতীক শোভা পাচ্ছে ।
দেশজ ফুল :
দেশজ ও বিদেশি বহু প্রকারের ফুল গৃহের আঙ্গিনায় শোভাবর্ধন করে। কত লোকের বাগিচায় কত বর্ণাঢ্য গন্ধময় ফুলের সমাবেশ। বহু গৃহে বহু অর্থ ব্যয়ে তার চাষাবাদ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। তাদের মধ্যে গোলাপ, চাঁপা, সূর্যমুখী, জুঁই, শেফালী, গন্ধরাজ, কামিনী, হাসনাহেনা ইত্যাদি। এদের সুগন্ধ ও সুষমা অফুরন্ত; এদের রূপ প্রাণ মাতানো ।
তা সত্ত্বেও এদের কোনটাই জাতীয় মর্যাদা লাভ করতে পারেনি । কারণ, তারা সংখ্যায় অল্প, তারা অনেকেই এ দেশের সম্পদ নয়, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ।
আরও পড়ুন :- বাংলা রচনা: বাংলাদেশের কৃষক [ Class - 6, 7, 8 ,9 ,10]
খাদ্য হিসেবে এর ব্যবহার :
শাপলার আর এক বৈশিষ্ট্য হলো তা একটি তরকারি বিশেষ। তার কোমল ডাঁটাটি একটি উত্তম তরকারি, যা বেঁধে খাওয়া যায়। বর্ষা মৌসুমে গ্রামের হাটে বিলাঞ্চল থেকে নৌকা ভর্তি হয়ে এর আমদানি হয় এবং তরকারি হিসেবে বিক্রি হয় । এটি কৃষিজাত তরকারির তুলনায় খুবই সস্তা।
শাপলা শহরের বাজারেও প্রচুর আমদানি হয় এবং অনেকেই এ তরকারিটি আগ্রহ সহকারে ক্রয় করে থাকে। হয়ত তার সাথে অনেকের মনে পড়ে ফেলে আসা গ্রামের স্মৃতি, শাপলা বিলের অপরূপ স্মৃতি ।
শাপলার জাত :
শাপলার কয়েকটি জাত আছে, এক জাতের ফুল হয় লাল এবং ডাঁটা বেশ সতেজ ও মোটা। এগুলো বড় বড় দিঘি ও পুকুরে জন্মে। অন্য জাতের শাপলা খুবই সরু; তার পাঁপড়িগুলোর রং বেগুনি। এই জাতের ফলন বেশি নয়, অগভীর পানিতেই এদের জন্ম হয়।
উপসংহার :
বিল, দিঘি, পুকুর ও ডোবার জলে জলজ উদ্ভিদ জাতীয় নির্মল শুভ্র তারকাকৃতির বর্ষা মৌসুমের এ ফুলটি আমাদের জাতীয় ফুলের মর্যাদায় ভূষিত ।
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্টের তালিকা