সমাস কী :-
সমাস শব্দের অর্থ ‘সংক্ষেপ' । সমাস শব্দ গঠনের একটি অতি প্রয়োজনীয় উপায় । অল্পকথায় মনের ভাব প্রকাশ করতে পারা একটি বিশেষ গুণ । রচনায় সমাসের ব্যবহারের ফলে এ গুণ প্রকাশ পায় । তাছাড়া সমাসের ফলে বাক্য সরস, মধুর এবং অনেক সময় ছন্দময় হয়ে ওঠে।
সংজ্ঞা :- পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুই বা ততোধিক পদের এক পদে রূপান্তরিত হওয়াকে সমাস বলে ৷
সমাস উদাহরণ :-
যেমন- ফল ও মূল = ফলমূল, ভাজা যে বেগুন = বেগুন ভাজা রাজার পুত্র = রাজপুত্র, জন যে এক = জনৈক, ভাই ও বোন = ভাই বোন। বীণা পানিতে যার = বিনাপানি ।
সমাস ছয় প্রকার । যথা :
১। দ্বন্দ্ব সমাস; ২। তৎপুরুষ সমাস; ৩। কর্মধারয় সমাস; ৪। দ্বিগু সমাস; ৫। বহুব্রীহি সমাস ও ৬। অব্যয়ীভাব সমাস।
১। দ্বন্দ্ব সমাস :
যে সমাসে সমস্যমান পদগুলোর প্রত্যেকটির অর্থ প্রধান থাকে তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে । যেমন—খাতা ও কলম = খাতাকলম। ঘরে ও বাইরে = ঘরেবাইরে। দিন ও রাত = দিনরাত।
দুটির বেশি পদ মিলিত হয়েও দ্বন্দ্ব সমাস হতে পারে। যেমন— মশা-মাছি ও ছারপোকা = মশা-মাছি-ছারপোকা, উজির-নাজির ও পাত্র-মিত্র = উজির-নাজির-পাত্র-মিত্র ।
২। তৎপুরুষ সমাস :
যে সমাসে পূর্ব পদের দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী ও সপ্তমী বিভক্তি লোপ পায় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন— ফুলের বাগান = ফুলবাগান। কালকে প্রাপ্ত = কালপ্রাপ্ত ।
আরও পড়ুন :- দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে এবং দ্বন্দ্ব সমাসের শ্রেণীবিভাগ ব্যাখ্যা
৩। কর্মধারয় সমাস :
বিশেষ্য পদের সাথে বিশেষণ পদের যে সমাস হয় এবং পরপদের অর্থের প্রাধান্য থাকে তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন—মহান যে পুরুষ = মহাপুরুষ। কাঁচা যে কলা = কাঁচকলা।
কখনো বিশেষণ পদ পরে বসে। যেমন- ভাজা যে চাল = চালভাজা । কখনো উভয় পদ বিশেষ্য হয়। যেমন- যিনি মৌলবী তিনি সাব = মৌলবীসাব ।
৪। দ্বিগু সমাস :
যে সমাসের পূর্ব পদটি সংখ্যাবাচক বিশেষণ এবং পর পদটি বিশেষ্য হয় এবং তা যদি সমাহার বা সমষ্টি বোঝায় তবে তাকে দ্বিগু সমাস বলে।
যেমন— চৌ-রাস্তার সমাহার = চৌরাস্তা। দ্বিগু সমাসে কোনো কোনো অ-কারান্ত শব্দের পরে ঈ হয়। যেমন- ত্রিপদের সমাহার = ত্রিপদী। পঞ্চ বটের সমাহার = পঞ্চবটী। চার মোহনার সমাহার = চৌমোহনী ।
৫। বহুব্রীহি সমাস :
যে সমাসে সমস্যমান পদের অর্থ না বুঝিয়ে অতিরিক্ত অন্য কিছুকে প্রধান রূপে বোঝায় তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।
যেমন— বহু ব্রীহি (ধান্য) আছে যার = বহুব্রীহি। এখানে বহু ও ব্রীহি এ দুটি পদের কোনোটির অর্থ না বুঝিয়ে যার অনেক ব্রীহি (ধান) আছে এরূপ এক ব্যক্তিকে বোঝানো হচ্ছে। ধর্মে প্রাণ যার = ধর্মপ্রাণ। চুল ধরে যে ঝগড়া = চুলাচুলি।
৬। অব্যয়ীভাব সমাস :
যে সমাসে অব্যয়পদ পূর্বে বসে এবং অব্যয়ের অর্থই প্রধানরূপে বোঝায় তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে।
যেমন— রোজ রোজ = হররোজ। মরণ পর্যন্ত = আমরণ। ভাতের অভাব = হাভাত
সামীপ্য, সাদৃশ্য, অভাব, যোগ্যতা, পর্যন্ত, বীপ্সা, বৈপরীত্য, পশ্চাৎ, ক্ষুদ্রতা, অনতিক্রম্য, সাফল্য প্রভৃতি অর্থে অব্যয়ীভাব সমাস গঠিত হয়। যেমন— কূলের সমীপে = উপকূল, দ্বীপের সদৃশ = উপদ্বীপ, রূপের যোগ = অনুরূপ ।