অপসংস্কৃতি ও তরুণ সমাজ : রচনা [ ক্লাস ৬, ৭, ৮, ৯, ১০ ]

ভূমিকা

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তার ভাষা আছে। ভাব প্রকাশের বাহন ভাষা। সে নিজেকে জানাতে চায়, অপরকে জানতে চায়। এ জানার আগ্রহ তাকে জ্ঞানের পথে বিচরণ করার প্রেরণা দিয়েছে। এ প্রেরণা থেকে যা ভাল, যা কল্যাণকর তা বরণ করে নিয়েছে। সংস্কৃতি এমনি একটি বরণ করা জীবন-চেতনা।

সংস্কৃতির মূল কথা -নিজেকে সুন্দর করা, সভ্য করা। সংস্কৃতি মানুষের আত্মার এমন আনন্দের দাত্রী, প্রেম ও সৌন্দর্য সংস্কৃতির মূল আশ্রয়। এ আশ্রয় থেকে বিচ্যুত হলে সংস্কৃতি ধ্বংস হয় । 

অপসংস্কৃতি কি : 

অপসংস্কৃতি হল সংস্কৃতির বিকৃত রূপ। সংস্কৃতির কাজ জীবনকে বিকশিত করা, চিত্তকে আনন্দিত করা, মানুষকে প্রেমবান করা। আর অপসংস্কৃতি মানুষের জীবনে বিকৃতি আনে, চিত্তে কলুষ ঢালে, মানুষের চেতানাকে নষ্ট করে, মূল্যবোধে ভাঙন ধরায় । যে আচার বা আচরণে মানুষের আত্মার অবনতি হয়, তাই অপসংস্কৃতি।

দেশ ও মাটির সাথে সংস্কৃতির সম্পর্ক : 

ব্যাপক অর্থে সংস্কৃতি পরিশীলিত জীবনবোধ। এ পরিশীলিত জীবনবোধ জন্ম নেয় শিক্ষা, সভ্যতার আলোকে স্নাত হয়ে । আমাদের দেশের মাটির সাথে আমাদের নাড়ীর যোগ অবিচ্ছেদ্য । আমরা যে শিক্ষা গ্রহণ করি তা যদি দেশকে ভালবাসতে না শেখায়, জীবনে প্রেমময় না করে, মানুষের প্রতি দরদী না করে, তাহলে সে শিক্ষা অপশিক্ষা ।

আরও পড়ুন :- নিরক্ষরতা দূরীকরণ - বাংলা  রচনা | Sikkhagar

আর এ অপশিক্ষার পথ ধরে অপসংস্কৃতি আমাদের জীবনে শিকড় গাড়ে । বর্তমানে আমরা দেশজ রীতিনীতি, দেশজ মূল্যবোধ বিসর্জন দিতে শুরু করেছি। আমাদের সমাজে যে অপসংস্কৃতি প্রবেশ করেছে তা তরুণ সমাজের আচার-আচরণ, পোশাক-আশাক দেখলেই বুঝা যায় । 

তারা দেশীয় আবহাওয়ায় বিদেশী জীবনবোধকে গ্রহণ করে আত্মতৃপ্তি পাচ্ছে। পাশ্চাত্যের অনুগামী হয়ে ডিসকো নাচ, গান ও অশ্লীল ছবি দর্শনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে।

অপসংস্কৃতির কুফল : 

সংস্কৃতি যেমন জীবনকে সুন্দর করে বাঁচার গৌরব দেয়, অপসংস্কৃতি তেমনি জীবনকে অসুন্দর করে, ধ্বংসের দিকে টেনে নেয় । অপসংস্কৃতি স্থায়ী নয়, তা ক্ষণিক ও চমক। সে জন্যই এটি ক্ষতিকর। সংস্কৃতি তো দীর্ঘদিনের অনুশীলনের মাধ্যমে লব্ধ সুন্দরের অনুদান । তা থেকে চ্যুত হলেই অপসংস্কৃতি প্রবেশাধিকার পায়।

কোন জাতির জীবনে অপসংস্কৃতি একবার ঢুকলে অপসারিত করা কঠিন । অপসংস্কৃতি মূল্যাবোধের মৃত্যু ঘটায়। বিবেকের দরজায় কড়া লাগায় এবং উৎকট, উদ্ভট আচার-আচরণ উল্লাসে ধ্বংস নাচন নাচে শুধু ।

আরও পড়ুন :- মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান- রচনা [Class - 6, 7, 8 ,9 ,10]এবং hsc

অপসংস্কৃতির উৎস : 

বিদেশী সংস্কৃতিমাত্রই অপসংস্কৃতি নয়। কারণ সংস্কৃতি হল মানুষের জীবন চেতনার পরিস্রুত ও পরিশীলিত রূপ। তাই বিদেশী কোন কিছুকে গ্রহণ করার আগে বিবেচনা করে নিতে হবে তা আমাদের জীবনের উন্নতিতে সহায়ক হবে কিনা; আমাদের চিন্তা ভাবনাকে আরো উদার ও মহৎ করবে কিনা। যদি না করে তবে তা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য নয় । 

সংস্কৃতির চর্চার নানাদিক আছে, নানা পথ আছে- সাহিত্য, সঙ্গীত, নাচ ইত্যাদি সংস্কৃতির অঙ্গ। সাম্প্রদায়িকতা, হিংসা ও কুটিলতা সংস্কৃতির পথে প্রতিবন্ধকতা স্বরূপ। কারণ এগুলোই অপসংস্কৃতির মূল উৎস। কাজেই বিদেশী সংস্কৃতি মানেই অপসংস্কৃতি নয় যদি তা আমাদের জীবনকে বিপথে পরিচালিত না করে ।

অপসংস্কৃতি ও তরুণ সমাজ : 

একটি দেশের ভবিষ্যৎ হল সে দেশের তরুণ সমাজ। এ ভবিষ্যতকে নষ্ট করার অপকৌশল হচ্ছে অপসংস্কৃতিকে উৎসাহিত করে বাস্তবে তা প্রয়োগ করা। আমাদের সমাজের তরুণ-তরুণীদের উপর অপসংস্কৃতির কুপ্রভাব অতি গভীর ও ব্যাপক। সিনেমার কাহিনী, নাচ-গান, পোশাক-আশাক ইত্যাদি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এমনভাবে সন্নিবেশিত হয় যাতে জনসাধারণ অতি সহজে আমোদ-আহলাদের উপকরণ খুঁজে পায়। 

আরও পড়ুন :- সময়ের মূল্য - বাংলা রচনা ২০ পয়েন্ট [ সাথে PDF ২টি ]

তরুণ-তরুণীরা সিনেমার উদ্ভট, অবাস্তব জীবনকেই অনেক সময় বাস্তব জীবন বলে ভুল করে এবং সিনেমাজগতের কায়দা-কানুন, পোশাক-আশাক, অন্ধভাবে অনুকরণ করতে গিয়ে কৃত্রিমতা ও অপসংস্কৃতির শিকার হয় । আমাদের সমাজে বর্তমানে যে অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে তার মূলে রয়েছে অবাধ দুর্নীতি। দুর্নীতি যে সমাজে আসন গেড়ে বসে, সে সমাজে সংস্কৃতি থাকতে পারে না। তাই সংস্কৃতির স্থান দখল করে নিয়েছে অপসংস্কৃতি ।

অপসংস্কৃতি রোধের উপায় : 

খারাপ কোন কিছুই পরিকল্পনা করে সমাজ থেকে দূর করা যায় না। সমাজের দেহ থেকে অপসংস্কৃতির প্রভাব দূর করতে হলে সবার আগে সমাজকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। অবৈধ অর্থের আমদানি রোধ করতে হবে এবং শিক্ষিত সমাজকে সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। বিদেশী কোন সংস্কৃতি গ্রহণ করা বা প্রচার করার আগে ভেবে দেখতে হবে তা আমাদের জীবন গঠনে ও সমাজ উন্নয়নে কতটা সহায়ক, যদি সহায়ক মনে না হয় তাহলে তা আমদানি বন্ধ করতে হবে। 

হিংসা, হত্যা, লুণ্ঠন, অপহরণ যেসব ছবিতে বিজয়ীর বেশে আসে, এ সব করার মধ্যে গৌরব আছে বলে ধারণা করে, সে সব ছবি বন্ধ করতে হবে । অনুকরণ করে আমরা যাতে জীবনধ্বংসী আচার-আচরণে অভ্যস্ত না হই সে স্বার্থেই তা করা উচিত ।

উপসংহার : 

সংস্কৃতি যে কোন জাতির জন্য অত্যাবশ্যক। তবে কোনটা সংস্কৃতি আর কোটা সংস্কৃতি নয়, তা বোঝার মত জ্ঞান তরুণ সমাজকে দিতে হবে এবং এ জ্ঞান দেয়া শিক্ষিত সংস্কৃতিবান শ্রেণীর একান্ত কর্তব্য। এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে রাষ্ট্র পরিচালকদের । মিথ্যা আগ্রহে যদি আমাদের চেতনা বিকশিত হয় তাহলে অপসংস্কৃতি আমাদের কাছে আদরণীয় হবে তাতে আশ্চর্য কি! 

Wax Weber বলেন,  "Cultural contamination is not desirable, cultural consecration is required."

Post a Comment

0 Comments