উপস্থাপনা :
"The crown and glory of life is character"— "চরিত্র মানব জীবনের গৌরব মুকুট।” কাজ কর্ম, কথায়-চিন্তায়, ওঠা-বসায়, আচার-আচরণে প্রতিটি ক্ষেত্রে পূত-পবিত্রতাকেই সচ্চরিত্র বলে। সুন্দর চরিত্র মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।
মানুষ অন্য কোন গুণের অধিকারী না হলেও চারিত্রিক উৎকর্ষের জন্য সমাজে শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। একমাত্র চরিত্রগুণেই মানুষ “আশরাফুল মাখলুকাত” বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
চরিত্র কী :
মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের প্রধান সোপান তার চরিত্র, চরিত্র শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ "CHARACTER" মানুষ হিসেবে সমগ্র সৎগুণাবলি ধারণ করাই চরিত্র।
সচ্চরিত্রের লক্ষণ :
যার মধ্যে সত্যনিষ্ঠা, স্পষ্টবাদিতা, আন্তরিকতা, বুদ্ধিমত্তা, স্বদেশপ্রেম, ভালবাসা, স্নেহমমতা, শ্রদ্ধাবোধ, স্নেহ প্রবণতা, সদাচারিতা ও পরের কল্যাণ ইত্যাদি থাকে তাকেই বলে সচ্চরিত্রবান।
আরও পড়ুন :- সততা অথবা সত্যবাদিতা - রচনা : ক্লাস 6 , 7 , 8 , 9, 10 | PDF
চরিত্রবান মানুষের দৃষ্টান্ত :
পৃথিবীতে অনেক মহামানব এসেছেন তাঁরা এই সচ্চরিত্রের গুণেই সবার মন জয় করে নিতে পেরেছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা), হযরত আবু বকর (রা), হযরত ওমর (রা), হযরত ওসমান (রা), হযরত আলী (রা), হযরত আয়েশা (রা), হযরত ফাতেমা (রা) প্রমুখ মনীষীগণ । তাছাড়া সকল নবী রাসূলই সৎ চরিত্রের অধিকারী ছিলেন।
চরিত্র গঠনের উপায় :
চরিত্র গঠনের বা চরিত্রকে সুন্দর করার কোন বিধিবদ্ধ নিয়ম বা সূত্র নেই। মানবজীবনে মহত্ত্বের প্রেরণা থেকেই একটি সুন্দর নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের তাগিদ আসে। পরিবার, সমাজ, পরিবেশ, বিদ্যালয়, খেলার মাঠ প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে স্তরে স্তরে চরিত্রকে গড়ে তুলতে হয়। বাহ্যিক চাকচিক্য, কুসংগ ও নানা প্রলোভনকে আত্মশক্তির ক্ষমতা দিয়ে জয় করে চরিত্রকে লাভ করতে হয়। সৎ চরিত্রে বলীয়ান ব্যক্তিই সমাজে উত্তম এবং অমূল্য চরিত্রের অধিকারী হয়।
চরিত্র গঠনে ব্যক্তি ও পরিবেশের প্রভাব :
চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে পরবর্তী ভূমিকা হচ্ছে পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও সঙ্গদোষ । কারণ কথায় বলে-
“সৎসঙ্গে স্বর্গবাস,
অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।”
শিশুর শিক্ষা জীবনে তার সহপাঠী ও শিক্ষকদের আচার-আচরণ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা তার চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন :- সময়ের মূল্য - বাংলা রচনা ২০ পয়েন্ট [ সাথে PDF ২টি ]
চরিত্রের গুরুত্ব :
চরিত্রবান ব্যক্তির মাঝে উন্নত ও উত্তম গুণাবলির সাক্ষাৎ মিলে। এসব গুণের দ্বারাই চরিত্রবান ব্যক্তি সকলের বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা অর্জন করতে সক্ষম হন। যে সমাজের লোকেরা চরিত্রবান সে সমাজের অগ্রগতি অবধারিত। শত বাধা-বিঘ্ন তাদের অগ্রযাত্রার পথ রুদ্ধ করতে পারে না, জগতে সবকিছুই কেড়ে নেয়া যায় কিন্তু চরিত্র কেড়ে নেয়া যায় না।
চরিত্রহীনতার কুফল :
চরিত্র স্বর্গীয় সম্পদ। মানুষ হিসেবে চরিত্রবান ব্যক্তি যেমন শ্রেষ্ঠ, ঠিক তেমনি চরিত্রহীন ব্যক্তি পশু থেকেও নিকৃষ্ট। বুদ্ধি-বিবেকহীন ব্যক্তি পশুপ্রবৃত্তির বশীভূত হয়ে যেমন ইন্দ্রিয়ের তৃপ্তি সাধনকেই সরাজ্ঞান করে, তেমনি চরিত্রহীন ব্যক্তি লোকসমাজে ঘৃণার পাত্র, মানবজাতির কলঙ্ক । চরিত্রহীন ব্যক্তি নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং গোটা সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
উপসংহার :
চরিত্র নষ্ট হলে মানুষের আর কিছুই থাকে না। আবার এ চরিত্রই মানুষের মনুষ্যত্বকে বিকশিত করে । একমাত্র চরিত্র বলেই মানুষ অমরত্ব লাভ করতে পারে। মানুষ হিসেবে সবার শ্রদ্ধা অর্জন করতে হলে তাকে অবশ্যই চরিত্রবান হতে হবে। চরিত্র গঠনে কঠোর সাধনার প্রয়োজন। নিষ্ঠা ও সাধনা থাকলে চারিত্রিক মাধুর্যে জীবন একদিন সুন্দর ও সার্থক হয়ে উঠবে।
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্টের তালিকা