উপস্থাপনা :
কর্মই জীবন। জীবন ও জগতে একমাত্র শ্রমের মাধ্যমেই সাফল্য আসে। শ্রমের মাধ্যমে জীবনে সাফল্যের ধারায় যে আনন্দ ও তৃপ্তি আসে, তা সত্যিই নির্মল ও অতুলনীয় । মনীষী কার্লাইলের দৃষ্টিতে দু'ধরণের মানুষ শ্রদ্ধার পাত্র। তাঁদের একজন কৃষক ও শ্রমশিল্পী, যিনি পরিশ্রমের দ্বারা অন্ন-বস্ত্রের সংস্থান করেন । আর অন্যজন জ্ঞানসাধক, যিনি আত্মার খাদ্য সংস্থানে ব্যাপৃত। প্রকৃতপক্ষে শ্রমের মাধ্যমেই মানুষ প্রতিষ্ঠা লাভ করে ।
কথায় বলে- “পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি।” এ জন্য শ্রমের মর্যাদাবোধ সকলের একান্ত কাম্য। Virgil বলেন- "The dignity of labour makes a man self-confident and high ambitious. So, the evaluation of labour is essential".
শ্রমের গুরুত্ব :
মানুষের সকল উন্নতির মূল নিয়ামক হচ্ছে শ্রম । যে যত পরিশ্রমী ভাগ্যও তার প্রতি তত বেশি প্রসন্ন। শ্রম ছাড়া উন্নতি শুধু কল্পনার বস্তু । শ্রমের দ্বারা মানুষ তার ভাগ্যকে পরিবর্তন করতে পারে। একজন মানুষ যত গরীব হয়েই জন্মগ্রহণ করুক না কেন, কঠোর শ্রমসাধনার মাধ্যমে সে দেশ ও জাতির কর্ণধার হতে পারে।
আরও পড়ুন :- শ্রমের মর্যাদা রচনা ২০ পয়েন্ট [ SSC এবং HSC ] - PDF
উন্নত দেশে শ্রমের মর্যাদা :
জাপান তার বার কোটি মানুষের চব্বিশ কোটি কর্মঠ হাতের দ্বারা বিশ্ব অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। আমেরিকা, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, জার্মান, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশের উন্নতির মূল হচ্ছে তাদের কায়িক পরিশ্রম । শ্রমকে তিনারা অত্যন্ত মর্যাদা এবং গুরুত্ব দেন। বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েও তিনারা জুতা কালি করাকে কোন ছোট কাজ মনে করেন না । তিনাদের সবার শ্লোগান হচ্ছে, “পরিশ্রমের দ্বারা উন্নতি কর অথবা নিপাত যাও”।
আমাদের দেশে শ্রমবিমুখতা :
অপ্রিয় হলেও সত্য যে আমাদের দেশের লোক অলস এবং শ্রমবিমুখ। এছাড়া দেশের শিক্ষিত লোকেরা কায়িক শ্রমকে অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখে। তাদের ধারণা পরিশ্রম করার জন্য কৃষক, জেলে, কুলি, মজুর ইত্যাদি মূর্খ লোকেরাই যথেষ্ট ।
জাতীয় জীবনে শ্রমের প্রয়োজনীয়তা :
আমাদের জনসংখ্যা সমস্যাকে জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে । তাদের জন্য কর্মের ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে । জনগণকে কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে ।
আরও পড়ুন :- সংবাদপত্র - বাংলা রচনা [ Class - 6, 7, 8 ,9 ,10] - PDF ৩টি
শ্রমই উন্নতির মূল :
ব্যক্তিগত, সমষ্টিগত বা জাতিগত সকল উন্নতির মূল হচ্ছে শ্রম ও কঠোর সাধনা। যে জাতি যত পরিশ্রমী তারা তত উন্নত। পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। দুনিয়ার ইতিহাসে যাদের গৌরবকীর্তি স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে তারা সকলেই ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী। বিদ্যা, অর্থ, সম্মান, খ্যাতি সবকিছুই শ্রম দ্বারা অর্জন করা সম্ভব ।
ইসলামে শ্রমের মর্যাদা :
আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) পরিশ্রমের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি নিজে শ্রমিকদের সাথে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন। শ্রমিকের দেহের ঘাম শুকাবার আগেই তিনি পারিশ্রমিক পরিশোধের নির্দেশ দিয়ে শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। শ্রমকে উৎসাহিত করে ভিক্ষাবৃত্তি নির্মূল করার জন্য আমাদের মহানবী (স) অনেক দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন।
উপসংহার :
আধুনিক পৃথিবী কর্ম ও শ্রমমুখর। দেশে দেশে তাই শ্রমজীবী মানুষের বিজয় ঘোষিত হচ্ছে। আমাদের দেশের সামগ্রিক কল্যাণের জন্য অবশ্যই শ্রমের যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে হবে। শ্রম দেহকে নীরোগ ও মনকে সতেজ করে। শ্রমের যথার্থ মর্যাদা দানের মাধ্যমে দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে আমাদের সকলকে সচেষ্ট হতে হবে।