বাংলা প্রবন্ধ রচনা : বিজ্ঞান মেলা - 2024

ভূমিকা : 

মানুষ নানা প্রয়োজনে কোন স্থানে একত্র হয়, একটি দিনকে করে তোলে মুখর। উৎসবে, পার্বণে মানুষ পরস্পর মেশে। কোনও একটি দিনকে উপলক্ষ করে মানুষের মেলামেশা সহজ আনন্দকে সজীব করে তোলে। বছরের প্রথম দিন অথবা সংক্রান্তির দিন, ধর্মীয় কোন উৎসবের সময় কোন এক নির্দিষ্ট জায়গায় মেলা বসে।

আবহমানকাল ধরে পৃথিবীর নানা দেশে নানা অঞ্চলে মেলার প্রচলন ঐতিহ্যের অঙ্গ হয়ে আছে। বর্তমানে কৃষি মেলা, বস্ত্র মেলা, বিজ্ঞান মেলা ইত্যাদির প্রচলন হয়েছে। জীবনের প্রয়োজনের সাথে তাল রেখেই এসব মেলা পালিত হচ্ছে।

বিজ্ঞান মেলা কি : 

মেলায় নানা দ্রব্যের আমদানি হয়। সাধারণত মেলায় দ্রব্য বেচাকেনা হয় এবং নানা রকম সৌখিন দ্রব্যের হাট বসে। মেলায় শিশু-কিশোরদের মন আকর্ষণ করার মত দ্রব্যসামগ্রী আমদানি করা হয় । কোন কোন মেলায় চিত্ত বিনোদনের মত নানা উপকরণও থাকে। যেমন- নাগরদোলা, যাত্রা, থিয়েটার, সার্কাস, যাদু প্রদর্শনী ইত্যাদি। কিন্তু বিজ্ঞান মেলা একটু ভিন্ন ধরণের মেলা। 

এ. মেলায় দ্রব্য কেনাবেচা হয় না। বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কার এবং দ্রাসামগ্রী এ মেলায় দেখানো হয়। স্টলে স্টলে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার ইত্যাদি সাধারণকে দেখানো এবং ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনী শক্তিকে উৎসাহিত করার জন্যই বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করা হয় ।

আরও পড়ুন :- মানব কল্যাণে বিজ্ঞান - বাংলা  রচনা ২০ পয়েন্ট - PDF

স্থান : 

বিজ্ঞান মেলা বটতলা, হাটখোলা বা নদীর ধারে বসেনা। তা একান্তই ঘরোয়া পরিবেশে কোন স্কুল-মাদ্রাসা-কলেজে বসে । স্কুল বা কলেজের কক্ষে কক্ষে বিজ্ঞানের আবিষ্কারসমূহ সাজানো থাকে। সে সব আবিষ্কার সম্পর্কে একদল তরুণ বিজ্ঞানী দর্শকবৃন্দকে অবহিত করে। তারা বিচিত্র দ্রব্যসামগ্রী যা আমাদের জীবনের প্রয়োজনে লাগছে, প্রদর্শিত করে।

বিজ্ঞান মেলার প্রচলন : 

বিজ্ঞান মেলা ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠেনি। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বিজ্ঞান মেলার প্রচলন শুরু হয় । প্রথমে উন্নত দেশসমূহে এ মেলার প্রচলন শুরু হয় । বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নেয়া হয়।

বিজ্ঞান মেলার উদ্দেশ্য : 

বিজ্ঞান মেলার মুখ্য উদ্দেশ্য মানুষকে বিজ্ঞানে মনস্ক করে তোলা । বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করা। আর যারা বিজ্ঞান পাঠ করে তাদের চেতনাকে প্রখরতা দেয়া। শুধু পুঁথিগত বিদ্যা বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য যথেষ্ট নয়। পুঁথিগত বিদ্যা লাভের সাথে সাথে বাস্তব অনুশীলনের ভেতর দিয়ে বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারকে সম্ভব করে তোলা একান্ত দরকার ।

বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠানের সময় : 

পূর্বেই বলা হয়েছে আমাদের দেশে বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত হয় সরকারী নির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় । বিজ্ঞান মেলা সাধারণত নভেম্বর, ডিসেম্বর বা জানুয়ারী মাসে অনুষ্ঠিত হয় । বর্তমানে তা জেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলার স্কুল-মাদ্‌রাসা-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা এতে অংশগ্রহণ করে। 

ছাত্রছাত্রীর উদ্ভাবনী শক্তির চমৎকারিত্বে নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করে তা উৎসাহী জনগণকে দেখায়। মেলায় যেসব তরুণ বিজ্ঞান সৃজনী শক্তি ব্যবহার করে মৌলিক উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দিতে সক্ষম হয় তাদেরকে পুরষ্কৃত করা হয়।

আরও পড়ুন :- মানব কল্যাণে বিজ্ঞান অথবা বিজ্ঞানের জয়যাত্রা - রচনা | PDF 

মেলার আবশ্যকতা : 

বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারের ফলে জীবন হয়েছে সহজ। উন্নত দেশসমূহে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞানীদের নিরলস চেষ্টা, মেধার বিকাশ, উদ্ভাবনী শক্তির পরীক্ষামূলক অনুশীলনের ভেতর দিয়ে । আমাদের দেশে বিজ্ঞান চর্চা সহজ আনন্দের বিষয় করে তোলার জন্যে বিজ্ঞান মেলার আবশ্যকতা অনস্বীকার্য ।

উপকারিতা : 

আমাদের দেশে প্রতি বছরই বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্কুল, মাদ্‌রাসা ও কলেজের ছাত্রছাত্রীরা তাদের অধীত বিষয় অবলম্বনে নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করতে চেষ্টা করে। তারা উৎসাহিত হয় বিজ্ঞান চর্চা ও বিজ্ঞান অনুশীলনে। এতে তাদের সৃজনী শক্তি বাড়ে, নতুন জিনিস আবিষ্কারে উৎসাহিত হয়। আজ সাধারণত মানুষ যারা বিজ্ঞান মেলা দেখতে আসেন তাঁরা এসব আবিষ্কার দেখে বিজ্ঞানের সাথে পরিচিত হন।

উপসংহার : 

আমাদের দেশে বিজ্ঞান চর্চার পথ সহজ ও সুগম করার লক্ষ্যে বিজ্ঞান মেলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ মেলার উদ্দেশ্যকে সফল করে তুলতে হলে ছাত্র-শিক্ষক সকলের সহযোগিতা দরকার। মেধা, শ্রম ও উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ ঘটিয়ে বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করে তুলতে পার যাদের দেশও বিজ্ঞানের আবিষ্কারে অবদান রাখতে সক্ষম হবে তাতে সন্দেহ নেই ।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad