বর্ষাকাল রচনা - ১
সূচনা :
বর্ষা বাংলাদেশের দ্বিতীয় ঋতু । আমাদের দেশে আষাঢ়-শ্রাবণ এই দু'মাস বর্ষাকাল । ষড়ঋতুর এই দেশে বর্ষা আসে সজল মেঘের ভেলায় চড়ে সাজসাজ রবে। বিভিন্ন কারণে বর্ষা আমার প্রিয় ঋতু ।
বর্ষার প্রকৃতি :
বর্ষার সময় আকাশ প্রায়ই মেঘে ঢাকা থাকে। ঘন ঘন বৃষ্টি হয়। কখনো কখনো বজ্রপাত ও বিদ্যুৎ চমকসহ ঝড় হয়। এমনও হয় যে, একটানা কয়েকদিন সূর্যের দেখা মেলে না। অতি বৃষ্টির ফলে অনেক সময় বন্যা হয়।
খাল-বিল, নদী-নালার পানি উপচে মাঠ-ঘাট, লোকালয় পানিতে ডুবে যায়। এ সময় গ্রামের মানুষ নৌকায় চলাচল করে । অনেক সময় অতি বৃষ্টিতে শহরেরও সড়ক বা নিচু এলাকায় পানি জমে যায়। ফলে নাগরিকদের চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
বর্ষার ফুল-ফল :
বর্ষায় বিলে-ঝিলে ফোটে পদ্ম, শাপলা, কলমি ইত্যাদি ফুল। ডাঙায় ফোটে কদম, কেয়া, হিজল, বেলি, গন্ধরাজ ইত্যাদি ফুল । বর্ষাকালে পেয়ারা, আতা, বাতাবি লেবু, আমড়া, লটকন ইত্যাদি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন :- গ্রীষ্মকাল - বাংলা রচনা : ক্লাস ৩, ৪, ৫
বর্ষার সৌন্দর্য :
বর্ষায় প্রকৃতি এক ভিন্ন সাজে আবির্ভূত হয়। নদী- নালা সব পানিতে থৈ থৈ করে। গ্রামে গেলে মনে হয় বাড়িঘরগুলো দ্বীপের মতো পানিতে ভেসে আছে। এ সময় বড়দের সঙ্গে নৌকায় চড়ে বেড়াতে আমার খুব ভালো লাগে।
গ্রামের বাড়িতে টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ শুনতে আমি খুব পছন্দ করি। কদম-হিজল-গন্ধরাজ ফুলের সুবাসে পল্লি প্রকৃতি হয়ে ওঠে মোহনীয়। বর্ষার নতুন পানি চারপাশ পরিচ্ছন্ন করে তোলে । জলাশয়ে এ সময় প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। মাছ ধরা বর্ষাকালের অন্যতম উৎসব। এসব কারণে এ ঋতু আমার প্রিয় ।
উপসংহার :
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ বলে ঋতুচক্রে বর্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উপকারিতার পাশাপাশি সৌন্দর্যের জন্যও বর্ষা আমার বেশি প্রিয়।
বর্ষাকাল রচনা - ২
সূচনা :-
গ্রীষ্মের প্রখর তাপে দেশ যখন প্রায় দগ্ধ হয়ে ওঠে তখন বর্ষার বৃষ্টিপাত ভূমিকে সরস ও সজীব করে তোলে। বর্ষা তাই আমাদের কাছে অতি প্ৰিয় ।
সময় :
বাংলাদেশে ছয়টি ঋতুর মধ্যে বর্ষা দ্বিতীয় ঋতু। আষাঢ় ও শ্রাবণ এই দু’মাস বর্ষাকাল। কিন্তু বাংলাদেশে প্রায় ভাদ্রমাস পর্যন্ত বর্ষা স্থায়ী হয়।
প্রাকৃতিক অবস্থা :
বর্ষার আগমনের সাথে সাথেই আকাশ জুড়ে শুরু হয় কালো মেঘের ঘনঘটা। মাঝে মাঝে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়তে থাকে। কখনো দিনের পর দিন চলতে থাকে একটানা বৃষ্টি। যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। কবির ভাষায়—
“বর্ষার ঝর ঝর সারাদিন ঝরছে
মাঠ-ঘাট থৈ থৈ খাল বিল ভরছে।”
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপে যে সব গাছপালা শুকিয়ে গিয়েছিল, বর্ষার পানিতে আবার তা হয়ে ওঠে সবুজ আর সতেজ।
আরও পড়ুন :- শীতকাল - রচনা Class 3, 4, 5
উপকারিতা :
কৃষি প্রধান এই বাংলাদেশে বর্ষার পানির ওপরই আমাদের ফসল নির্ভর করে। যে বছর বর্ষায় পরিমাণ মতো বৃষ্টি হয়, সে বছর ফলন হয় প্রচুর। এছাড়া বর্ষার পানিতে আবর্জনা পরিষ্কার হয়ে থাকে। এর সাথে পরিষ্কার হয়ে যায় রোগ জীবাণু। এ সময় প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। এই বর্ষায় জন্মে আনারস, পেয়ারা, তাল, আতা, আরও কত কী ফল!
অসুবিধা :
বর্ষা আমাদের জন্য কল্যাণকর বটে। অনেক সময় আবার নানা রকমের অসুবিধারও সৃষ্টি করে। বর্ষার প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে পথ-ঘাট কর্দমাক্ত ও নোংরা হয়ে যায়। এতে চলাফেরার অসুবিধা হয়। বর্ষার অতিরিক্ত বৃষ্টি বা নদীর পানিতে কখনো কখনো বন্যা ঘটায়। বন্যার ফলে মহামারী এবং দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এতে শত শত লোকের প্রাণহানিও ঘটে।
উপসংহার :
বর্ষায় নানা রকম অসুবিধা আছে বটে, কিন্তু অপকারের তুলনায় উপকার বেশি। বর্ষা না হলে এদেশে ফসল হত না। গাছ-পালা জন্মাত না। যেখানে বর্ষা নেই, সেখানে সব শূন্য, মরুভূমি। তাই শুষ্ক পৃথিবীর বুকে বর্ষা হলো নবজীবনের আশীর্বাদ।
বর্ষাকাল রচনা - ৩
ভূমিকা :
প্রকৃতির অপূর্ব রূপ ও সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এ দেশ বাংলাদেশ। এখানে দু মাস পর পর হয় ঋতু বদল। এর মধ্যে বর্ষাকালের অস্তিত্ব অনুভূত হয় অনেকটাই ভিন্ন আঙ্গিকে। ষড়ঋতুর রঙের খেলার রুক্ষ শুষ্ক প্রকৃতিকে নানা উপাচারে ভরে দিতে দিগ্বীজয়ী যোদ্ধার মতো মেঘের পিঠে সওয়ার হয়ে,
বজ্রের ডামাডোল বাজিয়ে বিদ্যুতের নিশান উড়িয়ে অনেকটা হৈচৈ রবে আগমন ঘটে বর্ষার। সারাদিন বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ, ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক, জুঁই, কামিনী, কেয়া আর কদম্বের ঘ্রাণে উন্মাতাল মন প্রাণ সব মিলে বহুধা অভিধায় সিক্ত বর্ষাকাল ।
সময়কাল :
ঋতু পরিক্রমায় আষাঢ়-শ্রাবণ এ দুমাস মিলে বর্ষাকাল হলেও খেয়ালী বর্ষা সব সময়ই যে ঠিকমত আসে এমনটা নয়। তাই অনেক সময় জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে শুরু হয়ে আশ্বিন মাস পর্যন্ত বর্ষাকাল স্থায়ী হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন :- আমার প্রিয় ঋতু (বসন্ত /বর্ষাকাল) রচনা - Class 2, 3, 4, 5
বর্ষার আগমন :
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাহে মাঠ-ঘাট, পথ-প্রান্তর যখন ফেটে চৌচির তখন বৃষ্টির প্রতীক্ষায় উন্মুখ পৃথিবীকে ঐশ্বর্যে ভরে দিতে অনেকটা রূপকথার রাজপুত্রের মতো আগমন ঘটে বর্ষার। বর্ষা তার শ্যামল সুন্দর রূপ নিয়ে যতটা স্পষ্টভাবে আবির্ভূত হয় অন্য কোনো ঋতুর বেলায় তেমনটা হয় না।
প্রকৃতিও তার আগমনী বার্তাকে যেভাবে স্বাগত জানায় অন্য কোনো ঋতুর সঙ্গে তুলনা করলে তাকে একপেশে মনে হয়। সব মিলে বর্ষার আগমনে প্রকৃতি নিজস্ব রূপ, রস, সৌন্দর্যে কানায় কানায় ভরে ওঠে।
বর্ষায় মানবমনে প্রভাব :
সারাদিন বর্ষার রিমঝিম শব্দে বিরহ বেদনায় চিত্ত ব্যাকুল হয়ে ওঠে। মনের মধ্যে জাগে পুরানো কথা, পুরনো ব্যথা। কীসের যেন অভাব, কী যেন না পাওয়ার বেদনা অভিভূত করে ফেলে মানুষকে। কার যেন নিবিড় সান্নিধ্য চায় মন, আর কেবলি মনে হয়-
“এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘন ঘোর বরিষায়।”
বর্ষার রূপ :
বর্ষায় বাংলাদেশ এক অপরূপ সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। এর স্নিগ্ধ, শীতল ধারা বর্ষণে নতুন প্রাণ ও রোমাঞ্চ জাগে সর্বত্র। বর্ষার বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতি আরো যেন পূতপবিত্র হয়ে ওঠে। নদ-নদী, খাল-বিল সর্বত্রই যেন আলাদা এক প্রাণচাঞ্চল্য। চারদিকে শ্যামল সবুজের সমারোহ নিয়ে সৌন্দর্যের পুরো ডালা মেলে ধরে বর্ষাকাল। এ সময়ের নানা রসালো ফলের অকৃপণ ঔদার্য বাংলাদেশকে নতুন এক শ্রী দান করে।
আরও পড়ুন :- শীতের সকাল - বাংলা রচনা : Class 3, 4, 5
উপকারিতা :
বর্ষার মনোরম ও মোহনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাদের মনকে মোহিত করে। বর্ষার মেঘলা আবহাওয়া, বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ মনকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। বর্ষার পানিতে যে নতুন পলিমাটি জমে তা জমির উর্বরাশক্তি বাড়ায়। এছাড়া নৌপথে যাতায়াতের জন্য বর্ষাকালই উপযুক্ত সময় ৷
অপকারিতা :
বর্ষা আমাদের অনেক ক্ষতিও সাধন করে থাকে। এ সময় অনবরত বৃষ্টিপাতের ফলে রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত হয়ে যায়। ফলে হেঁটে চলাচল করা এ সময় অসম্ভব হয়ে ওঠে। নদ-নদীগুলোতে সর্বনাশা বান ডাকে। বানের জলে কৃষকের আবাদি ফসল নষ্ট হয়, ঘরবাড়ি ডুবে যায় এবং গবাদিপশু ভেসে যায়। ডায়রিয়া, আমাশয়ে বহু লোকের মৃত্যু ঘটে। শহরের ব্যস্ত জীবনেও বর্ষা বেশ বিঘ্ন ঘটায়।
উপসংহার :
পরিশেষে বলা যায়, বর্ষা অন্যান্য ঋতুর চেয়ে অনেকটাই জীবন ঘনিষ্ঠ। তাই এর আগমন অনেকটা চোখে পড়ার মতো। সব মিলে এর অপরূপ সৌন্দর্যের জন্য কবি-সাহিত্যিকের মতো আমারও ভালো লাগে বর্ষাকালকে।