কৃষি কাজে বিজ্ঞান - রচনা [ Class - 6, 7, 8, 9 ,10 ] - PDF

উপস্থাপনা :

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। দেশটি অত্যন্ত জনবহুল। দেশের অর্থনীতি যেমন কৃষির ওপর নির্ভরশীল, তেমনি এ দেশের মানুষের জীবনযাত্রাও কৃষির ওপর নির্ভরশীল। সভ্যতার ঊষালগ্নে মানুষ যেদিন মাটিতে বীজ বুনে ফল ও ফসল ফলাতে শুরু করল, সেদিন থেকেই ফসল উৎপাদনের কাজে নতুন পন্থার উদ্ভাবন হলো। শুরু হলো কৃষি কাজে বিজ্ঞানের বাস্তব প্রয়োগ ।

কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রভাব :

একবিংশ শতাব্দির এই ঊষালগ্নে বিশ্ববাসীর জীবনে বিজ্ঞান এতই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছে যে, বিজ্ঞান ছাড়া আজ সভ্য জগত কল্পনাই করা যায় না। কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রয়োগের মাধ্যমে-

ক. ফসল উৎপাদনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।

খ. বৈজ্ঞানিক উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগে আজ মরুভূমিও হয়ে ওঠেছে শস্য-শ্যামল।

গ. উদ্দম-উচ্ছৃঙ্খল নদী স্রোতকে বশীভূত করে উষ্ণ প্রান্তরকে করেছে জলসিক্ত।

ঘ. অনুর্বর কঠিন ভূমিকে উর্বর করে তাকে করা হচ্ছে শস্যময় ।

কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের আবশ্যকতা : 

আমাদের দেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রাচীন পদ্ধতির চাষাবাদের ফলে উৎপাদিত শস্য বাড়তি জনসংখ্যার চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। কিন্তু উন্নত দেশগুলোতে ব্যাপকহারে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারে উৎপাদন বেশি হচ্ছে। তাই আমাদের দেশের মানুষের খাদ্যাভাব পূরণের লক্ষ্যে কৃষিকাজে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন :-  কৃষিকাজে বিজ্ঞান - বাংলা রচনা  ২০ পয়েন্ট

বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার : 

উৎপাদনের সকল স্তরে আধুনিক কৃষিজ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে চাষ-প্রণালিতে বিজ্ঞানের প্রয়োগ করা যেতে পারে। এ পদ্ধতিতে মান্ধাতার আমলের কাঠের লাঙ্গল, বলদ, মই, নিড়ানী-কোদাল, কাস্তে ইত্যাদির পরিবর্তে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি যেমন চাষের জন্য- পাওয়ার টিলার, বীজ বোনার জন্য সিডলিং, মই দেয়ার জন্য লেভেলার, পানি সেচের জন্য গভীর ও অগভীর পাওয়ার পাম্প, আগাছা পরিষ্কারের জন্য উইডার, ফসল সংগ্রহের জন্য হারভেস্টার, ফসল মাড়াই-এর জন্য সেসার ইত্যাদি ব্যবহার করা যায় ।

কৃষি গবেষণায় বিজ্ঞান : 

কৃষি গবেষণার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়োগ অপরিহার্য। যেমন-

ক. কৃষিতে দ্রব্যের বা পণ্যের ব্যবহার সংরক্ষণ ও নতুন ধরনের বীজ উদ্ভাবন ।

খ. অপ্রচলিত কৃষিজাত দ্রব্যের বা পণ্যের ব্যবহার এবং চাষাবাদ সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও তথ্য সংগ্রহ ।

গ. পরিবেশ ও আবহাওয়া দূষণের সাথে সম্পর্ক বিধান করে কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহারোপযোগী সার ও কীটনাশক প্রভৃতি প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ। 

আরও পড়ুন :-  দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা ১৫ পয়েন্ট-Class 6,7,8,9,10| পিডিএফ

বাংলাদেশের বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি কর্মকাণ্ডের গুরুত্ব : 

ক্ষুদ্রায়তন বাংলাদেশের জনসংখ্যার বিপুলতা অপেক্ষা কৃষি জমির পরিমাণ খুবই কম । আমাদের দেশের প্রচলিত চাষাবাদ পদ্ধতি জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সমতা বজায় রেখে কৃষি ক্ষেত্রে আশানুরূপ ফসল উৎপাদন করতে পারছে না। তাই আমাদের দেশে উন্নত বীজ ও কৃষিক্ষেত্রের মান অনুযায়ী রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রয়োগ ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো অত্যাবশ্যক ।

কৃষিক্ষেত্রে আমাদের সম্ভাবনা : 

কৃষিকাজে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও সর্বাধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করা, যাতে কম মূল্যে কৃষিজ যন্ত্রপাতি কৃষক সম্প্রদায়ের হাতে পৌঁছে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব । এজন্যে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমার কথা, বর্তমানে সরকার ও বিভিন্ন এনজিও গ্রাম্য যুবকদের কৃষি পদ্ধতি সম্বন্ধে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে।

উপসংহার : 

কৃষি ছাড়া আমাদের গত্যন্তর নেই। আমাদের দেশের জাতীয় উন্নয়ন সম্পূর্ণরূপে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। একমাত্র বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমেই কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে পরনির্ভরশীলতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব ।



Post a Comment

0 Comments