স্বাধীনতা দিবস - রচনা : তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণী (৩টি)

স্বাধীনতা দিবস রচনা - ১

সূচনা  

পৃথিবীর ছোট বড় প্রত্যেকটি দেশেরই কিছু গৌরবোজ্জ্বল জাতীয় দিবস আছে, যেগুলো অত্যন্ত মর্যাদার সাথে পালন করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস এমনই একটি মর্যাদাপূর্ণ দিন। ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস।

মুক্তিযুদ্ধ  

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদারেরা নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা নির্বিচারে নির্যাতন ধর্ষণ- হত্যা চালাতে থাকে। এ কাজে তাদের সহায়তা করে আল বদর, আল শামস ও রাজাকারের দল। 

গ্রামে গঞ্জে শহরে কৃষক- শ্রমিক, ছাত্র-পুলিশ আনসার সবাই মিলে শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৪ ডিসেম্বর থেকে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী একসঙ্গে আক্রমণ শুরু করে। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ পাকবাহিনী রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করে ।

২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস হওয়ার কারণ  

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ মাস চলেছে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা অর্জিত হয় নি, শুরু হয়েছে মাত্র। তাই যুদ্ধ শুরু হওয়ার এ দিনটিই আমাদের স্বাধীনতা দিবস।

আরও পড়ুন :- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস - রচনা : Class 3, 4, 5

স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য  

বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। ত্রিশ লক্ষ শহিদ স্বাধীনতার জন্যে জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাই এ দিবসের তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।

স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন  

১৯৭২ সারে ২৬ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপিত হয়। এ দিনে দেশের সব স্কুল- কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকে। তোপধ্বনি, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ, সামরিক কুচকাওয়াজ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে এ দিবসটি পালিত হয়।

উপসংহার  

স্বাধীনতা একটি জাতির সবচেয়ে গৌরবের বিষয়। আমরা এ অমূল্য ধন লাভ করেছি ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে। যেকোনো মূল্যে আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখব।

স্বাধীনতা দিবস রচনা - ২

ভূমিকা  

১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ শুরু হয় স্বাধীনতার সংগ্রাম। প্রায় ৩০ লক্ষ লোকের আত্মত্যাগের ফলে অর্জিত হয় আমাদের এই স্বাধীনতা।

ঐতিহাসিক পটভূমি  

১৯৪৭ সালে ইংরেজদের শাসন হতে মুক্তি লাভের পর এদেশবাসী আশা করেছিল যে তারা স্বাধীনতার প্রকৃত আস্বাদ পাবে। কিন্তু ২৪ বছরের পশ্চিম পাকিস্তানী দুঃশাসনে পাকিস্তানের দু অংশের মধ্যে শোষণ, বঞ্চনা ও অর্থনৈতিক বৈষম্য অত্যন্ত প্রকট হয়। শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে তাই এদেশবাসী প্রতিবাদ করেছে। ১৯৪৮ সালে যখন এদেশবাসীর মুখের ভাষাকে পশ্চিমা বর্বর গোষ্ঠী কেড়ে নিয়ে উর্দুকে সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করতে চেয়েছিল তখনই বাঙালি জাতীয়বাদের প্রথম উন্মেষ ঘটে। 

১৯৫২ সালে আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার মর্যাদা আদায় করা হয়। এর পর ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রথম বিজয় সূচীত হয়। ১৯৬২, ১৯৬৬ এবং ১৯৬৭ সালের গণঅভ্যূত্থানে এদেশবাসী প্রতিবাদ ও আন্দোলন করেছে। কিন্তু তাতেও পশ্চিমা বর্বরদের চৈতন্য হলো না।

আরও পড়ুন :- বিজয় দিবস - রচনা ২০০ শব্দ [ class 3, 4, 5 ]

অবশেষে, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে এদেশবাসী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতায় বিজয় লাভের পরও যখন নির্বাচিতদের ক্ষমতা দেওয়ার ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্র শুরু করল তখনই এদেশবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়তে লাগল। অবশেষে নিরূপায় হয়েই এদেশবাসী পশ্চিমা বর্বর গোষ্ঠীর শোষণ হতে মুক্তি লাভের জন্য স্বাধীনতা সংগ্রামে নেমে পড়ল। 

স্বাধীনতা সংগ্রাম  

এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন ছাত্র, শিক্ষক, ক্ষেত মজুর, পুলিশ, ই.পি.আর, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী সহ এদেশের আবাল বৃদ্ধ বনিতা। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করার পর ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সহায়তায় ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় আসে।

উপসংহার  

প্রতি বছর ২৬শে মার্চ আমাদেরকে স্বাধীনতার মহান আদর্শের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। কিশোর-কিশোরী, শিক্ষার্থীদের এ মহান স্বাধীনতা দিবসের আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে গড়ে তোলা উচিত।

স্বাধীনতা দিবস রচনা - ৩

ভূমিকা  

২৬ মার্চ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে পরাধীনতার গ্লানী ধুয়ে মুছে ফেলে দিয়ে আমাদের দেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের দরবারে আত্মপ্রকাশ করে। সেজন্যে এ দিনটি আমাদের খুবই আনন্দের ও গৌরবের।

স্বাধীনতার ইতিহাস  

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশের নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী গণতান্ত্রিক পথ পরিহার করে দমন নীতির পথ বেছে নেয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে স্বাধীনতার বীজ উপ্ত হয়।

১৯৫৪-এর সাধারণ নির্বাচন, ১৯৬৬- এর ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর নির্বাচন, এসব আন্দোলনের বিভিন্ন স্তর। পাকিস্তান সরকার সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাত্রিতে রক্তক্ষয়ী নারকীয় হত্যাকান্ডের সূচনা করে।

স্বাধীনতা দিবস  

২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। কুষ্টিয়ার মেহেরপুরে ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়। দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য বাংলার মাটিতে আত্মসমর্পণ করে। শত্রুমুক্ত হয় আমাদের এ বাংলাদেশ। ১৬ই ডিসেম্বরকে ঘোষণা করা হয় বিজয় দিবস হিসেবে। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। 

আরও পড়ুন :- স্বাধীনতা দিবস - রচনা ১০০, ২০০ এবং ৫০০ শব্দ

দিবসের কর্মকান্ড  

দিনটির শুরু হয় একুশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে। সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে, অফিসে, আদালতে, স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বর্ণাঢ্য সাজে সাজানো হয়। পতাকায়, ফেস্টুনে, ব্যানারে শোভিত সারা দেশ উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠে। 

বেতার ও টেলিভিশনে এই দিনটি উপলক্ষে বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। খবরের কাগজগুলো স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিশেষ সাময়িকী বা ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। মসজিদ, মন্দির ও নানা উপাসনালয়ে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের উদ্দেশ্যে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হয়। 

ঢাকার অদুরে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে লাখো জনতা ফুল দিয়ে স্বাধীনতার বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে মুক্তিযোদ্ধা, সেনা, নৌ, বিমান, বিডিআর, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যগণ মনোরম প্যারেডে অংশগ্রহণ করে। দেশের অন্যান্য স্থানেও এ দিবস উপলক্ষে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

উপসংহার 

স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ জাতীয় জীবনে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে। সেদিন সকলে দেশ গড়ার সংকল্পে উদ্বুদ্ধ হই ও নতুন করে দেশকে ভালোবাসতে প্রেরণা পাই। শপথ নেই বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে যোগ্য আসনে প্রতিষ্ঠা করার।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad