রচনা : কাজী নজরুল ইসলাম (৩টি)

কাজী নজরুল ইসলাম রচনা - ১

সূচনা  

নজরুল ইসলাম আমার প্রিয় কবি। তিনি আমাদের কাছে বিদ্রোহী কবি নামে অধিক পরিচিত। তাঁর বিদ্রোহী চেতনা মানব রক্তে শিহরণ জাগায় ।

জন্ম ও বাল্যকাল  

১৮৯৯ সালের ২৪শে মে বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম। তাঁর পিতার নাম ফকির আহমেদ এবং মাতার নাম জাহেদা খাতুন। মাত্র আট বছর বয়সে নজরুল পিতৃহীন হন। তাঁর জন্মের পূর্বে পর পর তাঁর চার ভাই মারা যায়। এজন্যই পিতা মাতা তাঁকে দুখুমিয়া বলে ডাকতেন। 

তিনি মক্তবে শিক্ষার পর নিম্নমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন এবং সেই মক্তবেই মোল্লাগিরি করে কিছু রোজগারের চেষ্টা করতেন। এ সময় তিনি গান বাজনা ও পালাগানের দলে জড়িয়ে পড়েন। নজরুলের চাচা ছিলেন এক লেটোর দলের ওস্তাদ কবি, আর নজরুল ছিলেন তার উপযুক্ত শিষ্য। 

বাড়ি হতে পালিয়ে নজরুল আসানসোলের এক রুটির দোকানে পাঁচ টাকা বেতনে চাকরি নিলেন। এ সময় তিনি এক দারোগার সাথে ময়মনসিংহ ত্রিশালে চলে আসেন। নজরুলের বুদ্ধি দীপ্ততে বিমোহিত হয়ে তিনি তাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। কিন্তু স্কুলে তার লেখা-পড়া বেশি দিন স্থায়ী হল না। 

আরও পড়ুন :-  রচনা : আমার প্রিয় লেখক - কাজী নজরুল ইসলাম

সৈনিক জীবন  

১৯১৬ সালে নজরুল যখন দশম শ্রেণীর ছাত্র তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। তিনি তখন দেশের প্রয়োজনে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং স্বল্প সময়ে হাবিলদার পদে উন্নীত হন।

জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন  

যুদ্ধ শেষে তিনি দেশে ফিরে এসে স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি বিপ্লবী অর্ধসাপ্তাহিক সাহিত্য পত্রিকা “ধূমকেতু” সম্পাদনা করেন। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে রাজদ্রোহীতার দায়ে জেলে প্রেরণ করেন। জেল থেকে তিনি বিপ্লবী ও বিদ্রোহাত্মক নানা গান রচনা করে বন্দীদেরও খেপিয়ে তোলেন।

কাব্য প্রতিভা  

নজরুল বহু কাব্য, কবিতা রচনা করেন। ঝিঙেফুল, বিষের বাঁশী, ভাঙ্গার গান, অগ্নিবীণা, দোলন চাপা, বুলবুল প্রভৃতি তার জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থ। তিনি ‘বাধন হারা’ ব্যথার দান’, ‘মৃত্যু ক্ষুধা' ইত্যাদি উপন্যাস এবং আলেয়া, মধুমালা, ঝিলমিল প্রভৃতি নাটক রচনা করেন। তিনিই বাংলা গজলের প্রবর্তক।

মৃত্যু  

১৯৪২ সালে তিনি কঠিন রোগে আক্রান্ত হন। দীর্ঘদিন রোগ ভোগের পর তিনি ১৯৭৬ সালের ২৯শে আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে নজরুলকে সমাহিত করা হয়। 

আরও পড়ুন :- বিশ্বকবি  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - রচনা [ Class - 6, 7, 8 ,9 ,10] | PDF

উপসংহার  

নজরুল একাধারে কবি, সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, গায়ক ও সম্পাদক ছিলেন। নজরুল প্রতিভা সাহিত্যের যে অংশকেই স্পর্শ করেছে সেখানেই তার অনন্য সাধারণ বৈশিষ্ট্যের ছাপ রেখেছে।

কাজী নজরুল ইসলাম রচনা - ২

সূচনা  

কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তিনি বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত। তাঁর কবিতা, গান ও গদ্যে পরাধীন ভারতের নিপীড়িত মেহনতি জনতার মুক্তির বাণী ধ্বনিত হয়েছে। তিনি আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব।

প্রিয় মানুষের পরিচয়  

১৮৯৯ সালের ২৪শে মে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে বাবা মারা গেলে আর্থিক অনটনে তিনি বিভিন্ন পেশায় যোগ দেন। একবার আসানসোলে একটি রুটির দোকানে কাজ নেন। সেখান থেকে জনৈক পুলিশ সাব- ইন্সপেক্টরের সহানুভূতি পেয়ে ময়মনসিংহের দরিরামপুরে আসেন। 

সেখানে তিনি একটি হাই স্কুলে ভর্তি হন । কিন্তু দরিরামপুর হাই স্কুল থেকে তিনি পালিয়ে গিয়ে রানীগঞ্জের শিয়ারসোল হাই স্কুলে ভর্তি হন। তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজছে। তিনি পড়া ছেড়ে ৪৯ নম্বর বাঙালি পল্টনে যোগ দেন ।

আরও পড়ুন :- শহীদ তিতুমীর - বাংলা রচনা 

গুণাবলি  

কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন সত্য ও সুন্দরের পথে অবিচল। অসত্য ও অন্যায়ের সাথে তিনি কখনো আপস করেননি। জীবনে নানা বাধা-বিপত্তি, জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, তবুও সত্যের পথ থেকে কখনো বিচ্যুত হননি।

কেন প্রিয়  

পরাধীন ভারতবর্ষকে ব্রিটিশ অপশাসন থেকে মুক্ত করতে তিনি সংগ্রাম করেছেন। তাঁর কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নিবন্ধে তিনি মানবতার জয়গান গেয়েছেন। শোষক শ্রেণির বিরুদ্ধে তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল উচ্চকিত। এ রকম দৃঢ় ও আপসহীন চরিত্রের কারণেই তিনি আমার প্রিয় মানুষ

কবি জীবন  

সৈনিক জীবনেই নজরুল সাহিত্য সাধনা শুরু করেন। করাচি থেকে কলকাতা ফিরে এসে তিনি সাহিত্য সাধনায় ঝুঁকে পড়েন। 'বিদ্রোহী' কবিতাটি প্রকাশিত হলে রাতারাতি তাঁর কবিখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এরপর 'অগ্নিবীণা' থেকে শুরু করে একে একে প্রকাশ পায় বিষের বাঁশি', 'ভাঙ্গার গান', 'চক্রবাক', দোলনচাঁপা, ‘ছায়ানট', 'মরুভাস্কর' ইত্যাদি অমর সৃষ্টি। কবিতা ছাড়াও গল্প, উপন্যাস, নাটকে তিনি অপূর্ব দক্ষতা দেখিয়েছেন। বিশেষ করে তাঁর অবিস্মরণীয় সৃষ্টি হলো প্রায় চার হাজারের মতো গান ।

আরও পড়ুন :- মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী - বাংলা রচনা 

মৃত্যু  

১৯৭৬ সালে ঢাকায় পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল) তিনি ইন্তেকাল করেন। কবির ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়।

উপসংহার  

নিপীড়িত, লাঞ্ছিত, অবহেলিত মানুষের জন্য তাঁর কণ্ঠ ছিল সোচ্চার। তাই আজও আমরা তাঁকে আমাদের হৃদয় দিয়ে ভালোবাসি ও শ্রদ্ধা জানাই।

কাজী নজরুল ইসলাম রচনা - ৩

উপস্থাপনা  

ভাল লাগা ও মন্দ লাগার বিচারে কাজী নজরুল ইসলামই আমার প্রিয় লেখক। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তিনি অবাধে বিচরণ করলেও মূলত 'বিদ্রোহী' কবি হিসেবেই তিনি আমাদের কাছে বেশি পরিচিত। কাজী নজরুল ইসলামের লেখনীতে আমি আমার চিন্তা-চেতনার প্রকাশ দেখতে পাই, এজন্যই তিনি আমার প্রিয় লেখক ।

জন্ম ও বাল্যকাল  

১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে কাজী নজরুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কাজী ফকির আহমদ, মায়ের নাম জাহেদা খাতুন। কবির আট বৎসর বয়সে তার পিতা মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মা-বাবা তাকে দুখু মিয়া বলে ডাকতেন।

শিক্ষাজীবন  

গ্রামের মক্তবে নজরুলের শিক্ষা জীবন শুরু হয়। এখানে তিনি বাংলা ছাড়াও আরবি ও ফারসি ভাষায় জ্ঞান লাভ করেন। এখানেই তিনি পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। মাত্র এগার বৎসর বয়সে তিনি লেটো দলে যোগ দেন। চৌদ্দ বৎসর বয়সে কবি রানীগঞ্জের সিয়ারসোল উচ্চ ইংরেজি স্কুলে ভর্তি হন। আসানসোলে একটি রুটির দোকানে মাসিক পাঁচ টাকা বেতনে চাকুরীরত থাকাকালীন সময়ে দারোগা রফিক উদ্দিন তাকে দরিরামপুর স্কুলে এনে ভর্তি করে দেন।

সৈনিক জীবন  

কবি যখন দশম শ্রেণীর ছাত্র তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। ১৯১৭ সালে তিনি পড়াশুনার পাঠ শেষ করে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।

আরও পড়ুন :- নারী শিক্ষা - বাংলা রচনা

কবির পতিভা  

নজরুলের কাব্য খ্যাতি অতিদ্রুত প্রসার লাভ করে। ১৯১৮ খ্রিঃ বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য পত্রিকায় তাঁর কবিতা 'মুক্তি' ছাপা হয়। ১৯২২ সালের ৬ জানুয়ারি বিজলা পত্রিকায় তাঁর বিখ্যাত 'বিদ্রোহী' কবিতা প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রথম রচনাটির নাম “বাউন্দেলের আত্মকাহিনী”। নজরুলের সম্পাদনায় নবযুগ ও ধূমকেতু নামক দুটি পত্রিকা প্রকাশিত হয় । অসংখ্য কবিতা ও ইসলামী সঙ্গীতের জন্ম দিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন।

জাতীয় আন্দোলনে নজরুল  

বাংলা সাহিত্যে নজরুল বিদ্রোহের এক নতুন মাত্রা সংযোজন করেছেন। তিনি সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। ব্রিটিশের লৌহ কপাট ভেঙ্গে খান খান করেছেন। কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেন নি নজরুল । নজরুলের লড়াই ছিল সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। তিনি সাম্যবাদের প্রবক্তা।

নজরুলের সাহিত্য সাধনা  

নজরুল সক্রীয় জীবনে আমাদের সাহিত্য ভাণ্ডার ভরে তুলেছেন অজস্র ইসলামী গান, কবিতা, নাটক ও উপন্যাসের মাধ্যমে । তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল- অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশী, সাম্যবাদী, সর্বহারা, ছায়ানট, ভাঙ্গার গান, প্রলয় শিখা, দোলন চাঁপা, চক্রবাক, বুলবুল, ঝিঙ্গেফুল, আলেয়া, ঝিলিমিলি তাঁর নাটক। ব্যথার দান, বাঁধন হারা, মৃত্যু ক্ষুধা তাঁর উপন্যাস ।

মৃত্যু  

জীবনের দীর্ঘ সময় নির্বাক থেকে, দুরারোগ্য মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে কবি ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে চির নিদ্রায় বিভোর আমার প্রিয় কবি গানের বুলবুল কাজী নজরুল ইসলাম । 

উপসংহার  

নজরুলের আদর্শ ও যৌবন ধর্ম আজ আমাদের চলার পথের পাথেয়। তাঁর সাম্যসচেতনা এবং মানবপ্রেম আজকের হানাহানি প্রবণ পৃথিবীতে বড়ই প্রয়োজন। তাই নজরুল সাহিত্যের শিল্পমূল্যের চাইতে সামাজিক মূল্যও কম নয় । আমার প্রিয় লেখকের জীবনাদর্শ সমাজে প্রতিষ্ঠা করাই আমার একান্ত ব্রত ।

Post a Comment

0 Comments