বাংলা রচনা - জাতি গঠনে নারী সমাজের ভূমিকা

উপস্থাপনা  

জাতীয় জীবনের সার্বিক কল্যাণের জন্যে নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা একান্ত আবশ্যক। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। তাদের বাদ দিয়ে কোনো জাতির পক্ষেই উন্নতির পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই জাতীয় উন্নতির লক্ষ্যে তাদের মেধা, কর্মক্ষমতা ও উদ্যমশীল মনোভাবের সুযোগ প্রদান আবশ্যক। তাই কবির চরণের সাথে সুর মিলিয়ে বলা যায়-

কোন কালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারি

প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয়ী লক্ষ্মী নারী ।

পৃথিবীতে নারী-পুরুষ

বিধাতার ইচ্ছার প্রতিফলন আদম আর হাওয়া, সেই আদি মানব মানবী মাটির ধরণিতে আসেন। এখানে এসে গড়লেন সুখের নীড়। সমাজের উদ্ভব তখন থেকেই । সে সমাজ গঠনে আদম ও হাওয়া উভয়েরই সমান অবদান ছিল এবং অদ্যাবধি নারী-পুরুষের সম্মিলিত চেষ্টায়ই আমাদের সমাজ জীবনের শান্তি ও সমৃদ্ধি সাধিত হয়েছে।

পরস্পর নির্ভরশীলতা  

ইতিহাস সাক্ষী দেয় নারী ও পুরুষের ঐকান্তিক চেষ্টা এবং পারস্পরিক নির্ভরশীলতার ভিত্তিতেই মানবসমাজের অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। একটি সমাজের উন্নতি বর্তমান বিশ্বে নারী সমাজের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। পৃথিবীর ছয়শ' কোটি লোকের অর্ধেক নারী। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমাজের বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করছে।

আরও পড়ুন :-  নারী শিক্ষা - বাংলা রচনা

জাতি গঠনে নারী  

জাতীয় উন্নয়নে বর্তমানে নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য । পুরুষের সহকর্মী হিসেবে নারীরা জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে কর্মময় জীবনের অংশীদার হলে দেশের সমৃদ্ধি, জাতির মঙ্গল ত্বরান্বিত হবে ।

নারীর কর্তব্য  

আমাদের দেশ অনুন্নত, গরিব। এ গরিব দেশকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে হলে নারী-পুরুষের সম্মিলিত কর্মপ্রচেষ্টা প্রয়োজন । আমাদের সমাজ উন্নত চিন্তাধারার অধিকারী নয় বলে কুসংস্কার সহজেই এ সমাজে আসন গেড়ে বসেছে। 

আমাদের করণীয়  

আমাদের দেশের শতকরা প্রায় ৪০ জন লোক নিরক্ষর। আমাদের দেশে শিক্ষিত নারীর সংখ্যা কম। অশিক্ষিত নারীসমাজ দেশের উন্নতি ও সমাজ গঠনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে অক্ষম। শিক্ষার প্রসার ঘটাতে পারলে সমাজের উন্নতি সাধনে তারা বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

সমাজ গঠনে নারী  

সমাজ জীবনে সচলতা, জ্ঞান, কর্ম ও প্রাণচাঞ্চল্যের জন্ম না হলে সে জাতি অচল, অসার। আমাদের দেশে নারীরা সমাজ গঠনে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে এলে সমাজ সুনিশ্চিত উন্নতির পথে অগ্রসর হবে। শিক্ষা বিস্তার ও সন্তানের মানসিক উন্নতি সাধনে নারীই অবদান রাখতে পারে। নারীরা শিশুর ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগর। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাকে ঠিকমতো গড়ে তোলার দায়িত্ব নারীর ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল 

আরও পড়ুন :-  যৌতুক প্রথা ও  নারী নির্যাতন - বাংলা প্রবন্ধ রচনা

শিশুর চরিত্র গঠনে নারী  

শুধু বৈষয়িক শিক্ষাই নয়, শিশুর চরিত্র গঠন ও মানসিক উন্নতি অপরিহার্য । মা যদি সন্তানকে সুপথে পরিচালিত করেন, তবে সে সন্তান মনুষ্যত্ববোধে দীপ্ত হবে; শিক্ষার আলোকে উজ্জ্বল হবে। ফলে এমন সন্তানের আত্মপ্রকাশের ভেতর দিয়েই একটি সমাজ ও উজ্জ্বল জাতিসত্তা গড়ে ওঠা সম্ভবপর।

সুগঠিত জাতি গঠনে নারী  

সুস্থ, শিক্ষিত, চরিত্রবান মানুষ গড়ে তুলতে পারলেই একটি জাতি সুগঠিত হয়। সুখী- সমৃদ্ধময় জাতি গড়ে তুলতে হলে নারীর সাহায্য-সহযোগিতা একান্ত আবশ্যক। তারা সেবা দিয়ে, স্নেহ দিয়ে গড়ে তুলতে পারে এক কল্যাণকর রাষ্ট্র ।

উপসংহার  

নারীকে উপেক্ষা করে শুধু পুরুষের সেবা ও কর্মে একটি জাতি আত্মবলে বলীয়ান হতে পারে না। উন্নত দেশগুলোতে নারীসমাজ ও জাতি গঠনে গৌরবময় অবদান রাখছে। আমাদের দেশেও সমৃদ্ধিশালী জাতি গঠনে নারী সমাজের অবদান একান্ত আবশ্যক ।

আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্টের তালিকা

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad