নারী শিক্ষা - বাংলা রচনা

ভূমিকা  

আজ নবযুগে নবীন প্রভাতে দিকে দিকে নারী প্রগতির জয়ধ্বনি ঘোষিত হচ্ছে। সুখের বিষয়, নারী আজ আর সেই বিগত শতাব্দীর অন্ধকারাচ্ছন্ন অন্তঃপুরে মৌনম্লান মুখে বসে নেই। সে আলোহীন প্রাণহীন দুর্ভেদ্য অন্তরাল থেকে বের হয়ে আজ আলোকিত জগতের উদার প্রাঙ্গণে এসে দাঁড়িয়েছে। 

আজ আমরা বুঝতে পেরেছি- নারী ও পুরুষ সমাজজীবনের দুটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সমাজ ও জাতি গঠনে উভয়েরই সমান ভূমিকা রয়েছে। তাই পুরুষের পাশাপাশি নারীশিক্ষারও যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। এ সম্পর্কে কবি নজরুল ইসলাম যথার্থ বলেছেন-

“এ বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি, চিরকল্যাণকর 

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।”

নারীশিক্ষার গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা  

জাতির সামগ্রিক কল্যাণের জন্য নারীশিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে দ্বিমতের অবকাশ নেই। আমাদের দেশের জনসংখ্যার অধিকাংশই নারী, সেহেতু নারীকে শিক্ষিত করে তুলে দেশের উন্নতির জন্য অনগ্রসরতার অভিশাপ থেকে নারীসমাজকে উদ্ধার করে পুরুষের পাশাপাশি পথ চলার অধিকার ও সুযোগ করে দিতে হবে। কারণ জীবনের সর্বক্ষেত্রে নারী কল্যাণকর ভূমিকা পালন করতে পারে।

আরও পড়ুন :-  বাংলা রচনা - জাতি গঠনে নারী সমাজের ভূমিকা

শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর প্রভাব  

একজন সুশিক্ষিত মাতা তার সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে নিজ আদর্শে গড়ে তুলতে পারে। কারণ ছেলে-মেয়েদের ওপর মায়েদের প্রভাবই বেশি পড়ে। মায়ের কাছ থেকে তারা আচার-আচরণ, আদব-কায়দা ইত্যাদি শিক্ষাগ্রহণ করে থাকে। শিক্ষাক্ষেত্রে নারীদের প্রভাব সম্বন্ধে বলতে গিয়ে নেপোলিয়ান বলেছিলেন, 'আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদিগকে একটি শিক্ষিত জাতি দিব।' তাই নারীদের শিক্ষাগ্রহণ করা অত্যাবশ্যক।

জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানে নারীশিক্ষা  

বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে একটি জনবহুল দেশ এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এদেশের প্রধান সমস্যা। আর এ সমস্যার পেছনে একটি বড়ো কারণ হলো নারীশিক্ষার অভাব। অল্প বয়সে সন্তান জন্মদান মা ও শিশু উভয়ের জন্যেই ক্ষতিকর। এতে মায়ের স্বাস্থ্য নষ্ট হয় এবং সন্তানও দুর্বল ও মেধাহীন হয়। নারীরা শিক্ষিত হলে হয়তো এসব মেয়ের পরিণতি এমন হতো না ।

নারীশিক্ষার অন্তরায়  

বাংলাদেশসহ অনুন্নত দেশগুলোতে নারীশিক্ষার অন্তরায় হচ্ছে কুসংস্কার আর ধর্মীয় গোঁড়ামি । এছাড়া নারীশিক্ষার একটি বিশেষ বাধা হচ্ছে নিরাপত্তার অভাব। নিরাপত্তার অভাবে অনেক অভিভাবকই তাদের কন্যাসন্তানকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। আর এতে করে ব্যাহত হচ্ছে নারীশিক্ষার অগ্রযাত্রা। সরকারসহ সংশিষ্ট মহলের অসচেতনতাও নারীশিক্ষার অন্তরায় সৃষ্টি করে থাকে।

আরও পড়ুন :-  ইভটিজিং / নারী উত্যক্তকরণ রচনা [ ক্লাস ৬, ৭, ৮, ৯, ১০]

নারীশিক্ষা বিস্তারের উপায়

নারীশিক্ষা বিস্তারের জন্য কতিপয় কর্মসূচি গ্রহণ করা জরুরি। যেমন-

১. দেশে নারী শিক্ষার্থীর অনুপাতে প্রয়োজনীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ।

২. মেয়েদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, যেন স্কুলগামী ছাত্রীরা কোনোভাবেই নির্যাতনের শিকার না হয়। প্রয়োজনে বিশেষ পরিবহণব্যবস্থা চালু করতে হবে।

৩. বয়স্ক নারীদের শিক্ষার জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ।

৪. শিক্ষা গ্রহণে নারীকে উদ্যোগী ও উৎসাহী করার লক্ষ্যে সরকার যে উপবৃত্তি চালু করেছে তা যেন যথাযথভাবে কাজে লাগানো হয় সেজন্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করা।

৫. নারীশিক্ষা প্রসারের জন্য সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করা, নারীশিক্ষা আন্দোলন গড়ে তোলা, সরকার ও সংশিষ্ট মহলের উদারনীতি গ্রহণ ইত্যাদি।

নারীশিক্ষা বিস্তারে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ  

“যে হাত দোলনা দোলায়, সেই হাত বিশ্ব শাসন করে”-কথাটি একেবারে সত্যি। আজ আমরা উপলব্ধি করতে পারছি যে, নারীশিক্ষা প্রসার ঘটানো অত্যন্ত জরুরি। নারীশিক্ষা বিস্তারে বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রতিক গৃহীত পদক্ষেপ অনেকটা প্রশংসনীয়। বাংলাদেশ সরকার শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়েছে। নারীশিক্ষা প্রসারে মেয়েদের বিনাবেতনে পড়ার সুযোগ এবং স্কুল পর্যায়ে মেয়েদের জন্য উপবৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে। এ উপবৃত্তি ব্যবস্থা কলেজ পর্যায়ে উন্নীত 

করার প্রক্রিয়াও চালু রয়েছে। তাছাড়া মেয়েদের স্নাতক পর্যন্ত বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ সৃষ্টির ব্যাপারে সরকার চিন্তাভাবনা করছে। এছাড়া বাংলাদেশে সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে মেয়েদের ৬০% কোটা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেয়েদের স্বাচ্ছন্দ্যময় ক্রমবিকাশের জন্যে এখন দেশে স্বতন্ত্র নারীশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া বয়স্ক নারীদেরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য বয়স্ক নারীশিক্ষা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। বর্তমানে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি মহলেও নারীশিক্ষা প্রসারে নানাভাবে অবদান রাখছে ।

উপসংহার  

আমাদের সমাজে আমরা চাই আদর্শ জননী, আদর্শ গৃহিণী, আদর্শ কন্যা। আদর্শ জীবন ও সমাজ গঠনে চাই উপযুক্ত নারীশিক্ষা । নারীরাই দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক জন্ম দেয় এবং তাদের পরিচর্যা করে গড়ে তোলে। ভবিষ্যৎ শিশুর মা যদি শিক্ষিত না হয় তবে শিশুর সুনাগরিক হওয়ার পথই রুদ্ধ হয়ে যাবে। তাই নারীকে অবহেলা না করে তার শিক্ষার প্রসারে এগিয়ে এসে দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণ সাধন করার সুযোগ দিতে হবে।

Post a Comment

0 Comments