সুন্দরবনের প্রাণী রচনা - ১
উপস্থাপনা
সুন্দরবন বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। বিচিত্র উদ্ভিদ ও প্রাণী এবং প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সুন্দরবন। সুন্দরবনের এই উদ্ভিদ ও প্রাণী দিন দিন বিলুপ্ত হচ্ছে। যেসব প্রাণী হারিয়ে গেছে বা বর্তমানে বিলুপ্তির পথে সেগুলোর মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতাবাঘ, ওলবাঘ, গণ্ডার, হাতি, শকুন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।
জীবজন্তু ও প্রাণিজগতের প্রয়োজনীয়তা
যেকোনো দেশের জীবজন্তু, পশুপাখি দেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, উদ্ভিদ জগৎ, প্রাণিজগৎ ইত্যাদি পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখে। যদি কোনোটির অভাব দেখা দেয় তবে জীবজন্তুর বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
পৃথিবীতে কোনো অপ্রয়োজনীয় প্রাণী বা বৃক্ষলতা নেই এ বিষয়টি আমাদের স্মরণে রাখা কর্তব্য। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সুন্দরবনের প্রাণী রক্ষা আজ একটি অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় শকুন
শকুনকে কেউ সুন্দর পাখি বলে না। যাবতীয় অখাদ্যকে সে তার খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করে। তাই শকুন কেউ পোষে না। অথচ শকুন ক্রমশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে বলে গবেষকগণ খুবই চিন্তিত। মানুষের পক্ষে যা ক্ষতিকর সেইসব আবর্জনা শকুন খেয়ে ফেলে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। শকুন সত্যিকার অর্থে মানুষের উপকার ছাড়া অপকার করে না ।
আরও পড়ুন :- সুন্দরবন - রচনা : Class 3, 4, 5 | ২টি
বাঘ রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
বাঘ হিংস্র প্রাণী হলেও প্রাণিবিদরা বলেছেন, বাঘও সুন্দরবনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাণী। বাঘের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ফলে আইন করে বাঘ শিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু আমাদের দেশে নয়, অন্যান্য দেশেও বাঘ শিকার দণ্ডনীয় অপরাধ। ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার' নামটি পৃথিবীর সবাই জানে এবং এই টাইগার বাংলাদেশেই একমাত্র দেখা যায়। এজন্য বাঘকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা আমাদের জরুরি কর্তব্য।
উপসংহার
সুন্দরবনের অধিকাংশ প্রাণী আজ বিলুপ্তির পথে। বিশেষ করে বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার। শুধু টাইগার নয়, অন্যান্য প্রাণীও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় খুবই দরকারী। প্রাণী, বৃক্ষলতা ইত্যাদি প্রকৃতির দান। এগুলো ধ্বংস করলে প্রকৃতির নিয়মকেই ধ্বংস করা হয় এবং একসময় প্রকৃতির ওপর তার বিরূপ প্রভাব পড়ে, ঘটে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। তাই সুন্দরবনের প্রাণীদের রক্ষা করা উচিত।
সুন্দরবনের প্রাণী রচনা - ২
ভূমিকা
প্রকৃতির রয়েছে অপার রহস্য। পৃথিবীর এক বিস্ময় হলো প্রাণিজগৎ। অরণ্যের গভীরে বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর অস্তিত্ব লক্ষ্যনীয়। সুন্দরবন বাংলাদেশ তথা পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তর প্রাকৃতিক আশ্চর্য। এখানে রয়েছে বিচিত্র গাছপালা ও বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তু।
সুন্দরবনের অবস্থান
বাংলাদেশের খুলনা ও বাগেরহাট অঞ্চলের সমুদ্রতীরবর্তী চিরসবুজ বনাঞ্চলের নাম সুন্দরবন। একে ‘ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট' বা লবণাক্ত জলাভূমির বনও বলা হয়। এর আয়তন প্রায় ছয় হাজার সতের বর্গ কিলোমিটার।
সুন্দরবনের প্রাণী/জীবজন্তু
সুন্দরবনের গভীরে নানারকম পশুপাখি ও জীবজন্তু বসবাস করে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, বানর, বন্য শূকর, হাতি, গন্ডার, সজারু ইত্যাদি। এছাড়া রয়েছে অনেক প্রজাতির পাখি ও সরীসৃপ প্রাণী, যা এ বনকে করেছে সমৃদ্ধ।
রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার
সুন্দরবনের সবচেয়ে আকর্ষনীয় প্রাণী হলো রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। এ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার পৃথিবী বিখ্যাত। এ বাঘের গায়ে রয়েছে বড় বড় ডোরাকাটা দাগ। এ প্রাণীটি তুলনাহীন, অনন্য। সুন্দরবন ছাড়া এ জাতীয় বাঘ অন্য কোথাও দেখা যায় না। এছাড়া এখানে অনেক চিতাবাগ ও ওলবাঘ রয়েছে।
আরও পড়ুন :- আমাদের দেশ রচনা [৩য়, ৪র্থ, ৫ম শ্রেণি ]
হরিণ
হরিণ সুন্দরবনের আর একটি বিশেষ আকর্ষণ। এটি দেখতে খুব সুন্দর ও নিরীহ প্রকৃতির। এর মাংস খুব সুস্বাদু। হরিণের চামড়া বেশ মূল্যবান। হরিণ সব সময় বাঘের ভয়ে ভীত থাকে। এটি দ্রুত দৌড়াতে পারে।
বানর
বানর অত্যন্ত দুরন্ত প্রকৃতির। সুন্দরবনে প্রচুর বানর দেখা যায়। একগাছ থেকে অন্য গাছে লাফিয়ে বেড়ানো এদের কাজ। সুন্দরবনের ফলমূল খেয়ে এরা জীবনধারণ করে। হরিণকে অনেক সময় বাঘের হাত থেকে রক্ষা করে বানর ।
অন্যান্য প্রাণী
এক সময় সুন্দরবনে অনেক হাতি ও গন্ডার ছিল। আজ এগুলো বিলুপ্তির পথে। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামে হাতি দেখা যায়। এছাড়া সুন্দরবনে বন্যশূকর ও সজারুর বিচরণ দেখা যায় ৷
পাখি ও সরীসৃপ
সুন্দরবনের পাখিদের মধ্যে রয়েছে-টিয়ে, ময়না, শালিক, শ্যামা, দোয়েল, ঘুঘু, বক, সারস, বুনোহাঁস, বনমোরগ ইত্যাদি। এছাড়া সরীসৃপ প্রজাতির মধ্যে আছে-কুমির, হাঙ্গর, সাপ, গুইসাপ ইত্যাদি। বনের জলাশয় ও জঙ্গলে নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। শীতকালে সুন্দরবনে প্রচুর অতিথি পাখির আগমন ঘটে।
আরও পড়ুন :- বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য - রচনা : Class 3, 4, 5
প্রাণীদের বিলুপ্তি ও রক্ষা
বর্তমানে সুন্দরবনের অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এর কারণ বনভূমির গভীরতা কমে যাওয়া, মানুষের ব্যাপক পদচারণা, বনে আগুন লাগা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস, খাদ্যাভাব, শিকারিদের উৎপাত ইত্যাদি। সুন্দরবনের প্রাণীদের বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে হলে সরকারকে প্রাণী নিধন আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায়, সম্পদে, প্রাচুর্যে ও জীবন্তুর বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ আমাদের সুন্দরবন। এটি কেবল বাংলাদেশের নয়; এটি বিশ্ববাসীরও সম্পদ। ইউনেস্কো সুন্দরবনকে রক্ষার জন্য ভারত ও বাংলাদেশকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদেরও উচিত সুন্দরবন ও তার প্রাণীদের রক্ষার জন্য আরো সচেতন ও কর্তব্যনিষ্ঠ হওয়া।
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্টের তালিকা