প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুগণ, তোমাদের শেখার সুবিধার্থে "স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন" ভাবসম্প্রসারণটি ৩টি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো। তোমাদের কাছে যেটা সবচেয়ে সহজ মনে হয় সেটাই শিখে নিতে পারো।
ভাবসম্প্রসারণ - ১
মূলভাব : যেকোনো জাতির জীবনে স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনা কষ্টকর এবং তার চেয়েও কষ্টকর অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করা।
সম্প্রসারিত ভাব : স্বাধীনতা মানুষের অমূল্য সম্পদ। কোনো মানুষই পরাধীনরূপে বেঁচে থাকতে চায় না। তাই মানুষ স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করে, যুদ্ধ করে। প্রসঙ্গত, স্বার্থমগ্ন শক্তিশালী বেনিয়া শাসকরা সহজে কোনো জাতিকে স্বাধীনতা দান করেনি; বহু কষ্টে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমেই তা ছিনিয়ে আনতে হয়েছে।
স্বাধীনতা অর্জন অত্যন্ত গৌরবের ব্যাপার। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জিত হলেই সংগ্রাম শেষ হয়ে যায় না। তখন বিজয়ী জাতির সামনে আসে স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম। এ সংগ্রামে আরও ত্যাগ-তিতিক্ষা ও শক্তি-সামর্থ্যের প্রয়োজন হয়। কারণ স্বাধীন দেশের ভেতরে ও বাইরে শত্রুর অভাব নেই। এরা সুযোগের সন্ধানে সর্বক্ষণ তৎপর থাকে। যেকোনো সময় সুযোগ পেলে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের মাধ্যমে স্বাধীনতাকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
সুতরাং, এসব প্রতিক্রিয়াশীল, মীরজাফরী চরিত্রের ধ্বংসাত্মক দৃষ্টি থেকে দেশকে রক্ষার জন্য শক্তি ও বুদ্ধির প্রয়োজন। কিন্তু তাদের পরাভূত করা কঠিন ব্যাপার। যথেষ্ট দায়িত্ব সচেতন, সদা সতর্ক, নিবেদিতপ্রাণ, দেশপ্রেমিক ও শক্তিশালী না হলে স্বাধীনতা রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
মন্তব্য : স্বাধীনতা রক্ষা করা স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে কঠিন ও দুরূহ কাজ। তাই স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করা উচিত।
আরও পড়ুন :- ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে ভাবসম্প্রসারণ - ৩টি
ভাবসম্প্রসারণ - ২
মূলভাব : পরাধীন জাতির পক্ষে স্বাধীনতা অর্জন অত্যন্ত কঠিন কাজ । কিন্তু অর্জিত স্বাধীনতাকে রক্ষা করা আরো কঠিন কাজ। স্বাধীনতা অর্জিত হলেই তা চিরস্থায়ী হয় না। তাই স্বাধীনতা রক্ষায় জাতিকে থাকতে হবে সদা জাগ্ৰত ।
সম্প্রসারিত ভাব : মানুষ মাত্রই স্বাধীনতা প্রিয়। তার জীবনের প্রধান আকাঙ্ক্ষা স্বাধীনতা। স্বাধীনতা কথাটি যতই মধুর হোক না কেন এটা অর্জন করা বড়ই কঠিন। আর এ অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করা আরও কঠিনতর। এটাকে পাবার জন্য মানুষ যুগ যুগ ধরে সংগ্রাম করে আসছে।
নিপীড়িত অত্যাচারিত জাতির স্বীয় মর্যাদাকে অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য সংগ্রামের মাধ্যমে মুক্তি লাভ করে থাকে। কিন্তু এ মুক্তি অর্জনই মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। বহিঃশত্রুর হাত থেকে একে রক্ষা করার জন্য সদা প্রস্তুত থাকা একান্ত প্রয়োজন। মানুষের যাবতীয় কার্যকলাপের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বাধীনতাপূর্ণ গৌরবোজ্জ্বল জীবনের বিকাশ। এ জন্য চাই স্বাধীনতা ।
মন্তব্য : পরাধীন জাতি কঠিন ত্যাগ, কঠোর পরিশ্রম, বৈজ্ঞানিক জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে স্বাধীনতার সূর্যকে অর্জন করে। তাই স্বাধীনতার ব্যাপকতা ও গুরুত্ব উপলব্ধি করে একে রক্ষা করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য।
আরও পড়ুন :- ভাবসম্পসারক - অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে
ভাবসম্প্রসারণ - ৩
মূলভাব : কোনো কিছু অর্জন করা যতটা সহজ তাকে রক্ষা করা ও উপভোগ করা তার চেয়ে বেশি কঠিন।
সম্প্রসারিত ভাব : স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। এটি ছাড়া মানুষ নিজেকে সঠিকভাবে বিকশিত করতে পারে না। তবে স্বাধীনতা কথাটি যতই মধুর হোক না কেন, মুখে বললেই তা অর্জন করা যায় না। তার জন্য বহু ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। অনেক ত্যাগ ও তিতিক্ষার পর শোষণের নাগপাশ ছিন্ন করে স্বাধীনতা লাভ করতে হয়। কোনো রকম ত্যাগ স্বীকার না করে কোনো জাতি কোনোদিন স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেনি।
কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে তা রক্ষা করতে আরো বেশি ত্যাগ তিতিক্ষার প্রয়োজন হয়। এতো ত্যাগ এতো কৃতিত্ব সাধনার পর যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়, তাকে রক্ষা করে তার স্থায়িত্ব বিধান করতে আরো বেশি কষ্ট করতে হয়। সেজন্য প্রয়োজন হয় নিরলস পরিশ্রম ও পারস্পরিক ঐক্য। এই কষ্টার্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করতে নারী-পুরুষ সকল নাগরিককে অশেষ চেষ্টা ও কর্তব্যনিষ্ঠার সাথে মাঠে ময়দানে, কল কারখানায় অবিরাম কাজ করতে হয়।
দেশকে শিল্প ও বাণিজ্যে উন্নত করে দেশের আর্থিক সচ্ছলতা আনতে হয়। কৃষির উন্নতি বিধান করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হয়, তাহলে নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা আসে। তখন আর্থিক ও আত্মিক দিক দিয়ে তারা উন্নত ও মননশীল হয়ে ওঠে। তাতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আরো সুন্দর হয়। দেশে ও দেশপ্রেমিক নাগরিকদের জন্ম হয়, তারা দেশের যে কোনো সমস্যায় এগিয়ে আসে। তাই স্বাধীনতা অর্জন করা যত সহজ তা রক্ষা করা তার চেয়ে বেশি কঠিন।