ভাবসম্প্রসারণ : অর্থ সম্পদের বিনাশ আছে (২টি)

অর্থ সম্পদের বিনাশ আছে কিন্তু জ্ঞান সম্পদ কখনো বিনষ্ট হয় না

মূলভাব : পৃথিবীতে যে-কোনো কিছু নষ্ট হতে পারে, হারিয়ে যেতে পারে। কিন্ত জ্ঞান চিরন্তন। জ্ঞান বিতরণ করলেও কমে না; বরং বৃদ্ধি পায়

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অর্থের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। অর্থের জন্য মানুষ উদয় অস্ত পরিশ্রম করে চলেছে। অর্থ এমন এক সম্পদ যা দিয়ে আমরা সমাজ জীবনে ব্যক্তির অবস্থান নির্ণয় করে থাকি। কিন্তু এ অর্থসম্পদ কেবল মানুষের বাইরের দিকটাই প্রকাশ করে। অর্থসম্পদ যতই শক্তির অধিকারী হোক, জ্ঞানসম্পদের কাছে তা নিষ্প্রভ। সত্যিকারের জ্ঞানী ব্যক্তি বিত্তশালী লোকের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিমান। 

বিত্তবানের ধনভান্ডার এক সময়ে নিঃশেষ হয়ে আসে, কিন্তু বিদ্বানের জ্ঞানভান্ডার ক্রমাগত সমৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই অর্থসম্পদে নয়, জ্ঞানসম্পদে সমৃদ্ধ ব্যক্তিগণই দেশের ও জাতির প্রকৃত সম্পদ, যার কোনো বিনাশ নেই। এজন্য অর্থসম্পদের মাপকাঠিতে নয়, . জ্ঞানসম্পদের মাপকাঠিতে মানুষের মূল্যায়ন হওয়া উচিত। কারণ অর্জিত অর্থ নিঃশেষিত হয়, কিন্তু অর্জিত জ্ঞান চিরস্থায়ী। এর কোনো বিনাশ নেই। আমাদের মহানবি (স) তাই জ্ঞানীর কলমের কালিকে শহিদের রক্তের চেয়েও পবিত্র বলেছেন। তিনি দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত মানুষকে জ্ঞানার্জনের উপদেশ দিয়েছেন।

মন্তব্য : জ্ঞান জগতের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। এর বিনাশ নেই। তাই সকলের উচিত প্রকৃত জ্ঞানাহরণের মাধ্যমে মানবকল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করা ।

আরও  পড়ুন : ভাব সম্প্রসারণ : অভাব অল্প হলে দুঃখ অল্প হয়ে থাকে(২টি)

একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন

মূলভাব : মানুষের সুখভোগের জন্য যা কিছু পৃথিবীতে দৃশ্যমান তার সবই নশ্বর, কিন্তু জ্ঞানের কোনো ক্ষয় ও ধ্বংস নেই; জ্ঞান অবিনশ্বর।

সম্প্রসারিত ভাব : মানবজীবনে ধন এবং জ্ঞান উভয়ের প্রয়োজনীয়তাই অনস্বীকার্য। আমাদের খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্য যেমন অর্থসম্পদের প্রয়োজন তেমনি পূর্ণ মনুষ্যত্ব লাভের জন্য প্রয়োজন জ্ঞান সম্পদ। ধনসম্পদ পৃথিবীতে চিরস্থায়ী নয়। বিভিন্নভাবে ধনসম্পদের ধ্বংস বা বিনষ্ট হতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দস্যুর অপহরণ, অপচয়, অপব্যয় ইত্যাদি কারণে ধনসম্পদ নষ্ট হতে পারে। কিন্তু জ্ঞানসম্পদের কোনো ধ্বংস বা ক্ষয় নেই। এটি একান্তই মানসিক, চিত্ত উৎকর্ষের সাথে সম্পৃক্ত। চর্চার মধ্য দিয়ে এর বিকাশ ও বৃদ্ধি ঘটে। জ্ঞান সম্পদের কোনো বস্তুগত অবস্থান নেই বিধায় এটি কখনো ধ্বংস হতে পারে না। 

জ্ঞানের আলোয় আলোকিত মানুষ কর্তৃক সৃষ্ট কর্ম যুগ-যুগান্তের বহমান ধারা। যে ধারায় স্নাত হয়ে কর্মী কর্ম পায়, শিক্ষার্থী শিক্ষা পায়, ভাবুক পায় ভাব। মানুষের সৃজন ক্ষমতা চূড়ান্ত স্ফূর্তি পায় জ্ঞানে। জ্ঞানের অদম্য শক্তিতে বলীয়ান হয়েই মানুষ তার ব্যক্তিত্বের, আবেগের, মননশীলতার যথাযথ বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়। জ্ঞানের ধারক ও বাহকরাই পৃথিবীতে অমর ও অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে থাকেন এবং তাদের পদচারণায় পৃথিবী এগিয়ে গেছে কল্যাণ ও সমৃদ্ধির পথে, এঁদের সংস্পর্শে মানবজীবন হয়েছে ধন্য। তাদের জ্ঞানের সঞ্জীবনী সুধা সঞ্চারিত ও সঞ্জীবিত হয় উত্তর প্রজন্মের চিন্তায় ও মননে। আর এভাবেই জ্ঞানসম্পদ ধ্বংসের পরিবর্তে এগিয়ে যায় উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির পথে।

মন্তব্য : জ্ঞানসম্পদ ধনসম্পদের চেয়ে মহামূল্যবান। তাই অর্থসম্পদ নয়, জ্ঞানের মাপকাঠিতে মানুষকে মূল্যায়ন করা উচিত।

Post a Comment

0 Comments