প্রবন্ধ রচনা : ইসলামী সাহিত্য

ভূমিকা :

সাহিত্য এক ধরনের শৈল্পিক অলংকার। এক ধরনের মানস আল্পনা। এর রয়েছে বিভিন্ন রূপ ও আঙ্গিক। ইসলামী সাহিত্য তার মধ্যে অন্যতম। ইসলামী সাহিত্য মানেই আরবি সাহিত্য নয়। কেননা আরবি একটা ভাষার নাম, অপর দিকে ইসলামী মানেই আরবি ভাষা নয়। তা কেবল ধর্ম, ধর্মীয় চেতনা ও সংস্কৃতি সমৃদ্ধ এক জীবনব্যবস্থা।

ইসলামী সাহিত্যের পরিচয় : 

ইসলামী তাহযিব তামাদ্দুন নিয়ে যে সাহিত্য সমৃদ্ধ, তাকেই সাধারণভাবে ইসলামী সাহিত্য বলে ৷ 

ইসলামী সাহিত্যের প্রয়োজনীয়তা : 

সাহিত্য একটি জাতির সঠিক পরিচয় তুলে ধরে। মুসলমান হিসেবে আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য ইসলামী সাহিত্যের বিকাশ প্রয়োজন। ইসলামকে সঠিকভাবে পালন করতে হলে তার বিভিন্ন কর্মপ্রক্রিয়া জানতে হবে। ইসলাম পালন কেবল মৌখিক কিছু নয়, শারীরিক, মানসিক ও মননশীলতা -এ সব কিছুর এক সফল সমন্বয়ের নামই ইসলাম পালন। তাই সাহিত্যের প্রয়োজন অপরিহার্য, বিশেষ করে আমাদের মননশীল চেতনা জাগ্রত করতে ইসলামী সাহিত্যের বিকল্প নেই।

আরও পড়ুন : রচনা : ইসলাম ও মানব কল্যাণ/মানবতার মুক্তিতে ইসলাম/ইসলাম মানবতার ধর্ম

বাঙালি ইসলামী সাহিত্যিক : 

বাংলাদেশে ইসলামী সাহিত্যিকদের আলোচনা আসলে সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী, মীর মশাররফ হোসেন, শন্তিপুরের কবি মোজাম্মেল হক, খ্যাতনামা কবি কায়কোবাদ, কাজী নজরুল ইসলাম, কবি ফররুখ আহমদ, মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী প্রমুখের নাম সর্বাগ্রে উল্লেখ করতে হয়।

বাংলাদেশী লেখকগণের সাধনা : 

ইসলামী সাহিত্য রচনা করতে গিয়ে বাঙালি লেখকদের পদে পদে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ পর্যন্ত মুসলিম লেখকগণ কোনো সুনিয়ন্ত্রিত নিয়মে ইসলামী সাহিত্য সৃষ্টিতে হাত দিতে পারেননি। কাজী নজরুল ইসলাম, কায়কোবাদ, মীর মশাররফ হোসেন, ফররুখ আহমদ এদের অবদান অনেক, তবে একক এবং অতুলনীয় অবস্থানে কেউ যেতে পারেননি।

ইসলামী সাহিত্যচর্চার উপায় : 

বিজ্ঞানের নানা মাধ্যম বর্তমানে আমাদের সামনে উপস্থিত। এখন ইসালামী সাহিত্যচর্চা অনেক সহজ হয়ে এসেছে। এজন্য প্রয়োজন ইসলামী মূল্যবোধসম্পন্ন বুদ্ধিজীবী এবং লেখক শ্রেণি গড়ে তোলা।

আরও পড়ুন : রচনা :  ইবাদত অথবা ইবাদতের তাৎপর্য

ইসলাম সম্পর্কিত গবেষণা : 

ইসলামী সাহিত্য সৃষ্টি করতে হলে ইসলামের মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে ব্যাপকভাবে গবেষণা দরকার। অতিরঞ্জন, মিথ্যা, বানোয়াট, কল্পকাহিনী দিয়ে কখনো সাহিত্য রচনা করা যায় না আর করলেও তা গ্রহণযোগ্য হয় না। আমাদের দেশে অনেক ইসলামী ঘটনাকে বিকৃত করে সাহিত্যরূপ দেয়া হয়েছে। এজন্য ইসলামী সাহিত্য আমাদের দেশে কখনোই সংশয়মুক্ত গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তাই যারা ইসলামী সাহিত্য রচনা করবেন, তাদেরকে আগে ইসলাম সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে হবে।

ইসলামী সাহিত্য ও একবিংশ শতাব্দী : 

একবিংশ শতাব্দীর এই সূচনা লগ্নে বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যায় ইসলামী সাহিত্য নিয়ে হাতে গোনা কয়েকটা ইসলামী দেশ বাদে অন্যান্য দেশের ইসলামী জ্ঞানী ও মেধা সম্পন্ন ব্যক্তিরা তেমন এগিয়ে আসেনি।

উপসংহার : 

ইসলামী সাহিত্য পাঠকের সম্মুখে ইসলামের ভিতর বাইরের সবকিছুই উন্মোচিত করে। ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়নে একজন মুসলমান নিজেকে সত্যিকারভাবে চিনতে পারে। তাই প্রত্যেক ভাষায়ই ইসলামী সাহিত্য সৃষ্টি করা অতীব প্রয়োজন। ইসলামী সাহিত্য ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হতে শেখায়, ইসলাম সম্পর্কে ভাবতে শেখায়, পালন করতে শেখায় ৷

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad